ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশিত : ০৬:৪৪ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার

গর্ভবতী হওয়া প্রত্যেক নারীর জীবনে একটি আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। গর্ভবতী নারীরা এ সময় তাদের গুরুজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীর উপদেশ মানতে গিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কারে জড়িয়ে পড়েন এমন প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রায় আসে। এসব ভুল উপদেশ মানতে গিয়ে অনেক সময় মা ও শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গর্ভবতী নারীদের সামান্য ভুলের কারণে জীবন সংঘাত ঘটতে পারে। তাই কোন ধরনের ছোট সমস্যা হলেই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

যেসব কারণে গর্ভবতী নারীদের মৃত্যু ঘটে সেই বিষয়গুলো একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

১) গর্ভাবস্থায় খিঁচুনি রোগ : গর্ভবস্থায় নারীদের মাঝে মাঝে খিঁচুনি উঠতে দেখা যায়। এটি সবচেয়ে মারাত্মক ও গুরুত্বপূর্ণ রোগ। এই রোগে অধিকাংশ নারীর মৃত্যু হয়। এটি সাধারণত গর্ভবস্থার শেষের দিকে বা আট মাসে দেখা দেয়। একে ইংরেজিতে একলাম্পসিয়া বলা হয়।

এছাড়া এসময় রোগীর পা ফুলে যায়। এমনকি সমস্ত শরীর ফুলে যেতে পারে। ওজন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।

২) সেপটিক অ্যাবরশন বা গর্ভপাত পরবর্তী সংক্রমণ ও প্রদাহ : আধুনিক যুগে পরিকল্পিত পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা খুবই সহজলভ্য। তবে অনাকাঙ্খিত বা অপরিকল্পিতভাবে গর্ভসঞ্চার ঘটে যায়। তখন এ অনাকাঙ্খিত সন্তানের বোঝা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য গর্ভপাত করানোর ঝুঁকি নিতে হয়। এতে গর্ভপাতের পর অধিকাংশ মায়ের অত্যাধিক রক্তক্ষরণ, মারাত্মক সংক্রমণ ও প্রদাহে মৃত্যুবরণ করে। আর যারা বেঁচে যায় তারা চিররোগা ও ভগ্নস্বাস্থ্যের শিকার হয়। তাই  সেদিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

৩) গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রক্তস্রাব : গর্ভাবস্থায় ২৮ সপ্তাহের পর মাঝে মাঝে যোনিপথে অতিরিক্ত রক্তস্রাব হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থা হওয়ার পিছনে দেখা যায় দুটি কারণ- একটি হচ্ছে গর্ভফুলে গর্ভস্থ সন্তান নিচে যখন অবস্থান করে এবং অপরটি হচ্ছে গর্ভবতী নারী উচ্চ রক্তচাপ হলে ও প্রসাবে অ্যালবুমিন থাকলে এ ঘটনা ঘটে।

৪) বাধাপ্রাপ্ত প্রসব : প্রসবকালে সন্তান প্রসব হওয়ার পর গর্ভফুল বের হয়ে আসতে আধা ঘণ্টা চেয়ে বেশি সময় পার হলে তাকে বলা হয় রিটেইনড প্লাসেন্টা। এ অবস্থায় রোগীকে কাছাকাছি হাসপাতাল বা মাতৃমঙ্গলে নিয়ে যেতে হবে। গর্ভফুল বের করার জন্য তাকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে তা বের করতে হবে। এ সময় যাতে সংক্রামণ না হয় তার জন্য উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।

৫) প্রসবোত্তর সংক্রমণ ও প্রদাহ : প্রসবোত্তর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা খুব সহজ। প্রতিটি শহর, গ্রাম ও উপজেলা পর্যায়ে টিবিএর ব্যবস্থা করা হলে এবং ধাত্রীদেরকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রসব সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিকার-

গর্ভবতী নারীর এসব জটিলতা পরিহার করার জন্য একজন গর্ভবতীকে নিয়মিতভাবে অ্যান্টিনেটাল চেকআপ করাতে হবে। উপযুক্ত অ্যান্টিনেটাল চেকআপ ও প্রসবের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা যায়।

 লেখাটি অধ্যাপক ডা. সুলতানা জাহানের হেলথ ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া হয়েছে।

কেএনইউ/এসএইচ