ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘শিক্ষার্থীদের একাত্মতায় ঘুচবে ডাকসুর বন্ধ্যাত্ব’

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০৬:৫৭ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবিতে টানা ১০ দিন ধরে উপাচার্যের বাসভবনের পাশে স্মৃতি চিরন্তনে অনশন করছেন ওয়ালিদ আশরাফ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এমএসএস (সান্ধ্যকালীন) দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার দাবি, আগামী বিজয় দিবসের আগেই ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। এ দাবিতে অনঢ় তিনি। তার বিশ্বাস, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে না হলেও এবার শিক্ষার্থীদের একাত্মতায় ডাকসু নির্বাচনের বন্ধ্যাত্বের অবসান ঘটবে।

টানা অনশনের কারণে ওয়ালিদ অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে তাকে একবার হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক তার স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন, তার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেছে, রক্তচাপও অনেক কম। যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, তাকে সমর্থন জানিয়ে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা দেখা করতে আসছেন। তার দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গতকাল কনসার্টের আয়োজন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাত দশটা পর্যন্ত এই কনসার্ট চলে।

এর আগে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রজোট মোমবাতি জ্বালিয়ে তার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। ধীরে ধীরে ওয়ালিদের সর্মথন বাড়লেও এ বিষয়ে কোনো সাড়া দিচ্ছে না ঢাবি প্রশাসন।

এ বিষয়ে ওয়ালিদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয় ইটিভি অনলাইনের এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তার একমাত্র দাবি ডাকসু নির্বাচন। আর এটা আসন্ন বিজয় দিবসের আগে দিতে হবে। গত ২৭ বছর ধরে শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনের জন্য বিভিন্নভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আন্দোলনে কোনো ফল না পেয়ে বাধ্য হয়ে এককভাবে অনশনে নেমেছেন। এমনকি দাবি আদায় না হাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ওয়ালিদ বলেন, তার আশা ছিলো, নতুন ভিসি আসলে ডাকসু নির্বাচনে ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তিনি কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় অনশনে নেমেছেন।

তিনি বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্ন। এ কারণে আমি প্রতিবাদ স্বরুপ অনশনের পথ বেছে নিয়েছি। আমি মনে করি, আমার দাবির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাত্মতা থাকলে প্রশাসন নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। আশা করি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথ খুলবে। 

প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে এমন কর্মসূচি দিলেন কেন, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৭ বছর শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাবি প্রশাসন। তাই আমি বাধ্য হয়ে এ ধরনের কর্মসূচি দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে।

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সংসদের সভাপতি তুহিন কান্তি দাস বলেন, ওয়ালিদ ভাই যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। তিনি ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে যে আন্দোলন করছেন আমরা তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছে দিতে চাই। সবার কাছে ডাকসুর দাবিকে আমরা তুলে ধরতে চাই। আমরা আশা করছি, এই আন্দোলনে সফল হবো।

শিক্ষার্থী আবু রায়হান খান বলেন, ওয়ালিদ ভাইয়ের অনশনের ১০ দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসন কোনো সমাধান দেয়নি। প্রশাসন এখন মৃতপ্রায়। তাদের জাগিয়ে তুলতেই আমরা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি।

এ বিষয়ে ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্তী রিন্টু ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বই কেবল বাড়েনি, শিক্ষার পরিবেশও বিঘ্নিত হয়েছে। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, সরকার-সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির বাইরের নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ তথা শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ ছাত্র রাজনীতি চর্চার জন্য ডাকসু নির্বাচনের বিকল্প নেই।এ জন্য আমি ওয়ালিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। আর এ আন্দোলন বেগবান করার জন্য আমার চেষ্টা আছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি আছে।

ডাকসু নির্বাচনের বিষয় জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন বিরাট একটা বিষয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ও জাতীয় রাজনীতি জড়িত রয়েছে। এসব বিষয় সমন্বয় করে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সার্বিক বিষয় সমন্বয় হলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। তবে কত দিনের মধ্যে দিতে পারবেন এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে নারাজ তিনি।

ওয়ালিদের প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন করার গণতান্ত্রিক অধিকার সবারই আছে। তবে সবার সবকিছু আমলে নিলে চলবে না। আমাদের যথাযথ উপায়ে অগ্রসর হতে হবে। ২৭ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন দিতে না পারাকে উপাচার্য ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করে বলেন, জট খুলতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

/ডিডি/ এআর