ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি : এক উত্থানের গল্প

প্রকাশিত : ০৭:১৭ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০৭:২১ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার

বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি আসলেই বিস্ময়কর। বিশ্ব গণমাধ্যম এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান এদেশের উন্নয়নের গতিধারা দেখে বিস্মিত। এ বছর জুনের শেষে অর্থনৈতিক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ জানিয়েছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় (অর্থবছর ২০১৬) ১ হাজার ৫৩৮ মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অর্থবছর ২০১৭-এর তথ্য মতে, আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩২% ও আমদানির ৩৭% বড় অংশই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে। তখন দেশে রিজার্ভ ছিলো না। খাদ্য ঘাটতি ছিলো। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশকে ভারত রাশিয়া সাধ্য মতো সহযোগিতা করেছে। যুদ্ব-বিধ্বস্ত একটি দেশে বঙ্গবন্ধুর ডাকে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ত্রাণ ও অবকাঠামোগতভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। বড় বড় পরাশক্তির ধারণা ছিলো এদেশ কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারবে না। হেনরি কিসিঞ্জার নেতৃত্বাধীন কমিটি বলেছিলো এটি হবে ‘আন্তজার্তিক এক তলাবিহীন ঝুড়ি’। এখানে যত সাহায্য ঢালা হোক কোনো কাজে আসবে না। দেশটিতে মহামারি, দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে।

১৯৭২ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তখন মাথা পিছু আয় ছিলো ৫০- ৬০ ডলারের মতো। তখন গড় আয়ু ছিলো ৫০ বছরের কম যা এখন ৭০ এর কাছাকাছি। তখন বেকারত্ব ছিলো ২০-৩০ শতাংশ। শিক্ষার হার ছিলো ২০ শতাংশ। প্রকৃতি ছিলো ভয়ংকর। প্রতিকূল প্রকৃতি, বিপুল জনসংখ্যা ছিলো অর্থনীতির জন্য ভয়ংকর কারণ। এছাড়া উৎপাদন সে হারে হয়নি। তবে ৭২ সালের সালে দেশের বাজেট, উৎপাদন, রপ্তানি, জিডিপি রেকর্ড সংখ্যক হারে বাড়তে থাকে। তবে উদ্যোক্তা তেমন চোখে পরেনি। ভাবতে ভালো লাগছে যে, হতভাগ্য দেশটি আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পরে সে ধারা ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন এবং গঠনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ১৯৭৩ সালে যে অর্থনীতির আকার ছিলো মাত্র আট বিলিয়ন ডলার আজ তার আকার আড়াইশো বিলিয়ন। তখন সঞ্চয়ের হার ছিলো ৩ শতাংশ আর আজ সেটা ৩১% তখন আমদানির পরিমান ছিলো ৩ বিলিয়ন আর এখন ৪৭ বিলিয়ন ডলার। পুরো এক দশক ধরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ২০ লক্ষ।

২০০৯ সালে অর্থনীতির বৃত্ত ভেঙেছে। সংঘাতময় রাজনীতির কারণে কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ছিলো। তারপরও সেটি সন্তুষ্টি পর্যায়ে এসেছে তবে তৃপ্তির ঢেকুর তুললে হবে না।

শিশু মৃত্যুর হার এখন প্রতি হাজারে ৩৫। ২০০৫ সালে তা ছিলো ৬৮। মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে যা এখন ৭২.৩। ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি পূরণ শেষে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবো। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। তখন মাথাপিছু আয় হবে ১৬ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার।

২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিলো ২৩০০ মেগাওয়াট। তা আজ ১৫০০০ হাজার মেগাওয়াট। আট বছরে বেড়েছে ৫ গুণ।

উন্নয়নের গতি বাড়াতে হলে জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রযুক্তিতে, শিক্ষায়, গবেষণায় ও রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান গুলোর সক্ষমতা বাড়াতে পারলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হবে।

 

//এমআর