তিন দিন আগেই জানা যাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস
প্রকাশিত : ০৩:১১ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ মঙ্গলবার
এক-দুই ঘন্টা নয়, রীতিমতো তিন দিন আগে জানা যাবে কোথায়, কখন আঘাত হানবে ভূমিকম্প। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে এক ধরনের বিশেষ অস্বাভাবিকতা থেকে নির্ভূলভাবে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব। এনিয়ে আরও গবেষণা চলছে। এখন শুধু ঘটা করে ঘোষণার অপেক্ষা। আরও জানাচ্ছেন এম জেড ফেরদৌস।
পৃথিবীতে বছরে গড়ে ৬ হাজার ভূকম্পন হয়। কেবল শ’খানিকের মতো কম্পন টের পাওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে এসেও নৃবিজ্ঞানীরা এই ধ্বংসাত্মক যজ্ঞের কোনোরকম পূর্বাভাস দিতে পারেন না। কেননা যে সিসমোমিটার দিয়ে ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয়, তা দেড়শ’ বছর আগের আবিষ্কার। কিন্তু, প্রাণীকূল কিভাবে আগেভাগে বুঝতে পারে, তা নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। জানা গেছে, ৩৭৩ খ্রিস্টপূর্বে গ্রিসে ভয়ানক ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই গর্তের ইঁদুর, সাপ, সমুদ্রের তিমি পর্যন্ত সে অঞ্চল ছেড়ে গিয়েছিলো।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু জাতীয় মৌল বিজ্ঞান কেন্দ্রের গবেষক সন্দীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আয়নোস্ফিয়ারের সবচেয়ে নিচের স্তরে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলেই বোঝা যায়, কম্পন হবে। উপযুক্ত পরিকাঠামো ব্যবহার করলে এটাও বোঝা যায় যে, ভূ-পৃষ্ঠের কোন্ অঞ্চল কাঁপতে চলেছে।
পৃথিবীর যে অংশে যখন দিন, সেই অংশের উপরের আয়নোস্ফিয়ারে তখন মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা বেশি হয়। যে অংশে রাত, সেখানে কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দেখা যায় রাতেও আয়নোস্ফিয়ারের ডি রিজিয়নে মুক্ত ইলেকট্রন অস্বাভাবিক বেশি, তা হলে বুঝতে হবে সূর্য রশ্মির কারণে নয়, ভূ-অভ্যন্তর থেকে নির্গত র্যাডন গ্যাসের কারণে সেটা হয়েছে। এই র্যাডন গ্যাস ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন খাঁজে জমে থাকে। টেকটনিক প্লেট নড়াচড়া করলে তা বাইরে বেরিয়ে এসে সোজা আয়নোস্ফিয়ারে ডি রিজিয়নে আটকায়। এই গ্যাসের অণু থেকেও ইলেকট্রন মুক্ত হতে থাকে এবং সেখানে মুক্ত ইলেকট্রন অনেক বেড়ে যায়।
আয়নোস্ফিয়ারের যে অংশে এই অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, সেই অংশের নিচে পৃথিবীর কোন দেশ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখেন বিজ্ঞানীরা। সেই দেশে বা তার আশপাশে অবস্থিত টেকটনিক প্লেটেই যে নড়াচড়া হচ্ছে, তা পরিস্কার বোঝা যায় এবং বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারেন, কোথায় কম্পন হবে। আশার কথা হলো, কম্পনের ৭২ ঘণ্টা আগেই এই আভাস দেয়া সম্ভব। এখন কবে নাগাদ এই আভাস পাওয়ার প্রযুক্তি মানুষের হাতে পৌঁছুবে, তা-ই দেখার প্রতীক্ষা।