থার্টি ফার্স্টকে ঘিরে ডিএমপির নির্দেশনা
প্রকাশিত : ০৮:৪১ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার
থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে রাজধানী জুড়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ট্রাফিক ডাইভার্শন রুটের পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট ১২টি দিক নির্দেশনা।
শনিবার ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী বৎসরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, এ আনন্দ উৎসব উদ্যাপনের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে থাকে। কতিপয় ব্যক্তি আনন্দের আতিশয্যে পটকাবাজি, আতশবাজি, অশোভন আচরণ, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানোর মাধ্যমে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা/দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়। ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশ্যে অভদ্রজনোচিত আপত্তিকর আচরণ করে থাকে। এ সব নৈতিক মূল্যবোধ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, থার্টি ফাস্ট নাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইউনিফর্মধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য শহরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করবে। সেইসঙ্গে সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েনসহ ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে স্ট্যান্ডবাই থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানস্থলে ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার টেন্ডার ও এ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন রাখা হবে।
এবছর কোন বাসার ছাদেও বর্ষবরণ পার্টি করা যাবে না। এমনকি চার দেয়ালের মধ্যে কোন পার্টি করতে হলে আগে থেকে নিতে হবে ডিএমপির অনুমতি। অনুমতি পেলে সেসব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ডিএমপি। এসব নির্দেশনা মান্য করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুঁশিয়ার করে ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি’র দেওয়া ১২টি নির্দেশনা-
১) ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায়, ভবনের ছাদে এবং প্রকাশ্য স্থানে কোন ধরনের জমায়েত/সমাবেশ/উৎসব করা যাবে না।
২) উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোন ধরনের অনুষ্ঠান বা সমবেত হওয়া যাবে না বা নাচ, গান ও কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
৩) কোথাও কোন ধরনের আতশবাজি/পটকা ফোটানো যাবে না।
৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ধ্যা ৬টার পরে বহিরাগত কোন ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
৫) উপর্যুক্ত সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নাগরিকবৃন্দকে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যবৃন্দকে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে অনুরোধ করা হলো।
৬) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাড়ি নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে নীলক্ষেত এবং শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
৭) গুলশান এলাকায় প্রবেশের জন্য কাকলী ক্রসিং এবং আমতলী ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে। তবে নির্ধারিত সময়ের পর পরিচয় প্রদান সাপেক্ষে এ দু’টি ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।
৮) একইভাবে উপর্যুক্ত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায় যেসব নাগরিক বসবাস করেন না তাদেরকে বর্ণিত এলাকায় গমনের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৯) রাত ৮ টার পর হাতিরঝিল এলাকায় কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।
১০) গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদেরকে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হলো।
১১) মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা মহানগরীর কোন বার খোলা রাখা যাবে না।
১২) ইংরেজি নববর্ষের প্রাক্কালে রাত ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, রেঁস্তোরা, জনসমাবেশ ও উৎসবস্থলে সব ধরনের লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট নগরবাসীর প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
এছাড়াও চলাচলের জন্য নেওয়া কিছু বিশেষ ব্যবস্থা। এগুলো হলো-
১) রাত ৮টা হতে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা-ফিনিক্স রোড ক্রসিং, বনানী ১১নং রোড ক্রসিং, চেয়ারম্যান বাড়ি ক্রসিং, শুটিং ক্লাব, বাড্ডা লিংক রোড, ডিওএইচএস বারিধারা-ইউনাইটেড হাসপাতাল ক্রসিং ও নতুন বাজার ক্রসিং উক্ত এলাকাসমূহে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, তবে উক্ত এলাকা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ক্রসিং ব্যবহার করা যাবে।
২) পলাশী ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং, বক্শী বাজার ক্রসিং, রোমানা চত্বর ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং এবং শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সব ধরনের গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
৩) হাইকোর্ট পয়েন্ট হতে আসা সব ধরনের গাড়ি দোয়েল চত্বর বামে মোড় নিয়ে শহিদুল্লাহ হল হয়ে চাঁনখারপুল ক্রসিং দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে।
৪) কেউ বেপরোয়া, মদ্যপ ও বিপজ্জনক অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না।
৭) সড়ক ব্যবহার সংক্রান্তে যেকোন জরুরি প্রয়োজনে ফোন করুন: ডিসি ট্রাফিক (নর্থ)-০১৭১৩৩৭৩২২৫, এডিসি ট্রাফিক (নর্থ)-০১৭১৩৩৭৩২২৬, এসি ট্রাফিক (গুলশান)-০১৭১৩৩৯৮৪৯৭, এসি ট্রাফিক (উত্তরা)-০১৭১৩৩৯৮৪৯৮, ডিসি ট্রাফিক (সাউথ)-০১৭১৩৩৭৩২২৩, এডিসি ট্রাফিক (সাউথ)-০১৭১৩৩৭৩২২৪, ডিসি (গুলশান)-০১৭১৩৩৭৩১৬৬ ও ডিসি (উত্তরা)-০১৭১৩৩৭৩১৫৬।
এসএইচএস/এসএইচ