শীতে শিশুর রোগব্যাধি ও প্রতিকারের উপায়
প্রকাশিত : ০৭:৪০ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:০৯ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার
শুধু পল্লীতে নয়, রাজধানী ঢাকাতেও নেমেছে শীত। ঘুম থেকে উঠেই চোখ মেললেই দেখা মেলছে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। শীতের সময়টা অনেকেই উপভোগ্ করলেও শিশুদের বাড়তি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। আক্রান্ত হয় বিভিন্ন রোগে। এ স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে প্রয়োজন একটু বাড়তি সচেতনতা। সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউনেটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা শীতে শিশুর রোগব্যাধি এবং প্রতিকারের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টেলিভিশন: শীতে বেশি অসুস্থ হয় শিশুরা। এসময়ে শিশুরা কি ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়?
ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা: সাধারণ সর্দি ও কাশি থেকে শুরু করে কখনও কখনও নিউমোনিয়া, ব্যাংকি ও লাইটিস, হাঁপানি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা, চর্মরোগে, এ্যাজমায় বেশি আক্রান্ত হয়। আর সঙ্গে সিজোনাল জ্বর আক্রান্ত হয়েছে।
একুশে টেলিভিশন: এসব রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কিভাবে পেতে পারি।
ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা: শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে কম তাপমাত্রার সংযোজন আর ধূলাবালির উপদ্রব, সব মিলিয়েই সৃষ্টি করে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা। তার জন্য প্রয়োজন কিছু সতর্কতা। শীতকালে সব সময় এক রকম তাপমাত্রা থাকে না। সকালের দিকে ঠাণ্ডার পরিমাণ বেশি থাকে। আবার দুপুরের দিকে গরমের পরিমান বেশি থাকে। ফলে একারণে গরম থেকে অনেক সময় শিশুদের ঠাণ্ডা বা সর্দি তৈরি হতে পারে। গরম ও ঠান্ডার পরিমান লক্ষ রেখে শিশুদের গরম কাপড় পরিধান করা উচিত। এছাড়া ঠাণ্ডা অনেক দিন স্থায়ী হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব, বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াখুব বেশি বাতাস আছে এমন স্থানে শিশুদের না নিয়ে যাওয়াই ভাল। সর্দিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: শীতকালে এসব রোগ কেন বেশি দেখা দেয়?
ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা: শীতে প্রধানত বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগ। যদিও এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস। তথাপি বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম আছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় কম কার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাস নালির স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে ভাইরাসের আক্রমণকে সহজ করে। শুষ্ক আবহাওয়া বাতাসে ভাইরাস ছড়াতেও সাহায্য করে। এছাড়া ধূলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা, শুষ্ক বাতাস হাঁপানি রোগীর শ্বাস নালিকে সুরু করে দেয়, ফলে হাঁপানির টান বাড়ে।
একুশে টেলিভিশন: শীতকালীর রোগ এড়াতে কীভাবে সতর্ক হতে হবে?
ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা: শিশু অসুস্থ হলে ও মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে এবং নিয়মিত বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার ঠাণ্ডা না লাগে। তাদের ধুলাবালি থেকেও দূরে রাখতে হবে। শিশু একটানা তিন দিনের বেশি অসুস্থ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে হাত ভাল করে পরিস্কার করতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। খাবার পানি ভাল মতো ফুটিয়ে ব্যবহার করা দরকার।যে কাপড় পরিধান করি না কেন সেটা অবশ্যই পরিস্কার করা দরকার। সময় মতো গোসল করা ত্বকের যত্ন নেওয়া। এগুলো করলে আমার শিশুদের শীতেকালীর রোগ থেকে রক্ষা করতে পারি।।
এছাড় নিউমোনিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে ১৫ দিনের চিকিৎসায়ই শিশু ভালো হয়ে যায়। আর ভাইরাসজনিত জ্বরও তিন থেকে পাঁচ দিনেই সেরে যায়। শিশুকে শীতের পোশাক পরাতে হবে। আর গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। সাধারণ সর্দি, কাশিকে অবহেলা না করারও পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
যদি প্রতিরোধের চেষ্টা সত্ত্বেও সর্দি-কাশি দেখা দেয়, তবু প্রতিরোধের উপায়গুলো চালিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্যারাসিটামল এবং এন্টিহিসটামিন জাতীয় ওষুধ খেলেই যথেষ্ঠ। এটা শুধু রোগের তীব্রতাকে কমাবে না, রোগের বিস্তারও কমাবে। প্রয়োজনে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি দেশজ ওষুধ যেমন- মধু, আদা, তুলসী পাতা, কালিজিরা ইত্যাদি রোগের উপসর্গকে কমাতে সাহায্য করবে।
একুশে টেলিভিশন: আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা: একুশে টেলিভিশনকে ধন্যবাদ।
এসএইচ/