‘আর বিয়ে নয়, হুমায়ূনের স্মৃতি আকড়ে বাচঁতে চাই’
প্রকাশিত : ০৭:০৭ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১১:৫৭ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার
হুমায়ূন আহমেদের রেখে যাওয়া স্মৃতি ও তার দুই সন্তানকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে চান জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। নতুন করে সংসার বাধার চিন্তা নেই তাই প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রীর। হুমায়ূনের অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে হুমায়ূন আহমেদকে পৌঁছে দিতে চান শাওন। সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন: হুমায়ূন স্যার ছাড়া কেমন কাটছে আপনার সময়?
মেহের আফরোজ শাওন : স্বামীকে হারিয়ে একজন স্ত্রী যেমন থাকে শাওন ঠিক তেমন আছে। আমি হুমাযূনকে প্রতিটা মুহুর্ত অনুভব করি, স্মরণ করি। এখনও অনুভব করি সে আমার সঙ্গেই আছেন। সারাদিন কাজে ব্যস্ত সময় পার করার পর আমি যখন রাতে রুমে যাই তখন মনে হয় এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। আমার মনের কথা বলার মতো কোন মানুষ নেই। তখন অনেক শূণ্যতা অনুভব করি। তবে আমার দুই সন্তান আমার কাছে আসলে আমি সব শূন্যতা ভুলে যাই। আমি আমার সন্তানদের বলি তোমাদের যখন বিয়ে বা সংসার হবে তখন কিন্তু আমি তোমাদের কাছে থাকবো।
একুশে টিভি অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদবিহীন বাকিটা সময় কিভাবে পার করবেন ? নতুন করে সংসার করার চিন্তা আছে?
মেহের আফরোজ শাওন : আমি মনে করি না যে, হুমায়ূন মারা গেছেন। সব সময় আমার কাছে থাকেন। আমাকে এখনও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন। আমি কীভাবে চলব। কীভাবে সন্তানদের লালন পালন করব। বিয়ে করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমি আমার দুই সন্তান ও পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের বাকিটা সময় পার করতে চাই। তিনিই আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। আমার কেন যেন এখনো বিশ্বাস হয় না যে, হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে নেই।
একুশে টিভি অনলাইন: দুই ছেলেকে নিয়ে কেমন আছেন?
মেহের আফরোজ শাওন : আগের নিয়মের এতটুকু ব্যতিক্রম হয়নি। আগের নিয়মই বহাল আছে। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে যে নিয়ম ছিল বাসার দরজা সব সময়ই খোলা থাকত। সেই নিয়মেই বাসার দরজা খোলা থাকে। এখন দুই সন্তান ও সাহিত্যের জগৎ আর নুহাশ পল্লীর দেখভাল করা নিয়েই সময় কাটছে। হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দুটি সন্তান দিয়ে গেছেন। বড়টা হয়েছে ওর বাবার মতো। কম কথা বলে। কিন্তু মাথায় দারুণ বুদ্ধি। মাঝে মাঝে আমাকে এমন সব প্রশ্ন করে বসে যে, আমি অবাক হয়ে যাই। ভাবি হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে ছেলের মুখে বুদ্ধিদীপ্ত সব প্রশ্ন শুনে যারপরনাই অবাক হতেন। ছেলেরা আমাকে একটুও মন খারাপ করতে দেয় না। বিশেষ করে নিষাদ যেন সারাক্ষণই আমাকে হাসিমুখে দেখতে চায়। নিনিতের আবদার বেশি। সকাল থেকে সন্ধ্যা… একটু রাত অবধি ছেলেদের নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দারুণ বস্ত সময় কাটে আমার।
একুশে টিভি অনলাইন: বর্তমানে কী করছেন?
মেহের আফরোজ শাওন : বাবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছি। যদিও আমার কাজের ধারার সঙ্গে বাবার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধারা একরকম নয়। তবুও নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম। বাবার অনুরোধ ফেলতে পারিনি। আমার মায়ের একটি পত্রিকা আছে। সেখানেও মাঝে মাঝে সময় দেয় মাঝে মাঝে।
একুশে টিভি অনলাইন: সামনে বই মেলা, হুমায়ূন আহমেদ বেচেঁ থাকলে নতুন কি বই আসতো ?
মেহের আফরোজ শাওন : হুমায়ূন আহমেদ যেসব বই লিখেছেন তার অধিকাংশ নাম রবি ঠাকুর ও কাজী নজরুলের বিভিন্ন গল্প বা উপন্যাস থেকে নেওয়া। তিনি যদি বেচেঁ থাকতেন আরও অনেক গল্পের বই লিখতন। অবশ্যই নিজের লেখা কোনো গান বা গল্পের বইয়ের থেকে নাম দিতেন। যেমন যদি মন কাদে চলে এস এবর্ষায়, আজ এ বাদর দিনে।
একুশে টিভি অনলাইন : নুহাশ পল্লীর খবর কী?
মেহের আফরোজ শাওন : হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বেশি সময় কাটতো নুহাশ পল্লীতে। আগে যেমন চলতে এখন ঠিক সে নিয়মে চলছে নুহাশ পল্লী। তবে তিনি বেচেঁ থাকলে আরও অনেক কিছু তৈরি করা যেতন নুহাশ পল্লীতে।
একুশে টিভি অনলাইন : হুমায়ূন আহমেদ স্যার একাকিত্ব লাগে না?
মেহের আফরোজ শাওন : মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। তিনি আমার জীবনে এত ভালো স্মৃতি রেখে গেছেন যে, মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে যাই। কিন্তু যখন আমার দুই শিশুপুত্র আদরের নিষাদ আর নিনিত আমার পাশে এসে দাঁড়ায় তখন মনে হয় কে বলেছে হুমায়ূন নেই? ওই তো আমার পাশে দুইজন হুমায়ূন আহমেদ দাঁড়িয়ে আছে। নিষাদ আর নিনিত মেধা ও মননে বাবাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছে।
একুশে টিভি : অবসরে কি করেন ?
মেহের আফরোজ শাওন : অবসর খুব একটা পাই না। যতটুকু পাই এসময় বই পড়ি, বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াই। এছাড়া অধিকাংশ অবসর কাটে ঘুমিয়ে।
একুশে টিভি অনলাইন : আপনার মূলবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ।
মেহের আফরোজ শাওন : একুশে পরিবারকেও ধন্যবাদ।
/ এআর /