ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বিটকয়েন কী?

প্রকাশিত : ১১:৫৮ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ বুধবার

বর্তমান সময়ে অনলাইন ভিত্তিক জনপ্রিয় মুদ্রা বিটকয়েন। এছাড়াও আছে ইথিরিয়াম, রিপেল, লাইটকয়েন। তবে সবার থেকে জনপ্রিয় বিটকয়েন।

কিন্তু বিটকয়েন কী? আর কীভাবেই বা কাজ করে বিটকয়েন? আসুন তা জেনে নেয়া যাক।

বিটকয়েন কী?

উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, বিটকয়েন হল এক ধরনের ‘মুদ্রা’ যা দিয়ে অনলাইনে লেনদেন করা যায়। এটিকে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপটোগ্রাফিক কারেন্সি বলা হয়। মূলত এটি হল ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা।

বিটকয়েনের সবথেকে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এটি লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। আর তাই প্রয়োজন হয় না কোন অনুমোদনেরও। আর ইন্টারনেটে লেনদেনকারীদের নিকট খুবই জনপ্রিয় বিটকয়েন।

ইতিহাস

অস্ট্রেলিয়ার এক কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ী সাতোশি নাকামোতো ২০০৮ সালে এই মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। তিনি এ মুদ্রা ব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন নামে অভিহিত করেন।বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন উৎপন্ন হয়।

২১৪০ সাল পর্যন্ত নতুন সৃষ্ট বিটকয়েনগুলো প্রত্যেক চার বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসবে। ২১৪০ সালের পর ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরী হয়ে গেলে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরী করা হবে।

কার্যপ্রণালী

বিটকয়েনের লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। আগেই বলা হয়েছে এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। বিটকয়েন মাইনারের মাধ্যমে যেকেউ বিটকয়েন উৎপন্ন করতে পারে। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটা সবসময় অনুমানযোগ্য এবং সীমিত। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এই সংরক্ষিত বিটকয়েন যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারও একাউন্টে পাঠানো হয় তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রনিক সিগনেচার তৈরী হয়ে যায় যা অন্যান্য মাইনার কর্তৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সাথে গ্রাহকদের বর্তমান লেজার কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে হালনাগাদ হয়।

বিটকয়েন দিয়ে কোন পণ্য কেনা হলে তা বিক্রেতার একাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরবর্তীতে সেই বিটকয়েন দিয়ে পুনরায় পণ্য কিনতে পারে, অপরদিকে সমান পরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনঃনির্ধারন করা হয় যাতে করে বাস্তব মুদ্রার সাথে সামঞ্জস্য রাখা যায়।

সুবিধা-অসুবিধা

অনলাইনে যারা লেনদেন করেন তাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক বিটকয়েন। যাদের বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করার মত সুযোগ নেই বা ক্রেডিট কার্ড নেই তাদের জন্যও ব্যাপক উপকারি এ বিটকয়েন।

তবে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান না থাকা এবং এর কার্যক্রম তদারকি করার কোন সুযোগ না থাকায় অপরাধীদের কাছেও খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিটকয়েন।বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অবৈধ লেনদেনেও ব্যবহৃত হয় বিটকয়েন। জুয়া খেলা বা বাজি ধরা, অবৈধ পণ্য কেনা-বেচা ইত্যাদির লেনদেনে ব্যবহৃত হয় বিটকয়েন।মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

আলোচনা-সমালোচনা

সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এটি বিটকয়েনকে আরও আগিয়ে নিয়ে যাবে। মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি ব্যবহার ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডীয় সরকার বিটকয়েনের গ্রাহকদের নিবন্ধনের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে।

অন্যদিকে অনেক দেশই অবস্থান নিচ্ছে বিটকয়েনের বিরুদ্ধে। দিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশেও বিটকয়েনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবহারকারী বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার আহবান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

তবে যে যেভাবেই দেখুক, বিটকয়েনকে বলা হচ্ছে ‘ফিউচার মানি’।

সূত্রঃ ইন্টারনেট

//এস এইচ এস//