রাজাকারদের নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছি : জামাল ভুঁইয়া
প্রকাশিত : ০২:৩৪ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:৪৬ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
বদিউজ্জামান ভুঁইয়া। সবার কাছে তিনি জামাল ভুঁইয়া নামে পরিচিত। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে জন্ম নেওয়া এ মুক্তিযোদ্ধা খুব একটা পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। তার বাবা ছিলেন কৃষক। ছোট বেলায় চাকরির কারণে চট্টগ্রামে চলে যান। যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন পায়ে হেঁটে নিজ এলাকায় আসেন। এরপর পরিবারের অনুমতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি শুরু করেন অভিনয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যাত্রা, মঞ্চ, নির্দেশনা, নাটক লেখা- সব কিছুতেই তার পদচারণা রয়েছে। তবে অথনৈতিক পিছুটান তার চলার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। একুশে টিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন যুদ্ধকালীন স্মৃতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তার পথচলার নানা কথা। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আলী আদনান।
একুশে টিভি অনলাইন: আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। জাতির গর্বিত সন্তান। কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন?
জামাল ভুঁইয়া : আমি যখন চাকরি নিয়ে চট্টগ্রাম যাই,তখন দেশে উত্তজনা বিরাজ করছে। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম আসলে আমরা দল বেঁধে মিছিল নিয়ে তার মিটিংয়ে যেতাম। প্যারেড ময়দানে তার বক্তৃতা শুনতে গিয়েছি অনেকবার। আমরা বুঝতাম, দেশ স্বাধীন করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই।
এই অবস্থায় এলো ২৫ মার্চের কালোরাত্রি। পরের দিন আমার মত অসংখ্য মানুষ রাস্তায় নামে। পুলিশের নির্যাতনে অনেকেই আত্মগোপনে চলে যায়। তিন দিন তিন রাত হেঁটে আমি মনোহরগঞ্জে পৌঁছাই। আমাদের এলাকাররামগঞ্জ স্কুল মাঠে নুরুজ্জামান খোকন ও নুরুজ্জামান (পরবর্তীতে দুজনেই ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন) ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। আমি ও আমার মত অসংখ্য যুবক ট্রেনিংয়ে অংশ নিই। এগারো দিনের ট্রেনিং করি। ট্রেনিং শেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই।
একুশে টিভি অনলাইন : মুক্তিযুদ্ধে আপনার স্মরণীয় কোনো ঘটনা বলুন।
জামাল ভুঁইয়া : ঘটনা তো অনেক। কোনটা রেখে কোনটা বলি। আমি বয়সে সবার ছোট। অনেকটা কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বলা যায়। আমি গোয়েন্দাগিরি করতাম। মুক্তিযোদ্ধাদের খবর সরবরাহ করতাম বেশি। একটি বড় অপারেশনের কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। সেই অপারেশনে আমি কুমিল্লার খিলা স্টেশনে সংলগ্ন ব্রিজটি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ফলে ওই দিক দিয়ে পাকসেনাদের গাড়ী যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে, দুজন রাজাকারের। তাদের আসল নাম হাকিম ও কটু। তবে এলাকায় তারা হাইক্কা ও কইট্টা নামে পরিচিত ছিল। তাদেরকে আমি নিজ হাতে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছি। তারা এমন কোনো অপরাধ নেই, যা করেনি।
একুশে টিভি অনলাইন : মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন?
জামাল ভুঁইয়া : আমি তো সুযোগ-সুবিধার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। সত্যি কথা হচ্ছে, আমি কখনো সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা ভাবিনি। এখন মাঝে মধ্যে এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা দেখি, যাদেরকে একাত্তর সালের পরে হাফপ্যান্ট পরে স্কুলে যেতে আমি নিজে দেখেছি। একাত্তর সালে রাজাকার ছিল, এখন এসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হয়েছে- এমন নজিরও কম নয়।
একুশে টিভি অনলাইন : ঢাকার মঞ্চ নাটকের জগতে আপনার নামটি খুব আলোচিত। কীভাবে এলেন এ জগতে?
জামাল ভুঁইয়া : গ্রামে আমি নাট্যকর্মী ছিলাম। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে নাটক নিয়ে কাজ করা আমার নেশা ছিল। নিজেরাই নাটক লিখতাম। নিজেরাই নির্দেশনা দিতাম। নিজেরাই অভিনয় করতাম। তারপর বড় একটা টিন নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাটক দেখার দাওয়াত দিতাম। তখন থেকে আমার ধ্যান-জ্ঞান নাটক। ঢাকায় এসে বিভিন্ন নাটকের গ্রুপে জড়িয়ে যাই। এরপর টিভি নাটকে আসি।
একুশে টিভি অনলাইন : এখন পর্যন্ত আপনি কতগুলো নাটক নিয়ে কাজ করেছেন?
জামাল ভুঁইয়া : আমার প্রথম নাটক ‘ওরা বেয়াদব’। এরপর একে একে লিখি মুখোশধারী, ওরা সন্ত্রাসী, দাবিদার, ৭১’র কাকলাশ, আব্দার, যুদ্ধাপরাধীইত্যাদি। ইতোমধ্যে আমার লেখা আটটি নাটক বিভিন্ন সময় মঞ্চস্থ হয়েছে। আর টিভি নাটক একটি। সোনার কলসী নামের এ নাটকটি ২০০৭ সালে প্রচারিত হয়েছে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনি নাটক নিয়ে কাজ করছেন কেন?
জামাল ভুঁইয়া : খেয়াল করলে দেখবেন, আমার কমবেশি সব নাটক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সাংস্কৃতিক আন্দোলন বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার এ আন্দোলনে কী কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়?
জামাল ভুঁইয়া :অবশ্যই। এ লাইনে সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থনৈতিক সমস্যা। ফলে অনেক সুযোগ থাকার পরও আমি কাজ এগিয়ে নিতে পারিনা। একটা নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাই।
/ডিডি/