আ. লীগের স্বপ্ন দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করা
প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:২১ এএম, ৭ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার
ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। ইতোপূর্বে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমে সব সময় সোচ্চার থাকেন তিনি। মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তার কড়া সমালোচনায় অনেকের গাত্রদাহ হলেও আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মী সমর্থকদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। নতুন বছরে তার রাজনৈতিক ভাবনা জানিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ২০১৮ সালকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কীভাবে দেখতে চান?
ড. হাছান মাহমুদ: ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে ২০১৮ সাল নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্যও ২০১৮ সাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচনী প্রচারণা প্রকৃতপক্ষে বছর জুড়েই হয়।
ঘোষণা দিয়ে না হলেও ২০১৮ সালের প্রথম থেকেই এলাকায় এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রচারণা শুরু করবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দল আছে। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে কী তা প্রভাব ফেলবে না?
ড. হাছান মাহমুদ: তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নির্বাচনের আগে হয়। এই মুহুর্তে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছেনা। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। দলটি সব সময় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। প্রার্থীর এলাকায় সংযোগ কেমন, দলের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা কেমন সব বিবেচনায় আনা হয়। এসব বিবেচনায় মনোনয়ন বোর্ড যাকে মনোনয়ন দিবে সবাই তার পক্ষে কাজ করবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করেনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ গ্রহণ নিয়ে কী বলবেন?
ড. হাছান মাহমুদ: আমি মনে করি, ২০১৪ সালের ভুল থেকে বিএনপি শিক্ষা নিবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ না করা একটি ঐতিহাসিক ভুল ছিল। এই ভুল তাদের দলকে বিপর্যের মুখে ফেলেছে। তারা যত কথাই বলুক, আমি মনে করি বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে যে সরকার ব্যবস্থা থাকবে বিএনপি সেই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে আসবে। যদি না আসে তাহলে তারা অস্তিত্বের সংকটে পড়বে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারধীন দুর্নীতির মামলায় কেমন রায় প্রত্যাশা করছেন?
ড. হাছান মাহমুদ: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দায়ে বিচার চলছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। মন্তব্য বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। তবে গণমাধ্যমের কারণে বিচার সম্পর্কে যতটুকু জানতে পারছি তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে, তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এতিখানার নামে তিনি অর্থ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু তা দিয়ে কোনো এতিমখানা স্থাপন করা হয়নি। দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি এতিমদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়ছে। এর দায়ভার সরকারের কাঁধেই বর্তায়। আপনি কী বলেন?
ড. হাছান মাহমুদ: গত নয় বছরে দেশ বদলে গেছে। আমি মুখের কথায় বললে হবেনা। দেশ যে বদলে গেছে তার সবচেয়ে বড় দালিলিক প্রমাণ মানুষের মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়েছে। ইতোমধ্যে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে দুই দশমিক ২ গুণ। অর্থাৎ একজন মানুষ ২০০৮ সালে তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে যে পণ্য ক্রয় করতে পারত এখন সেই মানুষ তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে তার দুই দশমিক ২ গুণ বেশি পণ্য ক্রয় করতে পারে। এটি আমার বক্তব্য নয়। এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, অর্থনৈতিক সংস্থা, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক তাদের পরিচালিত গবেষণায় বের করে এনেছে। অনেকে বলছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই দ্রব্যমূল্য বছর বছর কম বেশি বাড়ে। দেখতে হয় দ্রব্যমূল্য বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে কিনা। দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণ সবদেশেই মুদ্রাস্ফীতি হয়। পৃথিবীর আজকের যে অর্থনৈতিক অবস্থা সেটি যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। ১৯৪৪ সালে যখন বাংলায় দুর্ভিক্ষ হয় তখন এক টাকায় কয়েক কেজি চাল পাওয়া যেত। এখন এক টাকায় চাল পাওয়া যায়না। তখন না খেয়ে মানুষ মারা যেত। এখন কিন্তু না খেয়ে মানুষ মারা যায়না। অর্থাৎ, এক টাকায় চাল পাওয়া গেলেও মানুষের কাছে এক টাকা ছিলনা। বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে তেমনি ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আয় তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু ক্রয় ক্ষমতাতো তিনগুণ বাড়েনি। কেন?
