মানসম্পন্ন খাবারের সন্ধান দিচ্ছে ফুড ব্লগার্স বিডি
প্রকাশিত : ০৯:৩৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০৮:২০ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার
বাইরে আছেন অথবা আজ আপনার জন্য একটি বিশেষ দিন। পকেটে পর্যাপ্ত টাকাও আছে। কিন্তু খাবেন কোথায়? অথবা কোনো একটি বিশেষ খাবার কোথায় সব থেকে বেশি মজাদার, তার সন্ধান চান। খাবার নিয়ে এ রকম আরও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে এবং জানাতে ফুড ব্লগার্স বিডির সাহয্য নিতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলাদেশি গ্রুপ ফুড ব্লগার্স বিডি। খাবার নিয়েই তাদের কারবার। ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে গ্রুপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এ গ্রুপের অ্যাডমিন মো. আরমান শাহরিয়ার সৌম এবং ডা. শেখ জাকিয়া সুলতানা। তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সহ-সম্পাদক শাওন সোলায়মান।
ইটিভি অনলাইন : ফুড ব্লগার্স বিডি-এর শুরুটা কীভাবে হয়েছে?
সৌম : আমরা গ্রুপটা ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট শুরু করি। অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির আবেদন করার সময় গ্রুপটি খুলেছিলাম। আমার গবেষণার বিষয় ছিল ‘সামাজিক ব্যবসা’। তখন আমি এমন একটি ব্যবসা খোঁজা শুরু করি, যার সঙ্গে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তরাও জড়িত রয়েছেন। তখনই মাথায় আসে ফুড বা খাবার ব্যবসার কথা। গবেষণার কাজেই মূলত গ্রুপটা খোলা হয়েছিল। তখন আমি একাই ছিলাম এর অ্যাডমিন। এখন আমার সহধর্মিণী সুলতানাও এর অ্যাডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
ইটিভি অনলাইন : শুরুতে গ্রুপের কার্যক্রম কেমন ছিল?
সৌম্য : এখন যেভাবে গ্রুপে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের রকমারি খাবারের রিভিউ বা পর্যালোচনা দেয়া হয়- শুরুতে এমনটা ছিল না। শুরুতে গ্রুপে শুধুমাত্র বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের রিভিউ দেয়া হতো। একটা রেস্টুরেন্ট কেমন, তার ভেতরের সাজসজ্জা কেমন শুধুমাত্র এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হতো। কোনো একটা রেস্টুরেন্টের ইন্টেরিয়র ডিজাইন ভাল হলে আমরা সেগুলো নিয়েও লিখতাম। কখনো কখনো সেই ডিজাইনারকে নিয়েও লেখালেখি করা হতো। এক কথায় বললে, খাবার নিয়ে পর্যালোচনা করার বিষয় তখন আমাদের পরিকল্পনায় ছিল না। তখন ছিল শুধু রেস্টুরেন্ট রিভিউ-এর বিষয়।
ইটিভি অনলাইন : বর্তমান সময়ে গ্রুপে সদস্যরা কী ধরনের পোস্ট শেয়ার করেন?
সৌম : এখানে ‘জানতে চাওয়া’ এবং ‘জানানো’ দুই ধরনের কাজই হয়। মনে করেন, কেউ একজন বান্দরবান বেড়াতে গেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে ইকোনমিকভাবে ভালো খাবার খেতে পারবেন তা বুঝতে পারছেন না। তবে তিনি যদি আমাদের গ্রুপে একটি পোস্ট দেন তাহলে খুব অল্প সময়েই একাধিক পরামর্শ পেয়ে যাবেন। আবার ধরেন, এক ব্যক্তি কোনো একটি রেস্টুরেন্টে কিছু খাবার খেলেন। ওই খাবার সম্পর্কে ভালো কিংবা মন্দ, তার রুচি এবং পছন্দ অনুযায়ী পোস্ট দিতে পারেন। গ্রুপের সদস্যরা কোনো একটি রেস্টুরেন্টের খাবারের মান, পরিবেশ, কর্মীদের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে নম্বর দেন। এতে করে কোনো ভাল খাবারের ব্যাপারে অন্য সদস্যদের মধ্যে আগ্রহ জাগতে পারে। আবার খাবার খুব খারাপ হলে আগে থেকেই কেউ একজন সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কষ্টের টাকা দিয়ে এমন খাবার নিশ্চয়ই কেউ খেতে চাইবে না
সুলতানা : এখানে আরও একটি বিষয় আছে। ধরেন কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নেয়া হল। অশোভন আচরণ কিংবা অন্য কোনো সমস্যার অভিজ্ঞতা হলেও আমাদের গ্রুপে ওই পোস্ট শেয়ার করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তখন রেস্টুরেন্ট মালিকেরা সমাধান দিয়ে থাকেন। আমাদের গ্রুপে যে শুধু ‘খাদক’রা থাকেন তাই নয়; বরং অনেক রেস্টুরেন্টের মালিকেরাও আছেন। তারা সব সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। আর সমাধান না হলেও অন্য সদস্যরা সচেতন হোন এসব পোস্টের কারণে।
ইটিভি অনলাইন : যদি সদস্যদের কেউ কোনো রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাহলে গ্রুপ থেকে কী কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়?
