গুজরাটে কার হার কার জিত?
প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার
টান টান উত্তেজনা, অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হল গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। উত্তেজনা থাকলেও নির্বাচন পুরোপুরি নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই গুজরাট নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে।
এ দিন রাজ্যে মোট ১৮২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টিতে নির্বাচন হয়। বাকি ৯৩টি আসনে ভোট হবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর। ওই এলাকায় মোট ২ কোটি ১২ লাখ ৩১ হাজার ৬৫২ জন ভোটার রয়েছে। নির্বাচনে ৯৭৭ জন প্রার্থী লড়ছে বলে জানা গেছে। দক্ষিণ গুজরাট, সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ এবং কাঠিয়াবাড় অঞ্চলে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৫টায়।
এদিকে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের ফলে কনগ্রেস বরাবরের মত এবারও ভোট চুরির অভিযোগ আনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০০টির মতো ইভিএম যন্ত্রে গণ্ডগোল দেখা দেওয়ায় সেগুলি সরিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পরে ওই কেন্দ্রগুলোতে নতুন করে ইভিএম বসিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গুজরাটে ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। দ্বিতীয় দফার ভোট নেওয়া হবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর। ১৮২ আসনের গুজরাট বিধানসভার দ্বিতীয় পর্বে ভোট নেওয়া হবে বাকি ৯৩টি আসনে। গণনা হবে ১৮ ডিসেম্বর।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভোট ব্যাংক গুজরাটে ২২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এর আগের তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিই ছিলেন এ রাজ্যে বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এছাড়া বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের আপন রাজ্যও এই গুজরাট। তাই এ নির্বাচনে বড় জয় পাবে বিজেপি, এমনই স্বপ্ন দেখছে দলটি। এছাড়া এই রাজ্যে জয় পাওয়াটা সম্মান রক্ষার লড়াই বলে মনে করছে বিজেপি।
অন্যদিকে গুজরাট নির্বাচনে মুসলিমদের ভোট ব্যাংককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে বিজেপি। ওই এলাকায় ক্ষত্রিয়-হরিজন-আদিবাসী-মুসলিম, এই পরিচিত ভোটব্যাঙ্ক ছাড়াও কংগ্রেস এবার হাত বাড়িয়েছে পাতিদার, ওবিসি এবং দলিত ভোটব্যাঙ্কের দিকে। অতএব, দেড় দশক পর এ রাজ্যে বিজেপির জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ কিন্তু কংগ্রেস।
এ রাজ্যে পতিদার এবং পটেল ভোট ১৩ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ।এর মধ্যে লেউভা পটেল ৮.১১ শতাংশ। কড়ভা পটেল ৬.৪২ শতাংশ। মুসলিম ভোট ৯.১ শতাংশের মতো।আদিবাসী বা তফসিলি উপজাতি ভোট প্রায় ১৫ শতাংশ।তফসিলি জাতির ভোট ৭.১ শতাংশ।ব্রাহ্মণ ভোট ১০ শতাংশ।
তবে ভোট ব্যাংকের হিসেব যাই হোক জনতা পার্টি আছে ফুরফুরে মেজাজে। বিজেপি নেতা জামাল ব্যাস বলেন, আশা করছি এবারের নির্বাচনে বিজেপি ১৫০ এর বেশি আসন পাবে। তিনি আরও বলেন, প্রথম দফার নির্বাচনেই কংগ্রেস বুঝে গিয়েছে জয় হচ্ছে না। তাই কংগ্রেস অজুহাত খুঁজতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম কারচুপির অভিযোগ অজুহাত মাত্র।নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ সংস্থা। তারা নিশ্চয়ই বিজেপির হয়ে কাজ করছে না। কমিশন আগেই সব দলকে দিল্লিতে ডেকেছিল। বলেছিল দেখান কী ভাবে ইভিএম-এ কারচুপি করা যায়। কেউ পারেননি। তাই এখন নতুন করে ওই একই অভিযোগ তোলা অর্থহীন।
অন্যদিকে পোরবন্দর, রাজকোট, সুরেন্দ্রনগরে ইভিএম জালিয়াতির চেষ্টা করেছে বিজেপি, এমন অভিযোগ কংগ্রেসের। গুজরাট প্রদেশের কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীশ দোশী বলেন, “ওয়াই-ফাই এবং ব্লুটুথ ব্যবহার করে ইভিএম জালিয়াতি করার চেষ্টা হয়েছে। কংগ্রেসের কাছে এর স্ক্রিনশট রয়েছে। পোরবন্দরের ঘটনায় ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কমিশন বিষয়টা খতিয়ে দেখছে।
এর আগে ২০১২ সালের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২ আসনের মধ্যে বিজেপি ১১৫টি আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬১টি। তবে এবারের নির্বাচনে নতুনভাবে আবির্ভাব ঘটা হার্দিক প্যাটেল নির্বাচনে বড় ধরণের প্রভাব রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছে। তবে গুজরাটে হার জিত জানতে আরও ক’টা দিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
সূত্র: এনডিটিভি, জি নিউজ
এমজে/ এআর