৩৭ তম বিসিএস
‘ভাইভায় ওভার স্মার্টনেস শো করবেন না’
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০১:৫১ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার
কাউছার হামিদ ভূঁইয়া
৩৭তম বিসিএস এর ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ২৯ নভেম্বর থেকে। বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০০ নম্বরের এ অংশই অনেককে ক্যাডার হতে সাহায্য করতে পারে। লিখিত পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর নিয়েও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করে ক্যাডার হয়ে যেতে পারেন। মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ভালো প্রস্তুতি দরকার। লিখিত ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন কাজ। মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুবিধার্থে ইটিভি অনলাইনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত কাউছার হামিদ ভূঁইয়া। তার টিপস নিয়ে লিখেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন রিপোর্টার মাহমুদুল হাসান।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
ভাইভার জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র আপনার হাতের কাছে রাখতে হবে। যেনো মৌখিক পরীক্ষার দিন আপনাকে এ বিষয় চিন্তা করতে না হয়। সবচেয়ে ভালো হয় আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে করে রাখা।
নিজ সম্পর্কে জানা-
আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আপনার নামের সঙ্গে মিল আছে এমন বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
নিজ জেলা-উপজেলা
নিজ জেলা ও উপজেলার বিখ্যাত ব্যক্তির সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল ও মুক্তিযুদ্ধে আপনার জেলার অবদান সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও আপনার জেলা কি জন্য বিখ্যাত এ বিষয়ে স্পষ্টধারণা থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ-
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এক্ষেত্রে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠসহ আরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বই, উপন্যাস, কবিতা এবং যে সব বুদ্ধিজীবী, কবি ও সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে তাদের লেখনি দ্ধারা অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কেও জানতে হবে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস, নাটক, গল্পগ্রন্থ এবং উক্তি ভালোভাবে পড়তে হবে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ৭ মার্চের ভাষণ। তাই এ ভাষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।
ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-
ভাষা আন্দোলন সস্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য যেমন- ভাষা আন্দোলনে যে সব সংগঠন অবদান রেখেছে তাদের সম্পর্কে জানতে হবে। গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রাষ্ট্রভাষার দাবি, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র ঢাকা সফর এবং উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার ঘোষণা, লিয়াকত আলি খানের ঢাকা সফর, ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ, ১৯৫২ সালের ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহ, শহীদ মিনার নির্মাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট গঠন, ৬৯-এর গণঅভুত্থ্যান, ১৯৭০ এর নির্বাচন সম্পর্কেও জানতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকার-
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও বাংলার রাজনীতিতে যারা অসামন্য অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এছাড়াও বর্তমান ক্ষামতাসীন দলের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে কি কি অবদান রাখছেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তা জানতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ার যে প্রত্যয় সরকার নিয়েছেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। এছাড়াও বর্তমান সরকার যে সব আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সে সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়-
বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপরেখা সম্পর্কে জানতে হবে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও সম্প্রতি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সহজ পদ্ধতি Paypall এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি এবং রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চীন, রাশিয়া এবং আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে। আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও সঠিক ধারণা থাকতে হবে।
নিজের পছন্দক্রম সম্পর্কে-
আপনি বিসিএস পরীক্ষায় যে সব বিষয় পছন্দক্রমে দিয়েছেন সেগুলোর মধ্য থেকে প্রথম তিনটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। কেননা এ বিষয়ে প্রতিবছরই ভাইভাতে প্রশ্ন করা হয়। তাই আপনি যদি ভাইভাতে ভালো করতে চান তা হলে আপনার পছন্দক্রম সম্পর্কে জেনে নিন। আপনার পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন করলে ইমোশনাল এবং অহেতুক উত্তর দিবেন না। এক্ষেত্রে লজিক্যাল উত্তর দিতে হবে। তাই আপনাকে পূর্ব থেকেই আপনার পছন্দনীয় বিষয়গুলোর ওপর প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে-
আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগে লেখাপড়া করেছেন সে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। কেননা বিসিএস ভাইভা বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। তাই ভাইভাতে ভালো করতে হলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
দেশের বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক সম্পর্কে-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মুধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মীর মোশাররফ হোসেন, প্রমথ চৌধুরী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বেগম রোকেয়া, জীবনানন্দ দাশ, রাজা রামমোহন রায়, দীনবন্ধু মিত্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুফিয়া কামাল, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, সেলিম আল দীন, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, জহির রায়হান, জসীমউদ্দিন এবং সেলিনা হোসেন সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও এসব সাহিত্যিকদের জীবনী, সাহিত্য কর্ম এবং তাদের বিখ্যাত উক্তি ভালোভবে পড়ে নিতে হবে।
নিজেকে প্রস্তুত করুণ এবং মনোযোগী হোন-
একটা বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনি রাষ্ট্রের সব্বোর্চ স্তরে নিয়োগের জন্য ভাইভা বোর্ডে এসেছেন। সুতরাং আপনাকে সেই যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। এছাড়াও ভাইভা বোর্ডে মনোযোগ সহকারে পরীক্ষকের কথা শুণতে হবে। আই-কন্ট্যাক্ট ও বডি ল্যাংগুয়েজ ইতিবাচক রাখুন। কোনো রকম উদ্ধত আচরণ করা যাবে না।
অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাতে যাবেন না-
কোনোভাবেই আগ বাড়িয়ে কোনো বিষয়ে বলা যাবে না। পরীক্ষক যে প্রশ্ন করবেন ঠিক সেই উত্তরই দিতে হবে। অতিরিক্ত স্মার্টনেস দেখাতে যাবেন না।
উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী হোন-
উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আপানাকে কৌশলী হতে হবে। পরীক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় আপনার জানা বিষয় দিয়ে উত্তর দিবেন। কেননা পরীক্ষকরা আপনার উত্তর থেকেই পরবর্তী প্রশ্ন করতে পারেন। এতে আপনার ভাইভা আপনার অনুকূলে চলে আসবে। সর্বোপরি, ভাইভাতে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
এম/এমআর/এসএইচ