ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

এ বি এম আবুল কাসেম একজন ত্যাগী ও পরিশ্রমী জননেতা

প্রকাশিত : ১০:৩৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ শুক্রবার

আজ (২৪ নভেম্বর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ) সীতাকুণ্ডের দু’বারের সাবেক এমপি ও প্যানেল-স্পীকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এ বি এম আবুল কাসেম মাস্টার এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিক। ২০১৫ সালের এদিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত এ নেতার মৃত্যুদিবসে এ বি এম আবুল কাসেম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্মরণসভাসহ নানান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ত্যাগী এ নেতার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক-জীবনাবলম্বনে আমার-ই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘কাসেম মাস্টার’ শিরোনাম শীর্ষক এ বি এম আবুল কাসেম স্মারকগ্রন্থ।


কাসেম মাস্টার ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ-সলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল জলিল, মা আমেনা খাতুন। তিনি পড়াশোনা করেন কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি সরকারি সিটি কলেজে। কাট্টলী হাই স্কুলে তিনি শিক্ষকতাও করেন। এ কারণেই তিনি কাসেম মাস্টার হিসেবে পরিচিত। তাই তাঁর জীবনাবলম্বনে রচিত স্মারকগ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে ‘কাসেম মাস্টার’।


কাসেম মাস্টার সত্যিকার অর্থে তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা একজন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি এমপি নির্বাচিত হননি। শেখড় থেকে তিনি শিখরে ওঠেছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টানা ১৫বছর তিনি সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। দু’বার তিনি চট্টগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সীতাকুণ্ড সংসদীয় এলাকা থেকে দু’বার এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ-সদস্য থাকাকালীন তিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি সংসদীয় দলের সদস্য হিসেবে চীন সফর করেন। দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর কাসেম মাস্টার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে তিনি বাংলাদেশ-কোরিয়া পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।


কাসেম মাস্টার আওয়ামী লীগের একজন পোঁড়খাওয়া ত্যাগী নেতা ছিলেন। টানা একযুগের বেশিসময় তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও তিনি আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘসময়ে তিনি সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নেতা ছিলেন। বলা যায়, এমপি থাকাকালীন সীতাকুণ্ডের আওয়ামী-রাজনীতি ছিল তাঁরই একক নিয়ন্ত্রণে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সাথেও তাঁর সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়। তাঁর স্মরণ শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে তাঁর সরাসরি সম্পর্ক ছিল। তাদের নামধাম ছিল তাঁর নখদর্পণে। সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর থেকে সলিমপুর পর্যন্ত বিয়েশাদি থেকে শুরু করে সামাজিক যেকোনো ছোটখাটো অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি সকলের নজর কাড়তো।


কাসেম মাস্টার একজন সমাজ হিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। লতিফপুর আলহাজ্জ আবদুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়, দক্ষিণ সলিমপুর আমেনা বিদ্যানিকেতন, সলিমপুর আবাসিক এলাকা বিদ্যাপীঠ, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ধর্মপুর আবুল কাসেম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি সীতাকুল্ড ডিগ্রি কলেজ, সীতাকুণ্ড বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়, বিজয় স্মরণী কলেজ, মোস্তফা হাকিম কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রিীয় কারাগারের পরিদর্শক ছাড়াও এলাকার বহু সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন।


সীতাকুণ্ড এলাকার সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এ জনপ্রিয় রাজনীতিক ব্যক্তিত্বের একক প্রচেষ্ঠায় সীতাকুণ্ড সদর ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। সীতাকুণ্ডের উত্তর-বগাচতর থেকে ছোটকুমিরা পর্যন্ত গ্রামের ভেতর দিয়ে হাবিব আহমেদ চৌধুরী নামক যে সড়ক (হাবিবরোড) রয়েছে সেটিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় এনে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করেন। ১৯৯৬ সালে ২১বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এমপি আবুল কাসেম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সীতাকুণ্ডে এনে যুগান্তকারী নানান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন। হাবিব রোড ছাড়াও উত্তর বগাচতর এলাকায় বিদ্যুতায়ন, সীতাকুণ্ডসদরে টিএন্ডটির পিসিও (পাবলিক কল অফিস) ভবনে ৫০০লাইনের ডিজিটাল টেলিফোন একচেঞ্জ স্থাপন, যানজট নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড বাজার (উপজেলা সদর) ও কুমিরা বাজার এলাকায় বাইপাস-রোড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক স্থাপন, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথধামকে মহাতীর্থ করার প্রচেষ্টা চালানো, সীতাকুণ্ডে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করাসহ গ্রামীণ অবকাঠামো ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে নজিরবিহীন অবদান রাখেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ১কন্যা সন্তান রেখে যান। বর্তমানে তাঁর বড়ছেলে এস এম আল মামুন সীতাকুণ্ড উপজেলার চেয়ারম্যান।

 

লেখক : প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী