অর্থনৈতিক পরনির্ভরতা নারীদের প্রধান সমস্যা : মিতি সানজানা
প্রকাশিত : ০৮:১৯ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০১:৪৮ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার
ব্যারিস্টার মিতি সানজানা। আইন শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কর্পোরেট আইনজীবী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিলেন। নিজেকে শুধু কোর্ট ও চেম্বারে বন্দী রেখে স্বস্তি পাননি তিনি। উপলব্ধি করলেন, সমাজের মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা আছে। সেই তাগাদা থেকে বিভিন্ন ইংরেজি দৈনিকে নিয়মিত লিখতে শুরু করেন। প্রতিটি টিভি চ্যানেলেও টক শো করেন। শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলে বেশ আলোচিত হয়েছেন। একুশে টিভি অনলাইন পাঠকদের জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টিভি অনলাইন : কর্পোরেট আইনজীবী হিসেবে আপনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। কিন্তু এখন পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। কেন?
মিতি সানজানা : কর্পোরেট সেক্টর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, অপ্রয়োজনে মেধা ব্যয় করছি। একজন নারী হিসেবে আমি উপলব্ধি করলাম, আমাদের দেশে নারীবান্ধব তেমন আইন নেই। বেশির ভাগ আইন পুরুষের পক্ষে, যা আমার ভিতরে তাড়া দেয়।
একুশে টিভি অনলাইন : এই যে বললেন, বেশির ভাগ আইন পুরুষের পক্ষে, এর ব্যাখ্যা দেবেন কী?
মিতি সানজানা : যেমন ধরুন, ডিভোর্সের মামলা। একটা মেয়ের ডিভোর্স হওয়ার সময় তেমন কিছু পায় না। শুধু তিন মাসের ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ পায়, যা খুবই সামান্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা মেয়ের ডিভোর্সের পর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না। মধ্যবিত্তের প্রেক্ষাপটে কোনো বাবা-মা চান না তার মেয়ে বিয়ের পর ফিরে আসুক। দেখা যায়, তখনো তাকে একজন পুরুষের (ভাই) উপর নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ, আইন তাকে পুরুষের মুখাপেক্ষী করে রাখছে। হিন্দু ধর্মে ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ। সেখানে সম্পত্তিতে নারীদের কোনো অধিকার নেই। স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নারীর কোনো ভূমিকা নেই। ডিভোর্স চাওয়া বা ডিভোর্স দেওয়া- দুটো ক্ষেত্রেই নারীরা অসহায়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : নারীদের প্রধান সমস্যা কী কী বলে আপনি মনে করেন?
মিতি সানজানা: অর্থনৈতিক পরনির্ভরতা নারীদের প্রধান সমস্যা। এজন্য অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়া খুব দরকার। এখন আপনি দেখবেন মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন শতকরা ৬০ জনের বেশি নারী ডিভোর্স চাওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে, ডিভোর্স চাচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন ডিভোর্সকে সামাজিকভাবে খারাপ ভাবা হতো। তখন বিচ্ছেদ পরবর্তী ভবিষ্যত নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থাকতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো, নারীর ক্ষমতায়ন। কর্মক্ষেত্রে নারীরা আসছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) সেক্টরে অনেক নারী রয়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : নারীর এই ক্ষমতায়ন কী শুধু নগরকেন্দ্রিক নয়?
মিতি সানজানা : না, শুধু যে শহুরে নারীরা সাবলম্বী হচ্ছে তা নয়। গ্রামের নারীদের মধ্যেও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বাড়ছে। আমি শ্রম আইন নিয়ে প্রচুর কাজ করি। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার নারী শ্রমিককে ওয়ার্কশপ করিয়েছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে, নারী হিসেবে তাদের অধিকার নিয়ে অনেক শ্রমিকের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে হচ্ছে। সেখানে তাদের আমি জিজ্ঞেস করি, তাদের কাছে কী গ্রাম ভালো লাগে নাকি শহর? উত্তরে তারা জানায়, তাদের কাছে শহর ভালো লাগে। কেননা, শহরে কেউ কাউকে নিয়ে নাক গলায় না। কিন্তু গ্রামে অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নাক গলানো হয়। বিশেষ করে গ্রামে নারীদের বিভিন্ন কুসংস্কারের দোহাই দিয়ে তাদের বন্দী করে রাখার চেষ্টা থাকে। শহরের মেয়েরা সপ্তাহজুড়ে চাকরি করে, শুক্রবারে সিনেমা দেখে, পার্কে ঘুরতে যায়। কিন্তু যখনই তারা গ্রামে যায় তখনই অন্যেরা তাদের নিয়ে বাজে কথা বলতে শুরু করে। বলে, এরা শহরে গার্মেন্টসে চাকরি করে। অর্থাৎ এরা ভালো নয়। কিন্তু শহরে এসব প্রতিবন্ধকতা নেই। এখানে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চাকরি করছে। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে। আমাদের শ্রমজীবী নারীদের সবাই, বিশেষ করে আরএমজি সেক্টরের অধিকাংশ নারীই গ্রামের।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আপনার জায়গা থেকে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ বলতে কী বুঝেন?
