ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

কান পাকা রোগের সমস্যা ও সমাধান

প্রকাশিত : ০৪:৩৮ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ১০:০৮ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার

কান পাকা একটি বড় সমস্যা। সাধরণত কান দিয়ে অনেকেরই পানি, পুঁজ পড়ে থাকে। এতে করে পোহাতে হয় নানারকম দুর্ভোগ এবং অস্থিরতা। কিন্তু সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে কান পাকা দ্রুত ভালো করা যায়।

বিষয়টি নিয়ে পরমর্শ দিয়েছেন ডা.খালেদ মাহমুদ (ডিএলও (ডিইউ), এমসিপিএস, এফসিপিএস (ইএনটি)।

 

প্রশ্ন : কান পাকা রোগটির কারণ কী?

উত্তর : বাংলাদেশের মতো অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এই রোগটি হয়ে থাকে। তার কারণ- দারিদ্র্যতা, অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব ইত্যাদি।

প্রশ্ন : কান পাকা রোগের লক্ষণগুলো একটু বলবেন কী?

উত্তর : কান দিয়ে পানি/ পুঁজ পড়া। ২) কানে তুলনামূলকভাবে কম শুনা। ৩) মাথা ঘোরানো (শণর্রধথম)। ৪) কানে শোঁ শোঁ, ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করা ইত্যাদি।

প্রশ্ন : কান পাকা রোগ কাদের বেশি হয়?

উত্তর : এই রোগটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে এবং নারী-পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হতে পারে। তবে শহরবাসীর তুলনায় গ্রামের মানুষের এই রোগটি বেশি হয়। অনেক সময় দেখা যায় গ্রামের মানুষের ক্ষেত্রে কানে কম শোনার এই রোগটি একটি প্রধান কারণ। কান দিয়ে পানি/পুঁজ পড়া রোগটি সাধারণত শৈশবেই শুরু হয়। আর তাই কম বয়সের ছেলেমেয়েদের মাঝেই এই রোগ বেশি দেখা যায়।

প্রশ্ন : শিশুদের কান দিয়ে পানি/পুঁজ আসার কারণ কী?

উত্তর : আগেই বলেছি আমাদের সবারই ইউস্টেশিয়ান টিউব নামক একটা টিউব আছে যার এক মাথা থাকে মধ্য কর্ণে এবং আরেক মাথা থাকে নাকের পেছনে ন্যাজোফেরিংস নামক স্থানে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টিউবটা থাকে খাটো, প্রশস্ত এবং একদম সোজাসুজি। ফলে মা বোনরা যখন শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান অথবা বোতলে দুধ/পানি খাওয়ান তখন যদি শিশুর মাথার দিকটা একটু উঁচু না করে ফ্লাট অবস্থায় খাওয়ান তখন এই দুধ/পানি কিছুটা হলেও মধ্য কর্ণে চলে যায় এই টিউব দিয়ে। পরবর্তীতে এই দুধ/পানি মধ্য কর্ণে ইনফেকশন সৃষ্টি করে কান পাকা রোগ।

এছাড়াও বাচ্চাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে, আপার রেসপিরেটরী ট্রাক্ট ইনফেকশন বেশি হয়, টনসিলে ইনফেকশন হয়, সাইনোসাইটিস হয়, এডিনয়েড বেশ বড় হয়ে ইউস্টেশিয়ান টিউবের নরমাল কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। এসব কারণে প্রথম দিকে হঠাৎ করে কানে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়, জ্বর থাকে, এরপর কানের পর্দা ফুটো হয়ে পানি বেরিয়ে আসে। ঐ সময় ঠিকমতো এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেলে পর্দার ছিদ্রটি স্থায়ী হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে কানে ইনফেকশন হবার কারণে কান দিয়ে পানি/পুঁজ আসে।

কান পাকা রোগটি মূলত দুই ধরনের-

(১) সেফ টাইপ (টিউবোটিমপেনিক টাইপ), সাধারণত এটাতে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না।

(২) আনসেফ টাইপ (এটিকোএন্ট্রাল টাইপ), এই ধরনের কান পাকা রোগ থেকে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে যা কিনা প্রাণনাশের হুমকিস্বরূপ। যেমন- ব্রেইনএবসেস, ম্যানিনজাইটিস, এনসেফালাইটিস, ফেসিয়াল প্যারালাইসিস ইত্যাদি।

প্রশ্ন : যাদের এখনো কান পাকা রোগ হয়নি এবং যারা এই রোগে ভুগছেন তাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ বা উপদেশ আছে কী?

উত্তর : সবার জন্য একই কথা- অযথা কান খোঁচাবেন না, ম্যাচের কাঠি, মুরগির পাখনা, ক্লিপ, নখ ইত্যাদি দিয়ে কান চুলকাবেন না। রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে কান পরিষ্কার করানোর জন্য বসে পড়বেন না। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা, জ্বর, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন।

প্রশ্ন : যারা কান পাকা রোগে ভুগছেন তাদের জন্য পরামর্শ কি?

উত্তর : (১) গোছলের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনোভাবেই কানে পানি ঢুকতে না পারে। প্রয়োজনে ইয়ারপ্লাগ দিয়ে গোসল করবেন। তা না হলে তুলা তেলে ভিজিয়ে অতিরিক্ত তেল চিপড়িয়ে ফেলে দিয়ে তুলা কানে দিয়ে গোছল করবেন।

(২) পুকুরে/নদীতে ডুব দিয়ে গোসল করবেন না।

(৩) ফ্রিজের পানি, আইসক্রিম, ঠাণ্ডা পানীয় ইত্যাদি পরিহার করে চলবেন।

এসএ/