‘তথ্য গোপনে ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি’
প্রকাশিত : ০৭:১১ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার
দেশের ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করে। এমনও প্রমাণ আছে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের বেশি। অথচ তারা খেলাপির হার দেখাচ্ছে মাত্র ১২ শতাংশ। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ না খুঁজে, উল্টো তথ্য গোপন করার কারণে ব্যাংকিং খাতে খেঁলাপি ঝুঁকি বাড়ছে। আর তা প্রতিরোধ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
রোববার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে শুরু হওয়া ‘বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন-২০১৭’ বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিআইবিএম আয়োজিত দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির। এসময় তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়-দায়িত্ব এবং মূলধন সংরক্ষণে বিভিন্ন ধরণের নীতিমালা করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, এই সম্মেলনে যেসব পেপার উপস্থাপন করা হবে তার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে। যা আমাদের নীতিমালা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
প্যানেল আলোচনায় ট্রাস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে থাকে। জিডিপিতে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশ দেখানো হয়ে থাকে। যদিও জিডিপিতে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ২০ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার উপযুক্ত কোনো কারণ স্পষ্ট নয়। কি কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে সেটি তুলে আনতে হবে।ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নাকি ব্যবস্থাপনা কমিটির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে সেটা দেখতে হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াসিন আলী বলেন, শরীয়াভিক্তিক ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে তাদের নিয়ম পালন করছে না। এই ব্যাংকগুলোর জন্য একটি আইন প্রনয়নের সময় হয়ে গেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকারদের চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই। চাকরির নিশ্চতা আনতে হবে।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি ব্যাংকিং খাতের উপর বিভিন্ন সেশনে আলোচনার বিষয়বস্তুও রিভিউ পাঠ করেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন ২০১৭ বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব।
এছাড়া সম্মেলনে কয়েকটি গবেষনা প্রবন্ধও উপস্থাপন করা হয়।প্রবন্ধে কর্পোরেট গভর্ণেন্স কিভাবে ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উচিত সঠিকভাবে অডিট কমিটি গঠন করা এবং অভিজ্ঞতাসম্পন সদস্যদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা, যা সুষ্ঠু ঝুঁকি ব্যাবস্থাপায় সহায়ক হবে।
ভারতের কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকের পারফরমেন্সের উপর ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপিটালের প্রভাব নিয়ে আরোচনা করা হয়। এ সংক্রান্ত এক প্রবন্ধে প্রাপ্ত গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, ব্যাংকের আয় ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ কমিয়ে দেয়।
এ সময় ইসলামী ব্যাংকিংয়ে বাস্তব প্রভাব বিস্তারকারী কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। তাতে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, কিভাবে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে বাধাগুলোকে সুবিধায় পরিণত করতে পারে।
# আরকে / এআর