সৌম : সত্যিকার পক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করি। ‘ভ্যাট গোয়েন্দা’র সঙ্গে আমরা কাজ করি। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা তখন দৃষ্টি আকর্ষণ করি। তারা তখন তাদের প্রক্রিয়ায় অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করেন।
ভ্যাট গোয়েন্দাদের দেখাদেখি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও এখন কাজ করছে। তাদের কাছে কোনো অভিযোগ দেয়া হলে তারা তা যাচাই-বাছাই করে এর সত্যতা পেলে ওই প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করে। সব থেকে মজার বিষয়, যিনি অভিযোগ করবেন তিনি জরিমানাকৃত অর্থের ২৫ ভাগ পাবেন। এমন অর্থ প্রাপ্তির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অভিযোগ জানানোর প্রবণতাও বেড়ে গেছে। যার ফলে রেস্টুরেন্ট মালিকরা এখন সচেতন হয়ে উঠেছেন।
ইটিভি অনলাইন : ঢাকা শহরের খাবার ব্যবসার উন্নতিতে পর্দার আড়ালে কাজ করে যাচ্ছে আপনাদের গ্রুপটি। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
সৌম : বিষয়টা নিয়ে আমরাও বেশ পুলকিত। আমাদের গ্রুপের কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা শহরে রেস্টুরেন্টের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রুপে বিভিন্ন খাবারের পর্যালোচনা সমৃদ্ধ পোস্ট দেখে একটা বড় অংশের মধ্যে খাবার নিয়ে আগ্রহ জন্মায়। আগে মানুষ ঘরের বাইরে খুব একটা খেতে যেত না। গেলেও সর্বোচ্চ কোনো একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যেত। কিন্তু এখন মানুষ ফাস্টফুড থেকে শুরু করে কার্টেও (এক ধরনের ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান) খেতে যায়।
বিপুল সংখ্যক এই গ্রাহকের চাহিদা পূরণেই মূলত ঢাকা শহরে ফুড ইন্ডাস্ট্রি একটা নতুন মাত্রা পায়। তরুণ এবং নবীন অনেক উদ্যোক্তাও অল্প পুঁজি নিয়ে ফুড ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি এবং বেকারত্ব দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ ইন্ডাস্ট্রি।
শুধু তাই নয়, আমাদের গ্রুপে বিভিন্ন সদস্যদের রিভিউয়ের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও এর আশেপাশের বিভিন্ন খাবার যেমন হাকিম চত্বরের খিচুড়ি, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার খাবারগুলোও খুব বিখ্যাত হয়। আগে শুধু এসব জায়গা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই জানতেন। এখন দূর-দূরান্ত থেকে খুঁজে খুঁজে এসব জায়গায় খাবার খেতে আসেন গ্রাহকেরা।
সুলতানা : একটা বিষয় যোগ করতে চাই। ফুড ব্লগার্স বিডি’র কার্যক্রমের কারনে খিঁলগাওয়ের তালতলা অথবা রাইফেল স্কয়ার এখন রাজধানীবাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ফুড জোন। এছাড়া শ্যামলী স্কয়ারকে আগে মানুষ একটি সিনেমা হল নামেই জানত। এখন সেটাও একটি বড় ফুড জোন হয়ে উঠেছে। আর পূর্বাচলের ৩০০ ফিটের কথা তো আমরা সবাই জানি। ফুড ব্লগার্স বিডি দেশের ফুড ট্রেডে যে নতুন মাত্রা এনেছে, তা হল কম টাকায় ভালো, মজাদার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার।
ইটিভি অনলাইন : রেস্টুরেন্টগুলো আগে সরকারকে সেভাবে ভ্যাট দিত না। এখন ভ্যাট দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর পিছনেও আপনাদের ভূমিকার কথা জানা যায়।
সৌম : ফুড ব্লগার্স বিডি গ্রুপের সব থেকে বড় সাফল্য মনে হয় এই বিষয়টি। বিভিন্ন মানুষের রিভিউ দেখতে দেখতে আমরা খেয়াল করলাম, গ্রাহকদের কাছ থেকে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ভ্যাট বাবদ কিছু টাকা নিয়ে থাকে। কিন্তু এর জন্য যথাযথ চালান অর্থাৎ মূসক-১১/ক নামক যে সরকারি চালান গ্রাহককে দেওয়ার কথা তা তারা দেয় না। এর কারণ হচ্ছে গ্রাহককে সে চালানটি না দিতে পারলেই ভ্যাটের পুরো টাকা রেস্টুরেন্ট মালিকের পকেটে যাবে।
