অভিনেতা থেকে নেতা সিদ্দিক
প্রকাশিত : ০৭:৫৭ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার
তাঁর চেহারাটাই যেনো হাস্যরসে ঠাসা! পর্দায় যখনই তাঁর উপস্থিতি ঘটে ভাবগম্ভীর দর্শকও তখন হাসতে বাধ্য হন। দর্শক তাঁকে খোঁজেন সব চরিত্রের ফাঁকে। উদগ্রীব হয়ে বসে থাকেন কখন দেখা যাবে এই অভিনেতাকে ! দম ফাটানো হাস্যরস সমৃদ্ধ অভিনয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনি দেশের সব শ্রেণির দর্শকদের কাছে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছেন। বলছি, ছোটপর্দার নিয়মিত মুখ বাংলাদেশের অন্যতম কমেডি অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানের কথা।
মিডিয়াতে তিনি সিদ্দিক নামেই অধিক পরিচিত। নতুন খবর হচ্ছে, অভিনয়ের পাশাপাশি এই তারকা বর্তমানে ব্যস্ত আছেন রাজনীতির মাঠে। পর্দার কমেডি তারকা সিদ্দিক ব্যাক্তিগত জীবনে একজন ব্যাবসায়ী, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ। অভিনয়ের পাশাপাশি নিজ এলাকায় জনসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত এই অভিনেতা কথা বলেন একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ
বাংলাদেশের নাটকের অবস্থা যখন বেশ খারাপ, তখন ভিন্ন ধারার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মনে আলাদা স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছেন সিদ্দিক। নাটকে তাঁর উপস্থিতি মানেই বিনোদন বেড়ে যায় বহুগুণ। ‘হাউসফুল’, ‘কবি বলেছেন’, ‘গ্রাজুয়েট’, ‘মাইক’, ‘হাম্বা’, ‘বন্ধু’, ‘ভালোবাসা’, ‘৪২০’ সহ অসংখ্য নাটকে কমেডি চরিত্রের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এ অভিনেতা।
নাটকের পাশাপাশি তিনি বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন রাজনীতির ময়দানে। আসন্ন নির্বাচনে টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন এই অভিনেতা। দীর্ঘদিন ধরে শুধু অভিনয়ই নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। এবার নিজ এলাকা মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা (টাঙ্গাইল-১ আসন) থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন সিদ্দিক। সেইভাবে প্রস্তুতি ও প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি একুশে টিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন সিদ্দিক।
সিদ্দিক বলেন, ‘আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। যখনই সুযোগ পাই, এলাকার জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। রাজনীতি করে খ্যাতি বা পরিচিতি পাওয়ার কিছু নাই। অভিনেতা সিদ্দিক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে অনেক। তবে মানবসেবা ও এলাকার উন্নয়নের ভাবনা থেকেই সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। ক্ষমতাকে মানুষের কল্যাণে লাগিয়ে ভালো কিছু করতে চাই। এরইমধ্যে একটু একটু করে আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনে অংশ নেব।’
জনপ্রিয় এই অভিনেতা বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্রজীবনেও আমি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আছে। এখন পর্যন্ত এলাকায় বেশ কয়েকবার জনসংযোগ করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ২০০৭ সাল থেকে আমি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
অভিনয় করে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছেন কিন্তু হঠাৎ কেন রাজনীতিতে প্রবেশ করার ইচ্ছা জেগেছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিক বলেন- ‘একজন অভিনেতা সর্বপরি একজন অভিনেতা। যখন আমি মারা যাবো, তখন সংবাদ প্রকাশ পাবে ‘মরা গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান’। কিন্তু যখন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মারা যায়, তখন সংবাদ আসে- ‘সাবেক ওমুক নেতা মারা গেছেন’। যারা রাজনীতি করে, মন্ত্রী হয় তারা সাবেক হয়। কিন্তু আমরা অভিনেতারা কখনও সাবেক হই না। ওই জায়গাটা থেকে চিন্তা করেছি, যেহেতু সাবেক হবো না, তাই এমন কিছু কাজ করে যেতে চাই- যে কাজের কারণে মানুষ মৃত্যুর পরেও আমাকে স্মরণ করবে। অভিনেতা সিদ্দিককে শুধু অভিনেতা হিসেবে জানবে- সেটা আমি চাই না। আর এ জন্যই আমার এলাকাতে যাওয়া। ২০০৬ সাল থেকেই আমি ওখানে কাজ করছি। ওখানকার লোকজনদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছি। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যক্তিগত উদ্দ্যোগে যতটুকু পেরেছি অংশ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাটক কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ দেখে। গ্রামের অনেকেই আছে যারা নাটক দেখেন না। ওই লোকগুলোর কাছেও আমি ভালোবাসা পেতে চাই।’
মানবসেবা করতে রাজনৈতিক ব্যানারে কেনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তো যেতেই হবে। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এমনই। আমি প্রথমে আলাদাভাবে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পরে দেখলাম না এভাবে হবে না। পারিবারিকভাবে যে দল সাপোর্ট করি, সেই দলের ব্যনারেই থাকলে সুবিধা হবে।’
সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘ছাত্রদের থাকার জন্য ইতিমধ্যেই আমি নিজের নামে একটা হোস্টেল করেছি। আমার থানায় একটি ঈদগাহ্ মাঠ করেছি। দেড় কোটি টাকা খরচ করে এটা করা হয়েছে। এছাড়াও আমি মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুলে অনুদান দিচ্ছি। সত্যিকার অর্থে আমার টার্গেট এলাকার মানুষকে উপকার করা। কথার চেয়ে যদি আমার কাজ দিয়ে সবার মন জয় করতে পারি, তবে ক্ষতি কি?’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে মঞ্চনাটকে সম্পৃক্ত হন সিদ্দিকুর রহমান। এরপর অভিনয় শুরু করেন টিভি নাটকে। ২০১৩ সালে ‘এইতো ভালোবাসা’ নামের একটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা।
ডিডি/এসএ/