ড. হাছান মাহমুদ: মানুষের আয়ের সাথে মুদ্রাস্ফীতির কারণে পণ্যের মূল্য বেড়েছে। আয় বেড়েছে তিনগুণ আর ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে ২ দশমিক দুই গুণ। সেই তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি।
একজন রিক্সাওয়ালা আগে আয় করত ২০০ টাকা। আর এখন ঢাকা শহরে একজন রিক্সাওয়ালা দৈনিক এক হাজার টাকা আয় করে। গ্রামের রিক্সাওয়ালারা আয় করে কমপক্ষে ৬০০ টাকা। আগে একজন রিক্সাওয়ালা তার দৈনিক আয় দিয়ে পাঁচ- ছয় কেজি চাল কিনতে পারত। আর এখন কিনতে পারে পনের কেজি চাল। এটিই সরকারের উন্নয়ন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা কেমন সম্ভাবনাময়?
ড. হাছান মাহমুদ: অব্যাহতভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে পৃথিবীর প্রথম দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। খুব শীঘ্রই এটি প্রথম স্থানে উন্নীত হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের এই উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমি-আপনি কিন্তু এই উন্নয়ন হঠাৎ করে বুঝতে পারবনা। কারণ, আমরা সার্বক্ষণিক দেশে আছি বা চোখের সামনে এই পরিবর্তন ঘটছে। আজ থেকে নয় বছর আগে কাজের জন্য যিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন, তিনি যখন বিদেশ থেকে আসার সময় বিমান অবতরণ করার আগে বিমান থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার দেখবেন তিনি তখন হঠাৎ ধাক্কা খাবেন। তিনি যখন গ্রামে যাবেন তখন অবাক হবেন। কারণ, তিনি গ্রামে কয়েকটা আধপাকা বাড়ি দেখে গিয়েছিলেন।
আর এখন সব পাকা বাড়ি। রাস্তা ঘাট পাকা পরিচ্ছন্ন। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আছে। গ্যাস সংযোগ এখন অজপাড়া গাঁয়েও যাচ্ছে। আজ থেকে নয় বছর আগের ভিডিও চিত্র আর আজকের চিত্র সরাসরি বিশ্লেষণ করলেই পার্থক্যটা বুঝা সম্ভব হবে। আজকের চেহারাগুলো অনেক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। পোশাক অনেক পরিপাটি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে আপনার নিজের এলাকা চট্টগ্রামের রাজনীতিকে কীভাবে সাজাতে চাচ্ছেন?
ড. হাছান মাহমুদ: ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের জনগণ যেভাবে আমাদের সমর্থন দিয়েছে, প্রতিটা আসন আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে, আমি মনে করি আগামী নির্বাচনেও সেই ধারা বজায় থাকবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: নতুন বছরে জনগণের কাছে কী প্রত্যাশা করছেন?
ড. হাছান মাহমুদ: জনগণের কাছে আমাদের প্রত্যাশা নয়, বরং নিবেদন। সেটি হচ্ছে, আজকে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে। এই অভিযাত্রাকে যদি অব্যাহত রাখতে হয় আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আনতে হবে। যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই এগিয়ে চলা স্তব্ধ হয়ে যাবে। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশকে ওয়েলফেয়ার স্টেটে রূপান্তরিত করা। সেই লক্ষ্যেই আমরা নানা ধরনের ভাতা চালু করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা, পঙ্গু ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ সহ নানা ধরনের ভাতা চালু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতিটি ইউনিয়নে শতকরা সাত থেকে আট জন লোক এসব ভাতা পাচ্ছে। অন্য কেউ ক্ষমতায় আসলে এসব ভাতা চালু থাকবে না। আজকে অনেকে জানে না, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬০ জন করে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি নিজেরা যত টাকা সঞ্চয় করেন, সরকার ততো বা তার বেশি টাকা তাদের তহবিলে জমা দেন। আমার নিজের নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনীয়াতে প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ধরনের সমিতি আছে। গত কয়েক বছরে তারা পৌনে চার কোটি টাকার মত জমা করেছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে সাত কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ টাকা দেওয়া হয়েছে। এই দেশের মানুষ কী কখনো শুনেছে বা ভেবেছে, তারা টাকা জমা করলে সরকার সেখানে আরো দ্বিগুণ টাকা দিবে! এটা কারো স্বপ্নে ছিলনা, কারো দাবি ছিলনা। যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকে এসব বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের যে অভিযাত্রা, এগিয়ে চলা তা থেমে যাবে। ন`বছর আগে ফিরে গেলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিএনপি মানে জ্বালাও পোড়াও, বিএনপি মানে পেট্রোল বোমা, বিএনপি মানে হাওয়া ভবন, বিএনপি মানে তারেক জিয়া। আওয়ামী লীগের গণবান্ধব চেহারার সাথে বিএনপির বীভৎস চেহারা মিলিয়ে দেখলে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের অনেক্ষণ সময় দিয়েছেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।
ড. হাছান মাহমুদ: আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের রাজনৈতিক সাংবাদিকতা দীর্ঘজীবী হোক।
এএ/টিকে