এরপর থেকেই আমরা গ্রুপ সদস্যদের এ বিষয়ে সতর্ক করা শুরু করলাম। সেই সঙ্গে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি করতে কাজ করলাম। এর জন্য আমাদেরকে সব রকমের সাহায্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মহাপরিচালক বেলাল হোসেন চৌধুরী স্যার। তাদের সঙ্গে মিলে আমরা মোবাইলভিত্তিক একটি অ্যাপস চালু করলাম ‘ভ্যাট চেকার’। এ অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজেই জেনে নেয়া যাবে, আপনি যে রেস্টুরেন্টে ভ্যাট দিচ্ছেন, তা সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে কী না। প্রত্যেকটি রেস্টুরেন্টের একটি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার আছে। সে নাম্বারটি ওই অ্যাপসে লিখলে বলে দিবে যে, রেস্টুরেন্টটি আপনার ভ্যাটের টাকা সরকারকে পরিশোধ করে কী না। অ্যাপসটি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যেই নামিয়ে নেয়া যাবে।
আমাদের এ উদ্যোগের সঙ্গে ‘ভ্যাট ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘ভ্যাট গোয়েন্দা’ও যুক্ত হয়। এরপর থেকে রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে সরকারকে ভ্যাট দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে বিগত ২ বছরে ভ্যাট বাবদ একটি বড় অংশ সরকারি কোষাগারে জমা পরে।
ইটিভি অনলাইন : অনেকেরই অভিযোগ খাবার সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে শুধু বড় বড় রেস্টুরেন্টের ইতিবাচক রিভিউ দেয়া হয়। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে গ্রুপগুলো অনেকটাই উদাসীন। ফুড ব্লগার্স বিডি-এর এ বিষয়ে অবস্থান কী?
সৌম : এটা সত্যি যে অনেক গ্রুপের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ আছে। তবে আমরা খুবই দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের গ্রুপে এমন হয় না। ভালো এবং সত্যকেই শুধুমাত্র আমরা তুলে ধরি। শুধু বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক কথা তুলে ধরি আর ছোটদের কথা তুলে ধরি না- এমনটা আমাদের গ্রুপে হয় না। সত্যি কথা বলতে, আমাদের কাছে কেউ ছোট আর বড় নাই।
ইটিভি অনলাইন : আচ্ছা ‘পেইড রিভিউ’ কী?
সৌম : পেইড রিভিউ নিয়ে আমাদেরকে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। পেইড রিভিউ হচ্ছে সেসব রিভিউ যা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের পক্ষে কোনো আইডি বা ফেক আইডি থেকে ইতিবাচকভাবে দেয়া হয়। রেস্টুরেন্টিকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করতে এমন রিভিউ দেয়া হয়। অনেক সময় তাদের রেস্টুরেন্টে যাওয়া কোনো গ্রাহককে বিভিন্ন অফারের লোভ দিয়েও এসব রিভিউ দেয়া হয়। তবে আমরা যখনই এমন রিভিউ গ্রুপে দেখি তখন তা মুছে দেই। মিথ্যে বা সাজানো কোনো রিভিউ আমরা গ্রুপে রাখি না।
ইটিভি অনলাইন : ৯ লাখের বেশি সদস্য আপনাদের গ্রুপে। বড় হওয়ার পাশাপাশি আপনাদের ওপর দায়িত্বও অনেক। সাধারণ সদস্যদের অনেক আস্থা আপনাদের ওপর। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন আপনারা?
সৌম্য : সত্যি কথা বলতে, ৯ লক্ষাধিক সদস্য নিয়ে আমরা ফেসবুকের বাংলাদেশী যে কোনো বিশেষায়িত গ্রুপের মধ্যে সব থেকে বড়। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব তা পালনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি। কোনো ধরনের আর্থিক প্রলোভন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কিছু করতে চাই না। ২০১৪ সালে শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো রকম বিতর্ক ছাড়াই আমরা এগিয়ে চলছি। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
ইটিভি অনলাইন : অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগও আছে ফুড গ্রুপগুলোর মধ্যে। এ অভিযোগ কতটুকু সত্য?