মিতি সানজানা : ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ মানে শুধু এই নয় যে আমি একজন ব্যারিস্টার, আবার কেউ বড় ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা অধিক আয় করেন; তা না কিন্তু। বরং ব্যাপারটা বিবেচনা করতে হবে পরিবার থেকে। পারিবারিক সিদ্ধান্তে তার ভূমিকা কেমন সেটা আসবে। আপনি বাইরে বড় আওয়াজ দিলেন কিন্তু ঘরে কথা বলতে পারলেন না, তাহলে তো হলো না। এক্ষেত্রে নারী পেশাগত জীবনে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার যাই হোক না কেন তাকে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। কিন্তু ধরুন, গ্রামে স্বামী-স্ত্রী সম্মিলিত সিদ্ধান্তে কোনো কাজ করল, সেখানে নারীর ক্ষমতায়ন কাজ করছে। অথবা একজন ক্ষুদ্র নারী উদ্যেক্তা নিজ শ্রমে কোনো কুটির শিল্পের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে তার আয়ের পথ বের করল বা নিজে স্বাধীন-স্বনির্ভর হলো, সেটাও কিন্তু ‘নারীর ক্ষমতায়ন’। আবার ধরুন, গ্রামের কোনো নারী শহরে থেকে চাকরি করে; কিন্তু প্রতি মাসে মা বা বাচ্চার জন্য খরচ পাঠায়- সেটাও নারীর ক্ষমতায়ন। অর্থাৎ, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য খুব হাই প্রোফাইলের কেউ হওয়া মুখ্য বিষয় নয়। নারীর ক্ষমতায়নের চর্চাটা পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ধরে নেওয়া হয়, পরিবারের সকল সিদ্ধান্ত পুরুষ নিবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কাটা সেখান থেকেই আসে। এর বিরুদ্ধে নারীদের সচেতন হতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এই যে বাধা, তা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
মিতি সানজানা : প্রথমত মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। পারিবারিকভাবে এর বিরুদ্ধে চর্চা করতে হবে। পরিবারে মা সন্তানদের শিক্ষা দেয়। পরিবারেই শিখাতে হবে, নারী-পুরুষের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। যেমন আমার পরিবার। আমরা দুই ভাই-বোন। একইভাবে বড় হয়েছি। আমি যেমন বিদেশে পড়াশোনা করেছি, তেমনি আমার ভাইও বিদেশে পড়েছে। আমার বাবা-মা ভাবতেও পারেন না, আমি মেয়ে বলে সম্পত্তির অর্ধেক পাবো আর ভাই ছেলে বলে আমার দ্বিগুণ পাবে। অনেক সংসারে দেখা যায়, মা ছেলের পাতে মাছের বড় অংশ বা মুরগীর রানটা তুলে দেয়। এটাও ঠিক নয়। আইন আছে, সমাজ আছে, রাষ্ট্র আছে। কিন্তু আইনের পরিবর্তন ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না আমাদের মূল্যবোধের পরিবর্তন হবে।
আরেকটা কাজ করা জরুরি। সেটা হল পাঠ্যসূচির বাইরে আসতে হবে। যেমন আমি নিজেও প্রচুর ক্যাম্পেইন করি। দেশের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ULAB. আমরা প্রতি সেমিস্টারে এক হাজার শিক্ষার্থীকে এসব বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করি। আমি স্বেচ্ছায় তাদের কাজে সহযোগিতা করি। এ ক্ষেত্রে আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা বা ফি নেই না। এ দেশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যদি এভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে আমরা খুব ভালো একটা ফল পাবো। আমাদেরকে পাঠ্যসূচি বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। মাসে একদিন একটা কর্মশালা হতে পারে। সে কর্মশালা ইভটিজিংয়ের উপর হতে পারে, পারিবারিক মূল্যবোধের উপর হতে পারে, অথবা নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে হতে পারে। কোনো কোনো আচরণ যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। কেন এ ধরনের হয়রানি করা উচিত নয়, সেসব বিষয় নিয়ে কর্মশালা হতে পারে। ২০০৮ সালে যৌন হয়রানি বিষয়ক একটি নির্দেশনা এসেছে হাইকোর্ট থেকে। যে নির্দেশনায় হাইকোর্ট বারবার উল্লেখ করছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যখন অভিষেক অনুষ্ঠান করবে, তখন থেকেই কিন্তু এসব বিষয়ে বিভিন্ন কর্মশালা করতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে তাদেরকে সচেতন করতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আজকের প্রযুক্তিবান্ধব পৃথিবীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব বাড়ছে। এজন্য অনেকে প্রযুক্তিকে দায়ী করেন। আপনি কী মনে করেন?
