‘১৮ বছরের নিচে সন্তানকে স্মার্ট ফোন নয়’
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ বুধবার
প্রযুক্তি মানুষের জীবনটা কিছুটা হলেও সহজ করছে। শিশু আধো আধো কথা বলা থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ শব্দ বা বাক্য শিখছে- এখন ট্যাব বা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে। একসময় শিশুরা মায়ের চোখে চোখে রেখে শব্দ বা বাক্য শিখত, এখন এটা চলে গেছে স্মার্ট ফোনের দখলে। দিনে দিনে শিশুরা স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এটা প্রযুক্তির প্রসার বললেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা।
তারা বলছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী স্মার্টফোন বা ইন্টারনেটে বেশি সময় কাটায় তাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা দেখে বোঝা যায় তাদের এ বিষয়ে আসক্তি রয়েছে। স্মার্টফোন আসক্তি আর মাদক আসক্তি একই রকম। ফলে শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে না দিলে তাদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। এমনকি এর আসক্তির কারণে সম্প্রতিক আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৮ বছরের বয়সের কম শিশু-কিশোরদের হাতে স্মার্টফোন না দেওয়া উচিত। এটা প্রতিকারে অভিভাবকদের সচেতন হতেও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
উন্নত দেশেগুলোতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের স্মার্টফোন আসক্তি প্রতিকারে বিভিন্ন গেম ও কোচিং সেন্টার চালু হয়েছে।
প্রযুক্তির এমন বিরূপ প্রভাবের বিষয়টি বুঝতে পেরে বিল গেটস, স্টিভ জবসের মতো প্রযুক্তি জগতের কর্ণধাররা নিজেদের সন্তানকে প্রযুক্তি থেকে দূরে রেখেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফাতেমা রেজিনা পারভীন একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, শিশুরা অতিমাত্রায় স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়ার কারণে অপরাধমূলক কাজ সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজে নৈতিকতা ও মূলবোধ অভাব দেখা দিয়েছে। বাড়ছে খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা।
অল্প বয়সে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট আসক্তির কারণে শিশুরা মা, বাবা থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। ফলে যে বিষয়গুলো শিশুরা মা, বাবা, ভাই, বোন থেকে শিখে নেওয়ার কথা ছিল, তা পারছে না। ফলে তারা কুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। অল্প বয়সে চোখে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের কানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। শিশুরা অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যাচ্ছে। অনেকের আবেগ ও অনুভূতি কমে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো এখনকার ছেলে মেয়েরা বই পড়ে না। আমাদের অনেক সময় বই পড়ে পার করতাম। এখনকার শিশুরা বই থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা বইকে বিনোদন মনে করে না। স্মার্টফোনে আসক্ত হাওয়ার কারণে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শিশুরা মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে প্রযুক্তিকে তাদের ভোগ ও আয়েশের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এর প্রতিকার হিসেবে ইন্টারনেট ও অনন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইন প্রয়োগ ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যা অনেকটা লাঘব করা সম্ভব। পাশাপাশি পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের ওপর বড়দের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ১৮ বছরের আগে শিশু কিশোরদের স্মার্টফোন ব্যবহার আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইতোমধ্যে যারা আসক্তি হয়েছে, তাদের অভিভাবকদের অনেক সচেতনতার সঙ্গে এ থেকে বিরত রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে মা-বাবা উভয়ের উপস্থিতিতে আন্তরিকভাবে সমস্যার কথা তুলে ধরা উচিত। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে অনেক সময় সন্তান আপনার মতামতের সঙ্গে এক না হয়ে উল্টো আপনাকে দোষারূপ করতে পারে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে মা-বাবার কিছু ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে।
সমস্যা আলোচনা করার পূর্বে যদি আপনি সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন, তা সন্তানের মনোযোগ আকর্ষণ করতে অনেকাংশে সহায়তা করবে। আপনি যে তার সুখ এবং মঙ্গল কামনাকারী, তাকে তা বুঝাতে হবে। তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করা হুট করেই বন্ধ করা যাবে না। বলতে হবে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে; কিন্তু কি পরিমাণ সময় ব্যয় করছে এবং কি কাজে সে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে- তা জানাতে হবে। এভাবে নজরদারিতে রাখলে আশা করা যায়, এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
/ডিডি/ এআর