পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ০৬:৩৯ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৭:৪১ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার
আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ৪৬তম বিজয় দিবস উদযাপন করছে বাঙালি জাতি। এ সময়ে বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। যে পাকিস্তানিদের হাত থেকে এক সাগর রক্তের বিনিয়ময়ে আজকের এই বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, খাদ্যে উন্নয়ন, মাতৃ মৃত্যুহার, সব কিছুতেই পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।
সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি তুলনা তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশকে শোষণ-নিপীড়নে নিষ্পেষিত করতে চেয়েছিল যে পাকিস্তান, এখন অনেক কিছুতে সেই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ এখন পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ এক হাজার ৫৩৮ ডলার। সেখানে পাকিস্তানের তা এক হাজার ৪৭০ ডলার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ১৭ লাখ। আর পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২০ কোটি ৭৮ লাখ। পাকিস্তানের মাথাপিছু জিডিপির হার কমেছে আর বাংলাদেশের বেড়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশের অর্থনীতির ইতিহাসে এই প্রথম এত উচ্চমাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হলো, যা ছিল নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। তবে স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি বাড়েনি। এর মধ্যে ১৯৭৩-৭৪ থেকে ১৯৭৯-৮০ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ হারে। এরপর থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে গেছে ৬ শতাংশ। বর্তমানে জিডিপির আকার ২৪ হাজার ৯৬৮ কোটি ডলার। জিডিপির আকার ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াতে স্বাধীনতার পর ৩৪ বছর লেগেছে।
উন্নতি হয়েছে মাথাপিছু আয়েও। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৭১ টাকা। বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এক লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা বা এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার।
এছাড়াও বাংলাদেশ এখন গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (বিশ্ব ক্ষুধাসূচক) পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। ২০১৭ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮; যেখানে পাকিস্তানের ১০৬।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানব উন্নয়নের অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়েছে। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের গড় আয়ু ছিল ৬০ বছর। বাংলাদেশের চেয়ে দুই বছর বেশি ছিল তাদের গড় আয়ু। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২ বছর, যা পাকিস্তানের চেয়ে ছয় বছর বেশি। জাতিসংঘের সর্বশেষ মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ১৮৮ দেশের মধ্যে ১৩৯তম। পাকিস্তান পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে ৮ ধাপ। ৫ বছরের কম শিশু মৃত্যুহারেও এক সময় বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। ২০১৬ সালের হিসাবে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণের পর প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু ঘটে। পাকিস্তানে এ সংখ্যা ৭৯ জন। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার এক সময় অনেক বেশি ছিল। এক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ হার ৭২ শতাংশ।
এসএইচ/ এআর