সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার চার্টার্ড একাউন্টেন্ট
সোলায়মান হোসেন শাওন
প্রকাশিত : ১২:৪৮ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১০:০১ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার
চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (সিএ) হচ্ছেন একজন হিসাববিদ যিনি ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন হিসাব সংরক্ষণ, নিরীক্ষণ, অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা এবং কর সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। আর এই পেশাটির নামই হচ্ছে চার্টার্ড একাউন্টেন্সি।
চাটার্ড একাউন্ট্যান্টরাই সর্বপ্রথম পেশাজীবী যারা যারা একটি পেশাজীবী সংগঠন তৈরি করেছিল। ১৮৫৪ সালে তৎকালীন ব্রিটেনে প্রতিষ্ঠিত হয় এ সংগঠনটি। বাংলাদেশে চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের সর্বোচ্চ সংগঠন ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ বা আইসিএবি। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অধ্যাদেশ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি। বাংলাদেশে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট উপাধি প্রদান করার ক্ষমতা রাখে একমাত্র এই সংগঠনটি।
ক্যারিয়ার হিসেবে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এর নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্ল্যায়েন্স বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ খাইরুল আলম,এফসিএ।
শুরুর ধাপ
সিএ এর শুরুর বিষয়ে খাইরুল আলম বলেন, সিএ পড়াশুনার দুইটি ধাপ। থিওরিটিক্যাল ধাপ এবং ব্যবহারিক ধাপ। দুইটি ধাপেই একই সঙ্গে পড়াশুনা করতে হবে। থিওরিটিক্যাল ধাপে তিনটি লেভেলে মোট ১৮টি বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর ব্যবহারিক ধাপে একজন শিক্ষার্থী আর্টিকেলশিপ সম্পন্ন করতে হবে। একাডেমিক পড়াশোরার ওপর ভিত্তি করে আর্টিকেলশিপ হতে পারে দুই থেকে চার বছর।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে অথবা স্নাতক সম্পন্ন করেও সিএ পড়াশোনা শুরু করা যাবে।
শুরুতেই একটি সিএ ফার্মে যুক্ত হতে হবে শিক্ষার্থীকে। শিক্ষানবিশকাল শেষ হলে পাওয়া যাবে নিবন্ধন। নিবন্ধন পাওয়ার দিন থেকেই শুরু হবে আর্টিকেলশিপ। আর্টিকেলশিপ এর মেয়াদ ১০ মাস পূর্ণ হলে পরীক্ষার জন্য অংশ নিতে পারবেন একজন শিক্ষার্থী। নলেজ, এপ্লিকেশন এবং এডভান্স; এই তিনটি লেভেলে পরীক্ষা দিতে হবে। বছরে জুন এবং ডিসেম্বর দুই মাসে প্রতি সেশনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
খরচ
সিএ পড়াশুনায় তেমন একটা খরচ নেই বলেই জানান মোহাম্মদ খাইরুল আলম। সিএ ফার্মে যুক্ত হতে কোন খরচ নেই। তবে নিবন্ধনের জন্য এককালীন দিতে হবে ৩০হাজার টাকা। কোন বাৎসরিক ফি নেই। দিতে হবে শুধু পরীক্ষার ফি। নলেজ লেভেলের প্রতি বিষয়ের জন্য ১৩শ টাকা, এপ্লিকেশন লেভেলে তিন হাজার টাকা এবং এডভান্স লেভেলে কেস স্টাডি ছাড়া প্রতি বিষয়ের জন্য দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। কেস স্টাডি পরীক্ষার জন্য খরচ হবে ১০ হাজার টাকা।
ডিগ্রি অর্জন
সফলতার সঙ্গে আর্টিকেলশিপ সম্পন্ন করতে পারলে একজন শিক্ষার্থী প্রথমে পাবেন সিএ(সিসি) উপাধি। এর অর্থ ওই শিক্ষার্থী সিএ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এ ডিগ্রি পেতে থিওরিটিক্যাল ধাপ সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে সিএ কোর্স পাশ করতে হলে সম্পন্ন করতে হবে থিওরিটিক্যাল ও ব্যবহারিক দুইটি ধাপই। এ দুইটি ধাপ সম্পন্নকারী পাবেন “এসিএ” বা “এসোসিয়েট চার্টার্ড একাউন্টেন্ট” উপাধি। ‘এসিএ’ উপাধিধারী ব্যক্তি এরপর আইসিএবি এর সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এসিএ হিসেবে পাঁচ বছর অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে এরপর হওয়া যাবে “এফসিএ” অথবা ফেলো চার্টার্ড একাউন্টেন্ট।
আয়
মোহাম্মদ খাইরুল আলম এফসিএ বলেন, “বাংলাদেশে ক্যারিয়ার হিসেবে সিএ অনেক ভাল। অনেকক্ষেত্রেই তা এসিসিএ এর থেকেও ভাল। এখানে এসিএ হিসেবে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাল বেতনের চাকরি পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ অংকটা অর্ধ লক্ষের ঘরে”।
“এছাড়াও সিএ পড়াশোনা করার সময় থেকেও সিএ ফার্ম থেকে একটি সম্মানি পাওয়া যায়। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পাবেন মাসিক কমপক্ষে তিন হাজার টাকা। এরপর থেকে প্রতি বছর সম্মানি বাড়বে ৫০০ টাকা করে। অর্থ্যাৎ চতুর্থ বর্ষে এসে একজন শিক্ষার্থী পাবেন চার হাজার পাঁচশ টাকা।
আইসিএবি থেকে প্রকাশিত এক হিসেব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেলো সিএ সদস্য আছেন ৯৭৩ জন। আর এসোসিয়েট সিএ সদস্য আছেন ৬১০ জন। আর মোহাম্মদ খাইরুল আলম বলেন,”নিবন্ধিত শিক্ষার্থী আছেন ২৫ হাজারেরও বেশি”। অর্থ্যাৎ ক্যারিয়ার হিসেবে সিএ যে একটি সম্ভাবনাময়ী ক্ষেত্র তা পরিষ্কার।
এসএইচ/