সৌম : কিছু গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে এ কথা সত্য। আমাদের গ্রুপের বিরুদ্ধেও কয়েকটি অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। আর আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি কেউ পারবেও না। আমাদের গ্রুপের মাধ্যমে আমরা সীমিত পরিসরে কিছু অর্থ আদায় করি। তাও নিয়মের মধ্যে থেকে।
সুলতানা : আমাদের গ্রুপের কভার ফটোতে বিজ্ঞাপনের জন্য আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে একটা টাকা নেই। আর গ্রুপে কোনো রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারিরা কিছু পোস্ট দিতে পারেন। এর জন্য তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দুই পক্ষই সম্মত হয়ে এ টাকা গ্রহণ করা হয়। মূলত এটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়। অনৈতিক কিছু নয়।
ইটিভি অনলাইন : গ্রুপের কিছু সামাজিক কার্যক্রমের কথা বলুন।
সৌম : আমাদের গ্রুপ থেকে নিয়মিত সামাজিক কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরমধ্যে একটি হচ্ছে পবিত্র রমজান মাসে পথশিশুদের অন্তত ২বার ইফতার করানো। এর বাইরে রয়েছে শীতার্তদের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ, ছিন্নমূল ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন পোশাক বিতরণ, ঈদের দিন ওদেরকে নিয়ে ‘সেমাই উতসব’ অন্যতম।
কিছুদিন আগেই আমার সহধর্মিনী এবং গ্রুপের আরেক অ্যাডমিন ডা. শেখ জাকিয়া সুলতানা রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী শিবিরে একটি বিনামূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন করে।
সুলতানা : আমাদের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ শুরু হবে শিগগিরই। রাজধানীর খিলগাঁও-এর তালতলায় একটি রেস্টুরেন্টে আছে। এখানে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের একবেলা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে এ খাবার তাদেরকে দেয়া হবে শিক্ষার বিনিময়ে। আমরা এর নাম দিয়েছি ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’। এজন্য ওই রেস্টুরেন্টের পক্ষ থেকেই খাবার এবং স্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
ইটিভি অনলাইন : এতদিনের কার্যক্রমে আপনারা কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
সৌম : আমরা সবসময়ই চেষ্টা করেছি দেশবাসীকে খাবারের সঠিক তথ্য প্রদান করতে। কোনো ধরনের লোভ-লালসা কিংবা অনৈতিক চর্চা এখানে হয়নি। তবুও কেন যেন আমাদেরকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। মাসখানেক আগে আমাদের গ্রুপ হ্যাক করে একদল সাইবার অপরাধী। আমাকে এবং আমার সহধর্মিণীকেও ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করা হয়। পরবর্তীতে ডিএমপি-এর সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ভাই এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় গ্রুপটি ফিরে পাই। তবে কোনো কিছুতেই আমরা দমে যাওয়ার পাত্র নই। নিজেদের সবটুকু দিয়ে সবার সার্থে গ্রুপটিকে টিকিয়ে রাখব।
ইটিভি অনলাইন : আপনাদের ভবিষ্যত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী?
সৌম : আমরা শুধু একটা গ্রুপ হয়েই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। বরং বাংলাদেশে ফুড বিজনেসের এজেন্সী হতে চাই। আজ সুদূর আমেরিকার কেএফসি যদি বাংলাদেশে আসতে পারে, তাহলে আমরা বিশ্বাস করি আমাদের দেশীয় কোনো খাবারের ব্র্যান্ডও বিদেশে যেতে পারে। এরই মধ্যে ‘টেক আউট’ নামের আমাদের স্বদেশি প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়াতে তাদের ফ্রাঞ্চাইজি চালু করেছে।
আমরা চেষ্টা করছি, ঢাকায় ‘সাউথ এশিয়ান ফুড ফেস্টিভ্যাল’ নামের একটি ইভেন্ট করার। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মজাদার এবং ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। নিউ ইয়র্ক এবং লন্ডনের বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলো ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। আমাদের বিশ্বাস, দেশের খাবার ইন্ডাস্ট্রিকে বাইরে প্রসারিত করতে পারলে এ ব্যবসার আরো উন্নতি হবে।
ইটিভি অনলাইন : নিজেদেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? নিজেদেরকে সফল মনে করেন?
সৌম : আমরা সফল কী ব্যর্থ তা গ্রুপের সদস্যরাই ভাল বলতে পারবে। আমরা সফল হলে আসলে গ্রুপের সকল সদস্যই সফল। তাদেরকে বাদ দিয়ে তো আর আমরা কিছু নই। তবুও এটুকু বলব যে, আমাদের সামনে পিছনে, আমাদের পরিচয় জেনে বা না জেনে, যখন কেউ আমাদের গ্রুপের প্রশংসা করে তখন সত্যিই অনেক ভাল লাগে। যখন কেউ বলে যে, ‘কোথায় খাব জানতে হলে ফুড ব্লগার্স বিডি’তে পোস্ট কর, তখন কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিজেদের সফল মনে হয়।
//ডিডি//এসএইচএস//