ভ্যাট কমিশনারেট পূর্ব
মাথায় হাত বুলিয়ে কর আদায় করতে চাই
প্রকাশিত : ০৯:২২ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০৯:২৩ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার
জনগণের মাথায় বাড়ি দিয়ে নয় তাদের মাথায় হাত দিয়ে কর আদায় করতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা পূর্ব কমিশনার মো. জামাল হোসেন। তিনি বলেন, বদলে যাও, বদলে দাও-এ সংস্কৃতি চালুর পাশাপাশি মানুষের মাঝে যে কর ভীতি রয়েছে তা দূর করতে চাই।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া ভবনে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা পূর্বে আয়োজিত জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপনের ধারাবাহিকতায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ)সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
পূর্ব কমিশনার জামাল হোসেন ইআরএফ এর পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, আগামীতেও হবে। স্টেকহোল্ডারসহ সবার সঙ্গে আমরা মতবিনিময়, প্রচার-প্রচারণা, উদ্ভাবন অব্যাহত রেখেছি। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আমরা বদলে যাবার মধ্যে আছি। গণ শুনানির মাধ্যমে করদাতাদের আরও কাছে যাবার চেষ্টা করছি আমরা। একই সাথে বাজেট বাস্তবায়ন এনবিআরের একা নয়, এ দায়িত্ব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই।
জামাল হোসেন বলেন, আমরা বিদেশ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এক সময় বিদেশ নির্ভরতা ছিল ৮ থেকে ১০ শতাংশ, এখন তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যে দেশের কর দেওয়ার হার যত বেশি সে দেশের অর্থনীতি তত মজবুত।
ভিয়েতনামের উদাহরণ দিয়ে কমিশনার বলেন, ভিয়েতনামের ৯ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ কর দেয়। যার মধ্যে ২ শতাংশ মানুষ ভ্যাট দেয়। দেশটির তুলনায় আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ১২ লাখ মানুষ নিয়মিত কর দেয়।
তিনি বলেন, এখন আমরা জনসাধারণের মাথায় বাড়ি দিয়ে নয় তাদের মাথায় হাত দিয়ে কর আদায় করতে চাই। বদলে যাও, বদলে দাও এ সংস্কৃতি চালুর পাশাপাশি মানুষের মাঝে যে কর ভীতি রয়েছে তা দূর করতে চাই।
সভায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহে ইআরএফকে মতবিনিময়ে আহ্বান জানানোর জন্য ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ভ্যাট আহরণ ও সেবা প্রদানে এ কমিশনারেটের উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, সেবা দেওয়ার মাধ্যমে এনবিআর যেমন বদলে যাচ্ছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের সব অফিস। আরিএসব বদলে দেওয়ার প্রতীক বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান। বদলে দেওয়ার উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে পৌঁছেছে কী না- তা ভাবনার বিষয় ছিল। কিন্তু পূর্ব কমিশনারেটের উদ্যোগ আর উদ্ভাবন ভাবনার চেয়েও বেশি হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ শুধু এনবিআর নয় মাঠ অফিসেও পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বদলে যাবার রূপকল্প গোটা দেশের মাঠ পর্যায়ের অফিসে ছড়িয়ে দিতে পারলে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
পূর্ব কমিশনারেটকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। রাজস্ব আহরণে সাধারণ মানুষকে নয় ফাঁকিবাজদের আঘাত করতে হবে। রাজস্ব আহরণের চিত্র দেখে বলা যাচ্ছে কর্মকর্তারা কতটুকু নিবেদিত। কর্মকর্তাদের দেশের উন্নয়নে রাজস্ব আহরণে সঠিকভাবে পবিত্র দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, এ ধরনের মতবিনিময়ের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণে সহযোগিতা করার তাগাদা তৈরি করে দেবে। এনবিআরকে সহযোগিতা করা মানে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা। দেশে মেগা প্রকল্প দেখেই বুঝা যাচ্ছে উন্নয়ন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাঝে কর সচেতনতা বেড়েছে। রাজস্ব আহরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভালো উদাহরণ মানুষের মাঝে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে মানুষ অনুপ্রাণিত হবে, রাজস্ব বাড়বে।
সভায় ইআরএফ এর কয়েকজন সদস্য ভ্যাট অনার কার্ড এর সুবিধাসমূহ বাস্তবায়ন, রাজস্ব কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা করা, উদ্ভাবন ও অটোশেণকে গুরুত্ব দেওয়া, ইসিআর এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, রাজস্বের ক্ষেত্রে সমতা তৈরিসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
সভায় অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাকির হোসেন এ কমিশনারেটের উদ্ভাবন তুলে ধরে বলেন, কমিশনারেটে কাজের গতি আনা, ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি এবং সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নতুন উদ্ভাবন যেকোন ফাইল, কাগজের ওপর লেখা রয়েছে-আমাকে ফেলে রাখবেন না। সব সময় এ কমিশনারেট রাজস্ব আর সেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর এ কমিশনারেটের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১০৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৫১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বিপরীতে ৫২৯ কোটি ৩৭ লাখ ও ১৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার উৎসে কর আহরণ হয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত এ কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ৩২ শতাংশ। আর বিদায়ী অর্থবছর এ কমিশনারেট ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা আহরণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, ভ্যাট বিষয়ে যেসব অভিযোগ ভ্যাট অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে তা আর থাকবে না। বিশেষ করে রিটার্ন দাখিল চালু হলে হয়রানির কোন অভিযোগই আশা করি আসবে না। হয়রানি রোধ এবং সেবা প্রদানে আমরা আউট অব দ্য বক্সে কাজ করার চেষ্টা করছি। সভায় পূর্ব কমিশনারেটের পক্ষ থেকে ইআরএফকে সম্মননা প্রদান করা হয়।
আর