চিরনিদ্রায় শায়িত আনিসুল
প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৭:১৮ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার
ঢাকাকে স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্নের কথা কারোরই অজানা ছিল না। তিনি কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। ঢাকাকে বদলে দিতে অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। মেয়রের কাজ না হলেও কাজের বাইরে গিয়ে তিনি যানজট নিরসনে মহাখালী-গাজীপুর পর্যন্ত ইউলুপের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন।
তিনি গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে চার হাজার বাস নামানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সবুজ নগরায়ণের জন্য হাতে নিয়েছিলেন, উত্তর সিটির বিভিন্ন পার্ক উন্নয়নের কাজ। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই বৃহস্পতিবার লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ স্বপ্নবাজ। জানাজা শেষে শনিবার বিকাল ৫টা ১৫মিনিটে বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে শারাফুল হকের কবরে দাফন করা হয় তার।
এ স্বপ্নবাজের মৃত্যুতে কাঁদছে নগর, কাঁদছে নগরবাসী। কান্নার রোল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। কিন্তু বিধির বিধান লঙ্ঘন করার সাধ্য কার? ভালোবাসার অশ্রুভেজা মাটিতেই চাপা দিতে হলো তাকে। সবাইকে কাঁদিয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন সদা হাস্যেজ্জল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক।
শনিবার বিকাল ৫টা ১৫মিনিটে বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে শারাফুল হকের কবরে দাফন সম্পন্ন হয় তার। এর আগে বিকাল ৪টা ১৯ মিনিটে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে মেয়রের নামাজের জানাজা সম্পন্ন হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজায় মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেয়রের মরদেহ বহনকারী বিমানটি সিলেটে এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। পরে দুপুর ১টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় ফ্লাইটটি। বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে মরদেহ বনানীতে তার নিজ বাসায় নেওয়া হয়। এরপর বিকাল সোয়া ৩টার দিকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদেনের জন্য সেখানে কিছু সময়ের জন্য রাখা হয়। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় আনিসুল হককে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের দ্য ওয়েলিংটন হাসপাতালে তিনি মারা যান আনিসুল হক। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবার যুক্তরাজ্য যান মেয়র আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ৩১ আগস্ট আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাকে ওয়েলিংটন হাসপাতালে আনা হয়।
স্বপ্নজয়ের সিঁড়িতে ভর করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নগরবাসীর নজর কেড়েছিলেন আনিসুল হক। স্থবির হয়ে পড়া রাজধানীর গতিও ফিরিয়েছিলেন খানিক। রাজনৈতিক পরিচয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও কোন দলের ভেদাভেদ করেননি এই সফল ব্যবসায়ী। তিনি সবার জন্যই ইতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তার বিদায় বেলায় কেঁদেছেন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সবাই।
১৯৫২ সালে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন আনিসুল হক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। শরিফুল হক ও রওশন আরা বেগম দম্পতির বড় সন্তান আনিসুল হক। তার ছোট ভাই আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বর্তমানে সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মৃত্যুকালে কিনি স্ত্রী রুবানা হক, দুই কন্যা ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের মেয়র নির্বাচনে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হওয়ার আগে তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালে নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত।
আর / এআর