ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

হেনরি কিসিঞ্জার সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:০৬ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

১৯৭১ সাল। সময়টা যুদ্ধের। সময়টা রক্তের। সময়টা কূটনীতির। আর এই কূটনীতির মারপ্যাঁচে বাংলাদেশের কোটি জনতার কাছে একটি আন্তর্জাতিক ভিলেন চরিত্রের নাম হেনরি কিসিঞ্জার। যিনি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনীকে রুখে দিতে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন।

একইসঙ্গে স্বাধীনতাকালে দেশে দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার চেষ্টা করেছেন কিসিঞ্জার। যিনি দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে একটি তলাবিহীন ঝুঁড়ি। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশে ভ্রমণ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বিজয়ের মাসে চলুন জেনে নেই, কে এই হেনরি কিসিঞ্জার? তার সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।

হেনরি কিসিঞ্জার ১৯২৩ সালে জার্মানির ব্যাভিলিয়া প্রদেশের ফুর্ত নামক শহরে এক জার্মান ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক, মা ছিলেন গৃহবধূ।

১৯৩০-এর দশকে জার্মানিতে হিটলারের উত্থানের পরই দেশটিতে শুরু হয় ইহুদি নিপীড়ন। সেই সময় দেশটি থেকে হাজার হাজার ইহুদি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দেশছাড়াদের মধ্যে হেনরি কিসিঞ্জারও ছিলেন। ১৯৩৪ সালে হেনরি কিসিঞ্জার তার মা-বাবার সঙ্গে প্রথমে আসেন লন্ডনে। এরপর ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।

নিউইয়র্ক শহরে প্রথমদিকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া শেখেন কিসিঞ্জার। পরে ভর্তি হন হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি।  এরপর রাজনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

এরইমাঝে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে। সেখানে তিনি ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত সার্জেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের পরই পররাষ্ট্রনীতি ও সমরবিদ্যার অনুশীলন করেন তিনি। এরপর যুক্ত হন রাজনীতিতে। সেখানেই তিনি নিজেকে রিপাবলিকান রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেন।

হেনরি কিসিঞ্জার ব্যক্তিগত জীবনে দুই বিয়ে করেছেন। বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী ন্যন্সি ম্যাগিনসের সঙ্গে তিনি নিউইয়র্কে বাস করছেন। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে।

১৯৬৮ সালে রিচার্ড নিক্সন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি হেনরি কিসিঞ্জারকে তার পররাষ্ট্রসচিব ও সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন নিক্সন। কিসিঞ্জার তার কূটনৈতিক দক্ষতার ফলে ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। পরে ওই বছর তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মূল হোতা রিচার্ড নিক্সন পরে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেও হেনরি কিসিঞ্জারকে স্বপদে বহাল রাখেন অন্য প্রেসিডেন্টেরাও।  ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। এরপর দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে নিউইয়র্ক শহরে বাস করতে থাকেন মার্কিন ওই কূটনীতিবিদ।

হেনরি কিসিঞ্জার বর্তমানে রিপাবলিকান দলের একজন ‘থিঙ্কট্যাঙ্কের’ দায়িত্ব পালন করছেন। জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন পরামর্শক কিসিঞ্জার। এছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিনিদের ঘনিষ্টতা বাড়াতে কিসিঞ্জার কাজ করছেন বলেও জানা গেছে।

এর আগে ৬০ এর দশকে সোভিয়েত আধিপত্য ঠেকাতে হেনরি কিসিঞ্জার দেশটির বিরাধিতা করে আসলেও বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বাড়তে ট্রাম্পকে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ মার্কিনিদের।

বিভিন্ন দলিলে হেনরি কিসিঞ্জারের তৎকালীন ভূমিকা নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তার প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে একটি সোভিয়েত বিরোধী জোট বাঁধতে চেয়েছিল । এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে পালন করছিল বিশেষ ভূমিকা। ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে আসছিল।

স্বাধীনতাকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে কিসিঞ্জার বলেন, তৎকালীন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিক চান পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুই টুকরো করে দিতে। কিন্তু তিনি কেন চান, তা তিনি জানেন না। ভারতীয়দের সম্পর্কে কিসিঞ্জার ওই মিটিংয়ে বলেন, ওরা যত সব হারামির বাচ্চা! ওরা আমাদের জন্য কখনো কিচ্ছু করে দেখায়নি। তাহলে এখন আমরা কেন পূর্ব পাকিস্তানের গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ব?এছাড়া পূর্ব পাকিস্তান যদি স্বাধীন হয়ে পড়ে, তাহলে দেশটা একটা আস্ত ভাগাড়ে পরিণত হবে। ১০০ মিলিয়ন মানুষ, ওখানে জীবনমান হবে এশিয়ায় সবচেয়ে নিচে।

এসময় তিনি বলেন, দেশটিতে কোনো সম্পদ নেই। তাই কমিউনিস্টরা অঞ্চলটিতে অনুপ্রবেশের জন্য একদম প্রস্তুত। যদি দেশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাহলে কম্যুনিস্টরা দেশটি দখল করবে। এরপর তারা পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে  ভারতে ঢুকবে। সুতরাং ভারত কি চাইছে, তা তারা নিজেরাই জানে না। সত্যি বলতে কি নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে ভারত। অবশ্য ভারত হয়তো ভেবে থাকবে যে কলকাতায় বসে তারা সে দেশের ওপর নিজের মাতব্বরি ফলাবে। হতে পারে, মনে মনে সে রকম অভিসন্ধিই তাদের আছে।

এদিকে স্বাধীনতার পর যুক্তরাষ্ট্রে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলে মন্তব্য করেছিলেন কিসিঞ্জার। সে বিষয়ে পরে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলেছি কি না, তা মনে নেই।

**উইকিপিডিয়াসহ বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে লিখেছেন মোহাম্মদ জুয়েল

এমজে/ এআর