মিতি সানজানা : দেখুন, আমরা শুধু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নয়, বরং শিল্প-সংস্কৃতির সব ক্ষেত্রে একটা অস্থির সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জীবন-যাপন একটা ঝুঁকির মধ্যে আছে। লক্ষ্য করলে আপনি দেখেতে পাবেন বর্তমানে ক্লাস সিক্স-সেভেনের মেয়েরা বিভিন্ন পার্ক-রেস্টুরেন্টে প্রকাশ্যে প্রেম করছে। এটা তাদের কাছে অপরাধ নয়। তাদের যুক্তি অনুযায়ী তারা পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অনুসরণ করছে। কিন্তু তাদের এটা বুঝানো উচিত, আমাদের সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতি যায় না। পশ্চিমা দেশগুলোতে মেয়েরা ষোল বছর ও ছেলেরা আঠার বছর হলে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। বিয়ে না করে তারা লিভ টুগেদার করে। কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গর্ভধারণ করলে সেটার জন্য তার পরিবারকে লজ্জায় পড়তে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশের সংস্কৃতি তেমন নয়। কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করলে তার জন্য তাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে দায়ী করা হয়। একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন, বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের আগে কোনো মেয়ে বিয়েতে সম্মতি দিলে তা সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে না। আঠার বছরের আগে আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করা হয় না। অর্থাৎ আঠার বছরের আগে সঙ্গী নির্ধারণে যেমন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারেও ঝুঁকি থাকে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অপব্যবহার হয়। প্রথমত, গুগল ও ইউটিউবে অসংখ্য পর্নো সাইট থাকে, যা অনেক শিশু-কিশোরের বয়সের সঙ্গে যায় না। এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে সে ভুল পথে হাঁটে। দ্বিতীয়ত, এটা এক ধরনের আসক্তি। কিছুদিন আগে ড. জাফর ইকবাল একটা লেখা লিখেছেন। তিনি সেখানে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, ইন্টারনেটে আসক্তি তরুণ-তরুণীদের বই বিমুখ করছে। এর ফলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। আমি মিতি সানজানা বলছি, আঠার বছরের আগে যেমন রক্ত দেওয়া যায় না, বিয়ে করা যায় না, ভোটাধিকার হয় না- ঠিক তেমনি আঠার বছরের আগে সন্তানদের হাতে ইন্টারনেট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে। আর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের সিস্টেমেই একটা বিষয় রেখেছে, তা হলো আঠার বছরের আগে কেউ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে অসংখ্য শিশু-কিশোর ভুল তথ্য দিয়ে ফেসবুক ওপেন করছে। এর পরিণীতি আমাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি ইন্টারনেট জগতে পর্নোর ব্যাপক অাগ্রাসনের কথা বলছিলেন। এ ব্যাপারে তো আইন আছে।
মিতি সানজানা : হ্যাঁ, আইন আছে। যদিও এর সঠিক প্রয়োগ নেই। নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২’ প্রণীত হয়। এই আইনের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি বহন, বিনিময়, মুঠোফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা, বিক্রি প্রভৃতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে প্রলোভন দেখিয়ে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে স্থিরচিত্র বা ভিডিও ধারণ করলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা যাবে। এই আইনে আরো বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে কারো সম্মানহানী করে বা কাউকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চালায় তবে বিচারক ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারবেন। শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণকারীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অধিকন্তু ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : সাধারণত কর্মজীবী বাবা-মা সন্তানদের হাতে দামি ডিজিটাল পণ্য সামগ্রি (গেজেট) দেয়। আপনার দৃষ্টিতে এটা কী উচিত, নাকি উচিত নয়?
