ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ইরানে বিক্ষোভের নেপথ্যে

প্রকাশিত : ১২:৫৭ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ১২:৫৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে দেশটির রাজপথে জনতার ঢল নেমেছে। দেশটির সাতটি শহরে বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার জড়ো হয়ে হাসান রুহানির পদত্যাগ দাবি করেছেন।

একদিকে সর্বকালের সেরা মুদ্রাস্ফীতি অন্যদিকে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার, এ দুয়ে মিলে ইরানের জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। এরইমধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে বেকারত্বের হার ১২.৩ শতাংশেরও বেশি। গত তিন বছরেই দেশটিতে বেকারত্বের হার বেড়েছে ২ শতাংশেরও বেশি।

এমতাবস্থায় সিরিয়া যুদ্ধে বাসার-আল আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছে ইরান সরকার, এমন অভিযোগ এনে ইরানের জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের দাবি আর বিদেশ নীতি নয়, এবার নিজের ঘরের দিকে নজর দিন।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা কেবল হাসান রুহানির বিরুদ্ধেই স্লোগান দিচ্ছেন না, তারা একইসঙ্গে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয়নেতা আয়তুল্লাহ আল খোমেনির বিরুদ্ধেও স্লোগান দিয়েছে। তাঁদের দাবি দেশটির অর্থ কেবল বিদেশের জন্য অস্ত্র কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এই অর্থ বিশ্বজুড়ে শিয়া ধর্ম প্রচারের জন্যও ব্যয় করছেন খোমেনি।

গতকাল দেশটির ইফশান, কারমানশাহ, কোম, হামাদান, তেহরান, রাসাদ ও মাশাদে শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয় কারমানশাহ শহরে। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।  এদিকে অন্য শহরগুলোতেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া দক্ষিণের শহর শিরাজও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাসাদ-এ বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। পরে এ আন্দোলন ক্রমান্বয়ে দেশটির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে সরকারিভাবে দেশটিতে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন ধরণের বিক্ষোভ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। একইসঙ্গে দেশটিতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করা আইনত দণ্ডনীয়।

বিক্ষোভকারীদের একজন প্লেকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়াকালে বলেন, ‘নো টু জেরুজালেম, নো টু গাজা, জাস্ট টু আস’ (আর জেরুজালেম, গাঁজা নয় এবার আমাদের দিকে দেখুন)। আরেকজন বিক্ষোভকারী লিখেন, ‘রিজাইন দ্য পাওয়ার, সেইভ আস’ (ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান, আমাদের বাঁচান)।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন বন্ধ করতে বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটছে না। একইসঙ্গে তারা নতুন করে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তেহরানের গভর্নর জেনারল বলছেন, কোন শহরে বিক্ষোভের কোন অনুমতি নেই। তাই, যারাই আইন ভঙ্গ করে বিক্ষোভ-মিছিল করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে এক ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিক্ষোভের ভিডিও প্রকাশ না করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে ইরানের বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানিয়েছে। একইসঙ্গে দেশটিতে বিরোধীদলগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানায় তারা।

এদিকে সরকারের পক্ষথেকে ডানপন্থী দলগুলোকে দোষারুপ করা হচ্ছে। তাদের দাবি ডানপন্থী দলগুলো এদের লেলিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সরকারের আরেকটি অংশ বলছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদেরকে বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় নামানো হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের দাবি, এ বিক্ষোভের নেপথ্যে আছে, ইরান সরকারের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মোহ। অন্যদিকে তাদের সীমাহীন দুর্নীতি ।

তবে মার্কিন প্রশাসনের বিক্ষোভকারীদের পক্ষে সমর্থন দেওয়ায় অনেকেই আন্তর্জাতিক দিকটির প্রতিই ইঙ্গিত করেছে। এছাড়া মার্কিন প্রশাসন ইরান সরকারকে বিক্ষোভে বল প্রয়োগ না করার হুমকি দিয়েছেন। আর তাদের উপর বল প্রয়োগ করা হলে সরকারকেই তার খেসারত দিতে হবে বলে সতর্ক করে দেন তারা।

সুত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা

এমজে/ এআর