শাবনূর হাত ধরে আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন: শাহের খান
প্রকাশিত : ০৩:২৪ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:৫৪ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
চিত্রনায়ক শাহের খান। একজন স্বপ্নবাজ তরুণ। তার প্রিয় মানুষ প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও নায়িকা শাবনূর। এক সময় তাদের ছবি দেখে দেখেই দিন পার হতো তার । তাদের মতো গুণী শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যুক্ত হন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। নিজেকে তৈরি করার জন্য শিখেন ড্যান্স ও ফাইট।
শাহের প্রথম চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন প্রিয় নায়িকা শাবনূরকে নিয়েই। কিন্তু চলচ্চিত্রটির কাজ চলাকালে হঠাৎ মারা যান পরিচালক এম এম সরকার। বিপাকে পড়ে যান শাহের খান। বহু টানাপোড়েনের পর শেষ হয় ছবির কাজ।
অবশেষে ৫ বছর পর আগামী ১২ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘পাগল মানুষ’। একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ছবির পেছনের গল্প জানান শাহের খান। সেই সঙ্গে উঠে আসে তার ভালো লাগা, স্বপ্ন ও চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনার বিষয়গুলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক আউয়াল চৌধুরী ।
ইটিভি অনলাইন: কেন চলচ্চিত্রে আসলেন?
শাহের খান: আসলে চলচ্চিত্রটা আমার স্বপ্ন। নিজের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে এর সঙ্গে যুক্ত হই। আমি শাবনুর-সালমান শাহ এর ভীষণ ভক্ত। তাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তারা আমার স্বপ্নে এসে দেখা দিতেন। সব সময় এটা নিয়েই ভাবতাম। বলা চলে ধ্যানজ্ঞান একমাত্র চলচ্চিত্র। তারপর চিন্তা করি শুধু স্বপ্ন দেখলে তো হবে না। কাজ শুরু করতে হবে।
ইটিভি অনলাইন: কিভাবে কাজ শুরু করলেন?
শাহের খান: যখন চিন্তা শুরু করি আমাকে কাজ শুরু করতে হবে তখন সঙ্গে সঙ্গে সব দিকে যোগাযোগ করতে লাগলাম। আমার এক পরিচিতের মাধ্যমে পরিচালক এম এম সরকারের সঙ্গে কথা বলি। তারপর তার সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে পছন্দ করলেন। এম এম সরকার অনেক বড় মাপের একজন ডিরেক্টর। কথা বলতে বলতে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। এক সময় তিনি বললেন ঠিক আছে আস, তোমাকে নিয়ে ছবি করবো। তখন আমার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে আমার স্বপ্নের রানী শাবনূরের নাম উঠে এলে খুব এক্সাইটেড হয়ে যাই। প্রিয় নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে কাজ করবো এটা আমার জন্য বিশাল পাওয়া।
ইটিভি অনলাইন: শুটিংয়ে শাবনূরের সঙ্গে মানিয়ে নিলেন কীভাবে?
শাহের খান: শুটিং যখন শুরু হয়, বলা যায় তখন আমি একেবারে অনভিজ্ঞ। শাবনূর আমাকে হাত ধরে ধরে শট বুঝিয়ে দিতেন। কিভাবে কোন এঙ্গেলে দাঁড়াতে হবে সেটা শিখিয়ে দিতেন। তার অসম্ভব সহযোগিতা ছিল। এছাড়া এম এম সরকার একজন হিট ডিরেক্টর। তিনিও আমাকে কাজের ধরণ বা কোনো কিছু না বুঝলে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতেন। মূলত তাদের সহযোগিতায় আমি ভালোভাবে কাজ করতে পেরেছি।
ইটিভি অনলাইন: ৫ বছর পর আপনার স্বপ্নের ছবি মুক্তি পাচ্ছে, এত দেরি হলো কেন?
শাহের খান: ছবির কাজ আমরা খুব ভালোভাবেই করছিলাম। ঠিক এ সময় হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমার পরিচালক এম এম সরকার মারা যান। তার মৃত্যুতে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কি করবো, এর কাজ কিভাবে শেষ করবো? খুব টেনশন করছিলাম। তখন ইউনাইটেড হাসপালে এম এম সরকারের সহকারী পরিচালক বদিউল আলম খোকন ভাই আমার হাত ধরে বললেন চিন্তা করো না। আমি তোমার ছবির কাজ শেষ করে দেবো।
ইটিভি অনলাইন: পরিচালক বদিউল আলম খোকন দায়িত্ব নেওয়ার পরও কেন দেরি হলো?
শাহের খান: আসলে এমন কিছু জটিলতা ছিল যেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধা করা সম্ভব ছিল না। ফলে দেরি হয়েছে। এরপর শাবনূর অস্ট্রেলিয়া গেলেন। আমাদের ছবির কাজ তখন ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছিল। বাকি কাজের জন্য আটকে রইলাম। শাবনূরও নানা ঝামেলার মধ্যে ছিলেন। এছাড়া ছবিটা শেষ করার ক্ষেত্রে আরও কিছু সমস্যা তৈরি হয়। সবমিলে আমি কাজ শেষ করার জন্য লড়াই করতে থাকি। আমি শপথ করি এই ছবি রিলিজ না হলে আমি নতুন কোনো মুভিতে কাজ করবো না। তাই দীর্ঘ ৫ বছর অপেক্ষা করেছি। নানা ধরণের লড়াই করেছি। শাবনূর ও বদিউল আলম খোকন ভাই’র সহযোগিতায় ছবিটা এখন মুক্তি পাচ্ছে। অনেক নতুন ছবি করার সুযোগ এসেছিল কিন্তু করিনি। এই ছবি রিলিজ দেওয়া নিয়ে আমার একটা জিদ ছিল।
ইটিভি অনলাইন: সামনে কি আপনার নতুন কোনো ছবি আসছে?
শাহের খান: হ্যাঁ, আমি খুব শিগগিরই নতুন ছবির কাজ শুরু করছি। ‘পাগল মানুষ’ ছবির জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছি। এই ছবিটা মুক্তি পেলেই নতুন ছবির কাজ নিয়ে মাঠে নামবো। তখন সবাইকে জানাবো। এই মুহেুর্তে আমি ‘পাগল মানুষ’ নিয়েই ব্যস্ত আছি। আশা করি ছবিটি খুব ভালো যাবে। চলচ্চিত্রে এসেছি কাজ করার জন্য। এটা তো আমার স্বপ্ন। তাই এখান থেকে পিছু হঠার কোনো ইচ্ছে নেই। মাঝখানে হয়ত অনেকগুলো বছর চলে গেছে। আশা করি সামনে পথ চলায় সবাই আমায় সহযোগিতা করবে।
ইটিভি অনলাইন: ছবি তো মুক্তি পাচ্ছে। এখন কেমন লাগছে…
শাহের খান: অসম্ভব রকমের ভালো লাগছে। আমার এই মুভিটির জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেকেই বলেছিল এর আশা ছেড়ে দিয়ে নতুন ছবি কর। কিন্তু আমি রাজি হইনি। এখন ছবিটি ১২ জানুয়ারী, শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে। এটা আমার জন্য বিশাল আনন্দের। আর দর্শকদের উদ্দেশ্য বলবো, আপনারা ছবিটি দেখতে হলে আসবেন। এটি একটি ভালো গল্পের ছবি। ভালোবাসার ছবি। আপনারা ছবিটি দেখে আনন্দ পাবেন। আরো ভালোভালো কাজ করতে চাই। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। এটাই আমার প্রত্যাশা।
এসি/ এআর