‘এইও মর্যাদার ব্যবসায়ীরা বাড়তি সুবিধা পাবেন’
প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৮:৪২ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে অথোরাজড ইকোনমিক অপারেটর(এইও) সার্টিফাই প্রোগ্রাম। এ কাজ এগিয়ে নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে এনবিআর। কেননা আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া সহজ করতে পৃথিবীর ৬৭টি দেশ এ প্রোগ্রামে আসতে চায়। যার মধ্যে ১৪টি দেশ এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর ১৩টি দেশে প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রক্রিয়াধীন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও একটি। বাংলাদেশে এনবিআর ২০১৮ সাল থেকেই যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে এ মর্যাদা দেওয়া শুরু করবে। এ মর্যাদা পাওয়া কোম্পানিগুলো আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে পোর্ট, কাস্টমস বা এনবিআরের পরীক্ষা-নীরিক্ষায় মিনিমাম ইন্টারভেনশনের সুযোগ পাবে। এমনকি কোম্পানির বিরুদ্ধে আগে থেকে নেতিবাচক কোন তথ্য না থাকলে স্ট্যাটাস পাওয়া প্রতিষ্ঠানের পণ্য রফতানির সময় পরীক্ষাও করা হবে না। তাতে ব্যব্যসায়ীদের খরচ ও সময় দুই বাঁচবে। ফলে ব্যবসায়ীদের রফতানি প্রক্রিয়ায় সমস্যা কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্যেরও সম্প্রসারণ হবে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন প্রোগ্রামের পরামর্শক, কাস্টম বিশেষজ্ঞ ও এনবিআর এর সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কেমন আছেন?
আবু ইউসুফ: হ্যাঁ, ভালো।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এইও সম্পর্কে যদি বলতেন?
আবু ইউসুফ: অথোরাজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) আসলে একটি সার্টিফাই প্রক্রিয়া। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নিদির্ষ্ট কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে এ স্ট্যাটাস বা মর্যাদা দেওয়া হয়। এইও স্ট্যাটাস পাওয়া প্রতিষ্ঠান আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এ থেকে ব্যবসায়ীরা মূলত কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে?
আবু ইউসুফ: এ স্ট্যাটাস সবাই পাবে না। তবে যারা পাবে তারা শুল্ক বিভাগের কাছে তুলনামূলক বিশ্বস্ত, আমদানি-রপ্তানিকারকসহ বন্দর ও শুল্ক বিভাগে কিছু বাড়তি সুবিধা পাবেন। বন্দর থেকে পণ্য দ্রুত খালাস, অপেক্ষাকৃত কম পরীক্ষা করা, ব্যাংক গ্যারান্টির বাধ্যবাধকতা নমনীয় করা, বাকীতে কার্যক্রম সম্পন্ন করার মত সুবিধা পাবেন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এ স্ট্যাটাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হবে?
আবু ইউসুফ: আমদানি-রফতানিসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকা, অতীত বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও দক্ষতা সন্তোষজক হওয়া, আর্থিক সক্ষমতা, শুল্ক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা, তথ্য বিনিময়, নিজস্ব কার্গো নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রাঙ্গণ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতার মত শর্ত পরিপালন করতে হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বাংলাদেশে তো অনেক কোম্পানি আছে, এইও স্ট্যাটাস দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার পাবে?
আবু ইউসুফ: বাংলাদেশে এর কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। ২০১৮ সাল থেকে এ মর্যাদা দেওয়া শুরু হতে পারে। প্রথমে ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে এ মর্যাদা দেওয়া হতে পারে। ফল ভালো হলে পরে অন্য কোম্পানিগুলোকেও দেওয়া হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একটি প্রতিষ্ঠান কী কী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ স্ট্যাটাস পাবে?
আবু ইউসুফ: প্রথমে কোম্পানিকে এনবিআর এর সংশ্লিষ্ট সেক্টরে আবেদন করতে হবে। আবেদনে ফি হিসেবে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। এরপর এনবিআর যাচাই-বাঁছাই সাপেক্ষে এইও স্ট্যাটাস দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: স্ট্যাটাস পেলে দেশের অভ্যন্তরে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় সুযোগ-সুবিধা পাবে, তো দেশের বাইরে এ সুযোগ পাওয়া যাবে কী না?
আবু ইউসুফ: প্রাথমিকভাবে দেশের বাইরে আমাদের এ সুযোগ হয়তো দেওয়া কঠিন হবে। তবে ধীরে ধীরে দেশের বাইরেও এ সুযোগ পাওযার ব্যবস্থা করা হবে। যে সমস্ত দেশগুলো এইও আছে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হলে এ সুযোগ পাওয়া যাবে। তখন বাইরের দেশগুলো এইও সার্টিফিকেট দেখেই সহজে মালামাল ছেড়ে দিবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের সব বন্দরে এ সুযোগ পাওয়া যাবে কী না?
আবু ইউসুফ: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পরীক্ষামূলক এ প্রকল্প চালু হবে। এরপর পুরোদমে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বন্দরেও এ কার্যক্রম বিস্তৃত হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোন প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা বা সহযোগিতা আছে কী না?
আবু ইউসুফ: বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিওটিও) ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ। সে জন্যও এইও কার্যক্রম চালু করা বাংলাদেশের জন্য আবশ্যক। ২০১৩ সাল থেকে এনবিআর এ বিষয়ে কাজ করে আসছে। তবে গত বছর ডব্লিটিও’র স্বাক্ষর হওয়ার পর এইও ব্যবস্থা চালু করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে গতি আনতেও এটি চালু করার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এইও পাওয়ার ক্ষেত্রে বাঁছাই পর্বে কোন কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আছে?
আবু ইউসুফ: আমাদের কাজ সবে মাত্র প্রশিক্ষণ পর্যায়ে আছে। তাই এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠানকে বাঁছাই করা হয়নি। আগে আমরা এ কাজ পরিপালনে প্রশিক্ষিত হই। তারপর বাঁছাই পর্বে আসি। এ কাজে যে প্রতিষ্ঠানকে এইও দেওয়া হবে, ওই প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি থাকবে এইও বিষয় দেখভাল করার জন্য। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওই প্রতিনিধিকেও আমাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। তাই সব মিলিয়ে একটু সময় লাগবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ধন্যবাদ আপনাকে।
আবু ইউসুফ: আপনাকেসহ একুশে টেলিভিশন পরিবারকে ধন্যবাদ।
এসএইচ/