ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

ময়মনসিংহের চিত্র পাল্টে দিয়েছে কলসিন্দুরের মেয়েরা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১০:৩৬ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের ভাগ্য বদলে দিয়েছে ফুটবলার মেয়েরা। এরইমধ্যে গ্রামবাসী পেয়েছে বিদ্যুৎ। স্কুল পেয়েছে নতুন দুটি ভবন। তৈরি হয়েছে রাস্তা-ঘাট। শুধু নিজেদের গ্রামই নয়, দেশের ফুটবলের ইতিহাসও বদলে দিয়েছে কলসিন্দুরের মেয়েরা। এখন শুধু গ্রামবাসী নয়, তাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখে গোটা দেশ।
দেশের আর ৮/১০টি গ্রামের মতোই সাধারণ ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামটি। চার বর্গকিলোমিটারের গ্রামটিতে প্রায় ৩ হাজার মানুষের বসবাস। কৃষিই তাদের প্রধান জীবিকা। তবে মাছ ধরা আর ছোট-খাট ব্যবসাও করেও পেট চালান অনেকে।
দেশ-বিদেশে এই গ্রামটির পরিচিতি এনে দিয়েছে ফুটবলার মেয়েরা। মেয়েদের ফুটবল খেলা ও বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে গ্রামবাসী বাধ্য হয়েছে চিন্তা-চেতনাকে বদলাতে। বদলে গেছে মানসিকতাও।
মেয়েদের এখন আর কেউ খেলতে বাধা দেয় না। বরং দেয়া হচ্ছে উৎসাহ। এই ফুটবলারদের আগের মত এখন আর সামাজিক বাধা নেই। কিছুটা হলেও আর্থিক উন্নতি হয়েছে মারিয়া-মার্জিয়াদের পরিবারের। কলসিন্দুরের দেখাদেখি এবার নান্দাইল ও ভালুকা স্কুলেও মেয়েদের ফুটবল দল গঠন করা হয়েছে। মেয়েদের ধারাবাহিক সাফল্যে গামারিতলা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে কলসিন্দুর করার প্রস্তাব করেন সেখানকার চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কলসিন্দুরের মেয়েদের সাফল্যের শুরুটা নেপালে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলের ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি ঘরে তুলেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। পরের বছর তাজিকিস্তানেও মুকুটটা ধরে রাখে তহুরারা। সে টুর্নামেন্টে সেরা গোলদাতা বাংলাদেশের মেসিখ্যাত তহুরা। এবার সাফ শিরোপা জয়। আর সেরা গোলদাতা লিটেল মেসি তহুরা। শুধু সাফ নয় মেয়েরা এগিয়ে যেতে চায় আরো বহুদূর।
যদিও শুরুটা এমন সহজ ছিল না। কু-সংস্কার ছিল এলাকার মানুষের মধ্যে। মেয়েদের ফুটবল খেলা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না, তারা। অভিবাবকদের রক্তচক্ষু আর গ্রামবাসীর টিপ্পনিতো ছিলোই। সঙ্গে অভাব-অনটন।
তাই বলে, থেমে থাকেননি মফিজ উদ্দিন স্যার। ঘরে ঘরে গিয়ে মেয়েদের অভিবাবকদের বুঝিয়েছেন। তাকে সহায়তা করেছেন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিনতি রানী শীল। তাদের সীমাহীন চেষ্টায় থেমে থাকেনি অদম্য এ নারী ফুটবলাররা। অভিবাবকদের রক্তচক্ষু ও এলাকাবাসীর টিপ্পনির তোয়াক্কা না করেই অনুশীলন করেছেন একাগ্র চিত্তে। নারী ফুটবলকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

/ এআর /