সামরিক জাদুঘরে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়
তবিবুর রহমান
প্রকাশিত : ০৫:০৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০২:২০ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার
মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মতো দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে রাজধানীর বিজয় স্মরণী সামরিক জাদুঘরে। সকাল থেকে লোকজনের ভিড় শুরু হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার চেতনা ও দেশপ্রেম আরও বেশি উজ্জীবিত করতে বিজয় স্মরণীর সামরিক জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস দেখতে ভিড় করে দর্শনার্থীরা। নগরবাসীর অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এখানে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জন সমাগমও। স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাবার কাঁধে চড়ে বেড়াতে এসেছে ৬ বছর বয়সের আকরাম। চোখে-মুখে যেনো আনন্দের ছোয়া! জানতে চাইলে সে বলে, আমাদের দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাঁদের বিষয় জানতে এখানে এসেছি। অনেক কিছু দেখেছি। ভীষণ মজা লাগছে।
এদিকে, রাশেদ ও শিরিন দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলে আবিরকে নিয়ে এখানে এসেছে। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে এ দম্পতি বলেন, ‘দুজনই চাকরি করি। তাই ঠিক সেভাবে সময় পাইনা। বাচ্চাকে নিয়ে ঘোরাও হয় না। আজ সুযোগ হয়েছে তাই সন্তানকে নিয়ে চলে এসেছি এখানে। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এদেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের বিষয়ে সন্তানকে জানাতে এসেছি। নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে অভিভাবকের শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও মনে করেন তারা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মিজান নামের এক সেনাবাহিনীর সদস্য বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের হয়েছেন সপ্ন বাস্তাবায়নের জন্য কাজ করছে সরকার। জাদুঘরের নতুন ভবন নির্মাণ করছে। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের আরও অনেক ইতিহাস যোগ করা হবে। এছাড়া বাহিরে যে সকল জিনিস দেখতে পারছেন এগুলো নতুন ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। এগুলোকে এ জাদুঘরে ভিতরে স্থাপন করা হবে। সকাল থেকে বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি, পেশার মানুষে যেনো কানায় কানায় ভরে উঠেছে সাময়িক জাদুঘর। এদের অনেকেই এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কেউবা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। আবার কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে সামরিক জাদুঘরে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করতে ২০০৪ সালে সামরিক জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ব্যাজ, পোশাক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, ক্যানন, এন্টি এয়ারক্রাফ্ট গান এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন জাদুঘরটিতে রক্ষিত রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন যানবাহন এবং অস্ত্রও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। জাদুঘরের সামনে মাঠে রাখা ২৬টি বিভিন্ন মডেলের ট্যাংকসহ সাঁজোয়া যানও দেখতে পাওয়া যাবে। সবার জন্য উন্মুক্ত এই জাদুঘর ঘুরে দেখতে কোনো প্রবেশমূল্য লাগবে না। সপ্তাহের বুধবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে সামরিক জাদুঘর। শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে এবং অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে প্রবেশ করা যায়। মূল ভবনের দোতলায় রয়েছে ৮টি গ্যালারি।
প্রথম গ্যালারিতে হাত-কুঠার, তীর, ধনুকসহ পুরনো যুগের অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে ডিবিবিএল গান, এসবিবিএল গান, বিশেষ ব্যক্তিবর্গের ব্যবহৃত হাতিয়ারসহ যুদ্ধাস্ত্র। তৃতীয় গ্যালারিতে এলএমজি, এসএমজিসহ মাঝারি অস্ত্র। চতুর্থ গ্যালারিতে রয়েছে মর্টার, স্প্যালো, এইচএমজিসহ ভারী অস্ত্র। পঞ্চম গ্যালারিতে সর্বসাধারণের প্রদর্শিত হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর শীত ও গ্রীষ্মকালীন পোশাক পরিচ্ছদ, ব্যাজ ও ফিতা। ষষ্ঠ গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল, সেক্টর কমান্ডারদের পোর্ট্রেট, কিছু ব্যবহার্য সামগ্রী। সপ্তম গ্যালারির নাম দেয়া হয়েছে ‘বিজয় গ্যালারি’।
এতে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন তাদের পোর্ট্রেট ও সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অষ্টম গ্যালারিতে রয়েছে সাবেক সব সেনাপ্রধানের তৈলচিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরপ্রতীকদের নামের তালিকা। ভবনের নিচতলায় প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী যে গাড়িটি নিয়ে বিভিন্ন যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেন সেই জিপ গাড়িটি। এর পাশাপাশি রয়েছে গোলন্দাজ বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ১৪.৫ মি. মি. কোয়াড বিমান বিধ্বংসী কামান, ১২০ মি. মি. মর্টার ব্রান্ডেট এ এম ৫০, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ব্যবহৃত ৬ পাউন্ডার ট্যাংক বিধ্বংসী কামান, ১০৬ মি. মি. রিকয়েললেস রাইফেল। আরও আছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে উদ্ধারকৃত স্টাফ কার মার্সিডিজ বেঞ্জ ও সিলিন্ডার ২০০০ সি সি।
//এমআর