‘জাতির প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত ছাত্রলীগ’
প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৪০ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এ ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন- এককথায় দেশের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন সময়ের বিবর্তনে ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য এখন কিছুটা হলেও ম্লান। জনমনে প্রশ্ন- সেই ছাত্রলীগ এখন কোথায়? তবে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব এই অভিমত মানতে নারাজ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছাত্রলীগ অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। জাতির প্রয়োজনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে এমনকি জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সত্তরতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান।
একুশে টিভি অনলাইনঃ ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সফলতা-ব্যর্থতার জায়গা থেকে নিজের নেতৃত্বকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এসএম জাকির হোসাইন : ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নয়; একজন কর্মী হিসেবে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। চেষ্টা করছি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ সংগঠনটির সঙ্গে থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যেতে। সফলতা ব্যর্থতার মূল্যায়ন আমার নেতা-কর্মী ভাইদের কাছে। তারা যেভাবে মূল্যায়ন করবেন আমি মাথা পেতে নেবো।
একুশে টিভি অনলাইনঃ ছাত্রদের কল্যাণে কি কি কর্মসূচি নিয়েছেন?
এস এম জাকির হোসাইন : দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। স্বাভাবিক নিয়মেই সাংগঠনিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাষ্ট্রের ও জনকল্যাণমূলক সব কাজ আমরা করি। ইতোমধ্যে আপনারা খেয়াল করেছেন আমরা ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সক্রিয় থেকেছি। যদিও বা এটি আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সাতটি কলেজের ভর্তি আন্দোলন ও ফলাফলের জন্য আন্দোলনে আমরা সরাসরি তাদের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছি। খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা অনেক গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। অনেকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। বন্যা দুর্গত এলাকায় ও রোহিঙ্গাদের মাঝে টানা ত্রান ও ওষুধ বিতরণ করেছি। ছাত্রলীগ নিজ উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচী, রক্ত দান কর্মসূচী, শীতবস্ত্র বিতরন কর্মসূচী, শিক্ষা উপকরন কর্মসূচি পালন করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগের আদর্শ সংবলিত পুস্তিকা, গবেষণা পত্র ও নানা ধরনের প্রকাশনা বিতরন করছি। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করছি। এছাড়া ছাত্রলীগ দেশ ও জাতির প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যেকোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে বদ্ধ পরিকর।
একুশে টিভি অনলাইনঃ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল অতীত থাকলেও এখন তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন। আপনি কি বলবেন?
এস এম জাকির হোসাইনঃ আমি এ কথার সঙ্গে একদম একমত নই। স্থান, কাল, পাত্রভেদে আন্দোলনের ধারা হয়তো পরিবর্তন হয়। তার মানে থেমে যাওয়া নয়। ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটের কথা ধরুন। মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়নের চেষ্টা যখন করা হচ্ছিল তখন অনেক সিনিয়র নেতা চুপ করে থাকলেও ছাত্রলীগ তখন রাস্তায় নেমেছিল। ২০১৪ সালে জামায়াত- বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের সময় তা প্রতিহত করেছিল ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। জাতির প্রয়োজনে যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে ও জীবন বাজি রাখতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত।
একুশে টিভি অনলাইনঃ বিবাহিত, ২৯ উর্দ্ধ ও অছাত্ররা ছাত্রলীগ করতে পারবে না-সংগঠনের এমন নির্দেশনা তৃণমূলে কেউ মানছে না। এটা নিয়ে কী বলবেন?
এসএম জাকির হোসাইনঃ কেউ মানছে না, তা ঠিক নয়। বরং বলি, কেউ মানছে, কেউ মানছে না। আসলে যখন আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করি তখন এসব বিবেচনায় রেখেই নির্বাচিত করি। তখন তার ছাত্রত্বও থাকে। বয়স ২৯ এর নিচে থাকে। অবিবাহিত থাকে। কিন্তু দায়িত্ব পালন করাবস্থায় ২৯ অতিক্রম করে। ছাত্রত্ব শেষ হয় ও বিবাহিত হয়।
একুশে টিভি অনলাইনঃ সঠিক সময়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করলে তো এ জটিলতা হওয়ার কথা না।
এস এম জাকির হোসাইনঃ হ্যাঁ, আসলে সেটাই নিয়ম। গঠনতন্ত্রেও সেই নির্দেশনা আছে। কিন্তু যেহেতু এটি বড় সংগঠন সেহেতু অনেক ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় সঠিক সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি, এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে বহু তারকা ছিলেন। তারা কিন্তু পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে বা আওয়ামী রাজনীতিতে জায়গা করে নিতে পারেননি। এমন অনেক উদাহরণ আছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
এস এম জাকির হোসাইনঃ আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না।
একুশে টিভি অনলাইনঃ দেশের অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর চাইতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আলাদা বিশেষত্ব কী?
এস এম জাকির হোসাইনঃ অহংকার করেই বলছি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো দিক দিয়েই তুলনা চলে না। ছাত্রলীগ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও সর্ববৃহৎ সংগঠন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিন গর্ব করে বলেছিলেন, `ছাত্রলীগের ইতিহাসই বাঙালির ইতিহাস।` তাই ছাত্রলীগের সঙ্গে অন্যদের তুলনাই চলে না।
অন্য সংগঠন যখন কথা বলে কিংবা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে দায় সারতে চায়, ছাত্রলীগ তখন মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত যখনই জাতির প্রয়োজন হয়েছে, তখনই মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ ইতিহাসের সাক্ষী নয়, ইতিহাসের নির্মাতা। হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য নিয়ে গোপনে ছাত্রলীগ কাজ করে না। বরং প্রকাশ্যে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ এখানে আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার যেকোনো ছাত্র এই সংগঠনের কর্মী, সদস্য বা নেতা হওয়ার সুযোগ রাখে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হলে সিট বাণিজ্যসহ নানা ধরণের অভিযোগ অনেক সময় পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কি বলবেন?
এসএম জাকির হোসাইনঃ দেখুন, কেউ যদি জঙ্গি হয় সেটা তো ইসলামের দোষ না। তেমনি ছাত্রলীগের কোনো একজন যদি অন্যায় করে, তা ছাত্রলীগের দোষ না। আজ পর্যন্ত আমরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নিয়েছি। যেহেতু ছাত্রলীগ শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন, সেহেতু অনেকে ছাত্রলীগের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করতে চায়। কিন্তু ছাত্রলীগ এ ব্যাপারে সচেতন।
একুশে টিভি অনলাইনঃ আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভূমিকা কেমন থাকবে?
এস এম জাকির হোসাইনঃ এ বছর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করব। ছাত্রলীগের ভাইয়েরা অতীতের ন্যায় যে কোন নাশকতা প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে।
একুশে টিভি অনলাইনঃ নতুন বছরে কী প্রত্যাশা রাখছেন?
এস এম জাকির হোসাইনঃ পেট্রল সন্ত্রাসের নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবার বিদেশে প্রচুর অর্থ পাচার করেছে। এটি শুধু আমাদের কথা নয়, বরং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। সৌদি যুবরাজরা তাদের বক্তব্যে এ কথা জানিয়েছেন। আমরা চাই দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। পাশাপাশি এমন অপরাধের দায়ে খালেদা জিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
একুশে টিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এসএম জাকির হোসাইনঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সব নেতা কর্মী ভাই বোনদের জানাই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
একে// এআর