মিতি সানজানা : ভার্চুয়াল জগতের প্রভাবে মানুষ পারিবারিক জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আজকে আমরা অনেক ঝুঁকির ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। যেমন সবাই ব্লু হোয়েল গেমসের কথা বলছি, বা আজকে জঙ্গিবাদের যে প্রভাব তার সব দায়ভার অভিভাবকের উপর চাপানো হচ্ছে। এখানে আমার একটা অভিযোগ আছে, সেটা হলো, সব দায়ভার আমরা বাবা-মায়ের উপর চাপাচ্ছি কেন? আমরা শিশুদের খেলার মাঠ দিতে পারছি না। আগে বই পড়ার একটা পরিবেশ ছিল আমরা সেখান থেকেও দূরে সরে আসছি। পারিবারিক জীবন, সামিাজিক জীবন সব কিছু থেকেই আমাদের সন্তানরা বঞ্চিত। ফলে বাইরের অপসংস্কৃতি বা অপরাধ জগৎ খুব সহজেই আমাদের সন্তানদের গ্রাস করছে। আজকে সারা দেশে জঙ্গিবাদ আতঙ্কের ইস্যু। কয়েকটা কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, সাধারণত ভার্চুয়াল জগতের প্রভাবে স্বাভাবিক পারিবারিক জীবন থেকে বঞ্চিত সন্তানরাই এসব অপরাধে ঝুঁকে।
না বললেই নয়, ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ (CRC), ১৯৮৯-এ স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন প্রথম রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। যেসব রাষ্ট্র এই সনদে স্বাক্ষর করেছে তারা শিশুদের সর্বোচ্চ স্বার্থের আলোকে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন করতে দায়বদ্ধ। এই সনদ অনুযায়ী খেলাধুলা ও বিনোদন প্রত্যেক শিশুর মৌলিক অধিকার। একজন শিশুর বেড়ে ওঠা এবং তার মধ্যে মানবিক গুণাবলি পরিপূর্ণভাবে বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ কোনটাই আমাদের সন্তানরা পাচ্ছে না। এজন্য সমাজের দুর্বৃত্তায়ন দায়ী।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কী?
মিতি সানজানা : শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিকল্প নেই। সন্তানের গতিবিধি খেয়াল রাখতে হবে। তার জীবন-যাপন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে হবে। বন্ধুর মতো পাশে থেকে পরামর্শ দিতে হবে। কাজটা এমনভাবে করতে হবে, যাতে তার ব্যক্তিত্বে আঘাত না আসে। সময়ের ব্যবধানে সব কিছু পাল্টায়। শাসনের পদ্ধতিও পাল্টেছে। আবারো বলছি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিকল্প নেই।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিয়ে, প্রেম বা জীবনসঙ্গী নির্ধারণের ক্ষেত্রে কী কী বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত?
মিতি সানজানা : আমি ব্যক্তিগতভাবে পারিবারিক সিদ্ধান্তে হুট করে বিয়ে করার চাইতে দীর্ঘদিনের জানা-শোনা বা পছন্দ করে বিয়ে করাকে সমর্থন করি। যাকে জানিনা, চিনিনা তাকে হুট করে বিয়ে করে সংসার করব- ব্যপারটা কেমন যেন। তবে হ্যাঁ, এই প্রেম বা বন্ধুত্বের ব্যাপরেও সতর্ক থাকা জরুরি। এখন ফেসবুকের যুগে অনেকে ভুল ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রতারিত হচ্ছে। ফলে এমন সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা উচিত। শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও নির্ভরতা ছাড়া কখনো প্রেম বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন : আপনার সঙ্গে সুন্দর একটি সন্ধ্যা কাটল। ইটিভি অনলাইনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মিতি সানজানা : হ্যাঁ। আনাকেও ধন্যবাদ। একুশে টিভি অনলাইনের সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের জন্য শুভকামনা। ব্যতিক্রমী সাংবাদিকতায় আপনাদের যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
/ডিডি/টিকে