প্রিন্স হ্যারি ও মেঘান মের্কেলেই প্রথম দম্পতি নয় !
প্রকাশিত : ০৪:৩৬ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:৩৮ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার
প্রিন্স হ্যারি আর মেঘান মের্কেলের বিয়ের মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছে বিষয়টি এমন নয়, এর আগেও বেশ কয়েকজন রাজপুত্র আমেরিকান কন্যার সঙ্গে বিয়ের পিড়িঁতে বসেছেন।
এর আগেও প্রিন্স হ্যারির দাদার মাকেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনেছিল তাঁর দাদার বাবা জেমস বার্ক রোচ। ঐ রাণীর নাম ফ্রান্সেস অ্যালেন ওয়ার্ক। ফ্রান্সেসকে ফেনি নামে ডাকা হয়।
১৮৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্ম গ্রহণ করেন ফ্রান্সেস। তিনি ফ্রাঙ্ক ওয়ার্কের বড় কন্যা। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে ফেনি তখনকার সেরা সুন্দরী। ১৮৮০ সালে তিনি আইরিশ রাজনীতিক এডমান্ড বার্ক রচের ছেলে জেমস বার্ক রচকে বিয়ে করেন। তবে ফেনির বাবা ফ্রাঙ্ক ওয়ার্ক বিয়েটাকে সহজভাবে নেননি। তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বিয়েটাকে একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা উচিত। তিনি জেমস রচকে জামাই হিসেবে মেনে নিতে চাননি।
ফেনি এবং জিম এরপর ব্রিটেনে বসবাস শুরু করলেন। তাঁদের ঘরে চার সন্তান আসে। তবে একজন শিশুকালেই মারা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সংসার বেশি দিন ঠিকল না। ১৮৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ফেনি জিমকে ডিভোর্স দেন। কোর্ট বলেন, জিম ইচ্ছে করে ফেনিকে তিন বছর আগে আঘাত করেছে এবং স্ত্রী হিসেবে অবহেলা করছে।
আমেরিকান আদালত ওই দম্পতির তিন সন্তান সিন্থিয়া বার্ক রোচ, এডমান্ড মাউরিক বার্ক রোচ এবং ফ্রান্সিস জর্জ বার্ক রোচকে ফেনির হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এডমান্ড মাউরিক বার্ক হলো প্রিন্সেস ডায়ানার দাদা।
১৯০৫ সালে ফেনি আবারও বিয়ে করেন। ১৯৪৭ সালে ফেনি মারা যান। তার ১৪ বছর পর তার নাতির মেয়ে প্রিন্সে ডায়ানা জন্মগ্রহণ করেন।
এদিকে ২০০৮ সালে ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স পিটার পিলিফস কানাডিয়ান কন্যা অটাম কেলিকে বিয়ে করেন। ২০০৩ সালে ওই দম্পতির প্রথম দেখা হয়। ওই বিয়ের পূর্বে কেলি ক্যাথলিক ধর্ম ত্যাগ করেন। এর কারন ২০১৫ সালের যুক্তরাজ্যের করা বিবাহ আইন যাতে তাদের বিয়েতে কোন বাঁধা হতে না পারে। সেই বিয়েতে প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর সাবেক প্রেমিকা চেলসি ডেভিও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রিন্স হ্যারি এবং পিটার পিলিফের চাচা ডিউক অব ইউরকও যুক্তরাষ্ট্রের এক সুন্দরীর সঙ্গে প্রণয় ছিল । ১৯৮১ সালে কো স্টার্ক নামের এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯৮২ সালে তাঁদের প্রণয়ের বিষয়টি পাপারাজ্জিদের নজরে আসে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে ওই তরুণীকে মেঘান মর্কেল অব দ্য ১৯৮০ বলে অভিহিত করেছে। তাঁদের সম্পর্কও টেকেনি।
এর আগে প্রিন্স হ্যারির দাদার চাচা এডওয়ার্ড্ ৬ যুক্তরাষ্ট্রের এক পারিবারিক অনুষ্ঠাপনে যোগ দিয়ে উইলিয়াস সিম্পসনের প্রেমে পড়েন। তবে সিম্পসন ছিল বিবাহিতা। ১৯৩৬ সালে এডওয়ার্ড ৬ এর বাবা এডওয়ার্ড্ ৫ মৃত্যুবরণ করলে এডওয়ার্ড্ ৬ ব্রিটেনের রাজা বনে যান। ওই খবরে সিম্পসন তাঁর স্বামীকে ডিভোর্স্ দেন।
এরপর কিং এডওয়ার্ড সিম্পসনকে বিয়ের অনুমতি চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তবে জনগণ ক্ষেপে যেতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়। এডওয়ার্ড প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন যাতে এমন একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, সে যাতে রাজা থাকে কিন্তু সিম্পসন রানী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত না হয়। কিন্তু সে প্রস্তাবও মেনে নেয়নি প্রধানমন্ত্রী। পরে ১৯৩৭ সালে সকল বাধা উপেক্ষা করে বিয়ে করে ওই দম্পতি। এরপর ওই দম্পতি ফ্রান্সে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭২ সালে এডওয়ার্ডের মৃত্যুবরণ করেন।
৮০ বছরেরও দীর্ঘ সময় ধরে চলা ক্রস-বর্ডার বিয়ের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সংবিধানের সংকট উত্তরণে নতুন চ্যাপ্টার খুলতে যাচ্ছেন প্রিন্স হ্যারি। দীর্ঘ ৮০ বছর পর ব্রিটেনের রয়েল পরিবারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে যাচ্ছেন ওই দম্পতি।
সূত্র: বিবিসি
এমজে/এমআর