মহানবীর ভালোবাসাময় জীবন আমাদের আদর্শ
ফাহমিদা ইসলাম ফারিয়া
প্রকাশিত : ০২:৩৩ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ১০:১৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) পৃথিবীতে এসেছেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে। মানবজাতির পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তাঁকে নবুয়ত প্রদান করেছেন। দুনিয়া সৃষ্টি হবার বহু আগেই আল্লাহ পাক তার নূর থেকে হযরত মোহাম্মদ (স) কে সৃষ্টি করেছেন।
পৃথিবীতে আল্লাহ কাউকে রাসূল হিসেবে আবার কাউকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মহানবী (স) কে একই সঙ্গে নবী ও রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
তাঁর জীবন ছিল ভালোবাসাময়। যুগে যুগে মানুষের জন্য মহানবী (স) এর জীবনী ভালোবাসার মহান দৃষ্টান্তস্বরূপ। আল্লাহ তা’আলা তাকে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে উপাধি দিয়েছেন। তাঁর জীবনের বিভিন্ন সময়ে আমাদের জন্য ভালোবাসার অনেক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
নবী করিম (স) এরশাদ করেছেন, ‘জেনে রেখ যার মধ্যে ভালোবাসা নেই, তার ঈমান নেই’।
তিনি সবসময় অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন। রসুলের চলার পথে বৃদ্ধার কাঁটা বিছানোর গল্পতো আমাদের জানা। আমাদের নবী যে পথ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতেন, সেপথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো এক বিধর্মী বুড়ি। কারণ মহানবী (স) যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতেন তা বুড়ি অপছন্দ করতো। প্রতিদিন এভাবে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো বুড়ি, যখন মহানবী (স) এর পায়ে কাঁটা ফুটত তখন বুড়ি খুশি হতো।
কিন্তু একদিন নবী (স) সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলেন সে পথে কাঁটা নেই। তিনি বুড়ির জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, বুড়ি অসুস্থ। তখন তিনি তাকে দেখতে গেলেন এবং তার সেবা যত্ন করলেন। বুড়ি মহানবীর মহনুভবতা দেখে অবাক হলেন এবং নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলেন।
আরেকটি ঘটনা মহানবী (স) এর সাহাবীদের থেকে জানা যায়। একবার মহানবী (স) এর বাড়িতে এক অতিথি আসলো। তিনি জানতেন যে তাঁর অতিথি ছিলেন একজন ইহুদী। একজন ইহুদী হওয়া স্বত্ত্বে মহানবী (স) ঐ ব্যক্তিকে ভালোভাবে আপ্যায়ন করলেন। তার জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করলেন। রাতে শোবার জন্য ইহুদিকে ভালো বিছানাটি ছেড়ে দিলেন এবং আরামের বিছানার ব্যবস্থা করলেন।
কিন্তু ইহুদী মনে মনে মহানবী(স) কে কষ্ট দেওয়ার জন্য কুবুদ্ধি আটলো। সে রাতে মহানবীর ঘরের বিছানাটি খারাপ, নাপাক করে দিয়ে পালিয়ে গেলো। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তার মনে পড়লো সে নবীজির গৃহে তার তলোয়ারটি রেখে এসেছেন। সে ভাবলো এখন যদি আমি তলোয়ার আনতে মুহাম্মদের গৃহে যাই তাহলে মুহাম্মদ তাকে মেরে ফেলবে।
উল্লেখ্য, তখনকার যুগে একজন আরবের কাছে তার তলোয়ার ছিল সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। তাই সে তার তলোয়ার আনার জন্য ভয় নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মহানবী (স) এর গৃহে প্রবেশ করলো। কিন্তু ঐ ইহুদী ব্যক্তিকে অবাক করে দিয়ে মহানবী (স) বলতে লাগলেন, ‘ওহ আমার অতিথি! রাতে আপনার কতই না কষ্ট হয়েছে। কষ্টে আপনি বিছানা খারাপ করে দিয়েছেন এবং লজ্জা পেয়ে লুকিয়ে গৃহত্যাগ করছেন। আমাকে ক্ষমা করবেন।’
মহানবী (স) এর এমন মহানুভবতা দেখে ইহুদী অতিথি লজ্জিত হলেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন।
মহানবী (স) এর জীবনে আমরা এরকম অনেক দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। তাঁর জীবন ধারণও ছিল খুবই সাধারণ। মহানবী (স) যখন সাহাবীদের মাঝে বসতেন তখন নতুন কেউ এলে তাঁকে সহজেই চিনতে পারতেন না। তাঁর পোশাক থাকতো অতি সাধারণ। তিনি সকলের মাঝে এমনভাবে বসতেন যেন তাঁকে অন্যদের চাইতে পৃথক মনে না হয়।
বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি মানবজাতির জন্য যে অমায়িক ভালোবাসার কথা বলেছেন, পৃথিবীর বুকে তা একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। তিনি বিদায় হজ্জের ভাষণে নারীদের, অবহেলিত ও এতিমদের প্রতি মানবজাতিকে সদয় হতে বলে গিয়েছেন।
তিনি ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন। তিনি এতিমদের প্রতি যেমন সদয় ছিলেন আমদেরও উচিত এতিমদের প্রতি সদয় হওয়া এবং মহানবী (স) এর ভালোবাসাময় জীবনাদর্শ মেনে চলা। অনাহারীকে খাবার খাওয়ানো, নারীদের প্রতি ভালো আচরণ করা, ছোটদের স্নেহ করা এবং বড়দের সম্মান করা এবং বিধর্মীদের সাথে ভালো আচরণ করা মহানবীর মহান আদর্শ।
এ সমস্ত ভালো আচরণ নিজেদের মধ্যে অনুশীলন করার মাধ্যমেই মহানবী (স) এর জীবনাদর্শ এবং আলোকিত জীবন গড়া আমাদের জন্য সহজ হবে।
আজকের পৃথিবীতে আমরা যদি মহানবী (স) এর উত্তম আদর্শ গ্রহণ করতে পারি এবং নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
যার মাধ্যমে এ পৃথিবীতে ইসলাম এলো এই পৃথিবীতে তার ভালোবাসা এবং উত্তম আদর্শ সম্পর্কে জানতে না পারি তাহলে ইসলামকে চেনা যাবে না। আল্লাহ বলেছেন, ইসলাম হচ্ছে আমার মনোনীত ধর্ম।
তাই আসুন মহানবী (স) এর জীবনাদর্শ এবং তাঁর ভালোবাসাময় জীবন সম্পর্কে জানি এবং সে অনুযায়ী আমাদের জীবনকে সাজিয়ে তুলি।
এম/এএ