ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আইএস পরবর্তী মসুল শহর:

ইট সরালেই ভেসে ওঠছে মৃতদেহ

প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১১:১০ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার

ইরাকের মসুল শহরের প্রধান সড়কটি ধরে সামনে গেলে দুধারে চোখে পরে শুধুই ধ্বংসস্তুপ। একসময়ের প্রাণবন্ত এই শহরটি এখন একেবারে ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। ধ্বংসস্তুুপের ইট সরালেই একের পর এক ভেসে ওঠছে নিখোঁজ মৃতদেহ। তাই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) শক্ত ঘাটি খ্যাত মসুলে বর্তমানে বিরাজ করছে শূণ্যতা। 

ইসলামিক স্টেটকে উৎখাত করতে গিয়ে শহরটিতে শত শত বিমান হামলা হয়েছে। এতে শহরটির বেশিরভাগ অংশই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সেখানে জনমানুষের লেশমাত্রও নেই। তবে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া অধিবাসীদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি পরিবার ফিরেছে এই ধ্বংসস্তুপের মাঝে।

আহমেদ হাসান তাদের একজন। পাঁচ বছর পর নিজের শহরে ফিরলেন তিনি। তার জন্য নতুন করে যেনো শুরু হলো আরো এক সংগ্রাম। তিনি বলেন "আমি এই শহরে বড় হয়েছি। আমাদের জন্য এই শহরটি ছিলো গর্বের বিষয়। কিন্তু কি ভয়াবহ ব্যাপার দেখুন, শহরটির কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। বিশেষ করে শহরটির পশ্চিম অংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধাও আর নেই সেখানে"।

শহরটির পুরোনো অংশে বছর পাঁচেক আগে একটা বাড়ি কিনেছিলেন আহমেদ হাসান। এতদিন পর সেটার ধ্বংসস্তুপের ওপরে দাঁড়িয়ে কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। বারবার নিজের মাথা দোলাচ্ছিলেন। পরিবারের আট সদস্যই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মরদেহও খুঁজে পাননি আহমেদ। কোথায় গেছে তাঁদের দেহ, তাঁদের কি আদৌ দাফন করা হয়েছিল না কি শকুনে খেয়েছে সন্তান পরিজনদের দেহ, এমন হাজারো প্রশ্ন হাসানের।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসান বলেন, "একদম শুরুতে মারা গিয়েছিলো আমার স্ত্রীর ভাই। সে নদীতে পানি আনতে গিয়েছিলো। ফেরার সময় মর্টারের আঘাতে মারা যায় সে। তারপর মারা গেলো আমার ভাইয়ের স্ত্রী। সে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। সেসময় আইএসের যোদ্ধারা স্থানীয়দের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিলো এবং সবসময় জায়গা পরিবর্তন করছিলো। তারা অসুস্থ কাউকে সাথে রাখতে চায়নি। তাই ওকে মেরে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলো"

ইরাক সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী তিন বছর পর যুদ্ধের পর আইএসকে হঠিয়ে মসুল শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সম্প্রতি। তবে মসুলের নিয়ন্ত্রণ নিলেও স্থানীয়দের আস্থা কুড়োতে ব্যর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। শহরের পুলিশের কার্যালয়ের সামনে স্থানীয়দের অনেকেই জড়ো হয়েছেন। তারা পশ্চিম মসুলে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান।

কিন্তু যারা বিমান হামলায় বেঁচে গেছেন তাদের অনেককেই ইসলামিক স্টেটের অনুগত বলে মনে করা হচ্ছে। এখন শাসক বাহিনীর লিখিত অনুমতি ছাড়া স্থানীয়দের বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, "এটা এখন একটা সমস্যা। এই লোকগুলো আই এসের সাথে ছিলো কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের ব্যাপারে একটা অনুসন্ধান হওয়া প্রয়োজন। আইএসের কত যোদ্ধারাইতো কোনো পরিচিতি নেই। শুধু স্থানীয়রাই তাদের চিনতে পারবে। লোকজনকে তাদের বাড়িতে যেতে দেয়ার আগে শুরুতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া আমাদের জন্য জরুরি।”

মসুলের অলিগলিতে অবশ্য সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তুপ সরাতে শুরু করেছে। আধুনিক যন্ত্রপাতিও যেহেতু বোমা-হামলা থেকে রক্ষা পায়নি, তাই অনেকে খালি হাতেই ইটশুড়কি সরাচ্ছিলেন। একটি করে ধ্বংসস্তুপ সরছে, তো একেক করে পচা গলিত লাশ বের হয়ে আসছে। পচা লাশের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরইমধ্যে নতুন জীবনের আশায় একেক করে ফিরে আসছেন বাস্তুহারা বাসিন্দারা। নতুন জীবনের আশায় ধ্বংসস্তুপের মাঝেও বাঁচার স্বপ্ন বুনছেন হাজার হাজার বাস্তুহারা যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ।

সুত্র: বিবিসি

এমজে/