ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ঘুমপাড়ানি গ্রাম

প্রকাশিত : ০৬:৫৫ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১২:১৯ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার

দক্ষিণ কাজাখস্তানের ছোট্ট গ্রাম কালাচি ও কার্সনোগ্রস্ক। এগুলো এমন গ্রাম, যেখানে গেলেই মানুষের ঘুম পায়। অবসন্নতায় শরীর যেন ভেঙে আসে। ঘুমের মধ্যে মানুষ দেখতে থাকেন ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন। এক সময় গ্রামবাসীর ধারণা ছিল, এসব কিছুর পেছনে হয়তো কোনো অশরীরী আত্মা বা প্রেতাত্মার হাত আছে। তবে বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ বলছে ভিন্ন কিছু।

কাজাখস্তানের রাজধানী আসতানা থেকে ৩০০ মাইল পশ্চিমে পাশাপাশি অবস্থিত কালাচি ও কার্সনোগ্রস্ক গ্রাম। আগে দেশটির অন্যান্য গ্রামের মতো এগুলোও ছিল শান্ত ও নিরুপদ্রব জনপদ।
সমস্যার শুরু হয় ২০১৩ সালের মার্চে। হঠাৎ করেই ঘুমপাড়ানিয়া রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে গ্রাম দুটির মানুষ। বিষয়টি নিয়ে ২০১৪ সালে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন স্থানীয় এক সাংবাদিক।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রাম দুটির অদ্ভুত রোগে আক্রান্তরা রাত-দিন শুধু ঘুমান। এমনও হয়েছে যে, কেউ কেউ দিনে সাত-আটবার ঘুমিয়ে পড়ছেন। কিন্তু জেগে ওঠার পর তাদের এ সম্পর্কে কিছু মনে পড়েনি। কেউ কেউ দেখেছেন অদ্ভুত সব স্বপ্ন।

রুডলফ বায়ারিনস ও মিসা প্লায়ুকিন নামের নিদ্রা রোগে আক্রান্ত দুই শিশু জানায়, তারা ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখেছে। যেমন পাখাওয়ালা ঘোড়া, বিছানাভর্তি সাপ, রাশি  রাশি কুৎসিত পোকা তাদের হাত খেয়ে নিচ্ছে ইত্যাদি।

আবার কালাচি গ্রামের বাসিন্দা ইয়েলিনা জাভোরনকোভা জানান, হঠাৎ করেই তাদের বিড়ালটাও অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছিল। সে হিংস্র হয়ে দেয়াল ও ঘরের আসবাবপত্র আঁচরানো শুরু করে। মনে হয়েছে, অদৃশ্য কোনো শত্রুর সঙ্গে লড়াই চলছে তার।

গ্রাম দুটিতে কেন এমন ঘটছে- এর একটা সম্ভাব্য কারণ বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, গ্রাম দুটির অদূরেই রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের দুটি পরিত্যক্ত ইউরেনিয়াম খনি। সেখান থেকে ক্রমাগত বাতাসে মিশছে কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোকার্বন গ্যাস। এ গ্যাস নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণের ফলে অবসন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। গ্যাসের প্রভাবে তাদের মস্তিস্ক ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না।

এ সমস্যায় গ্রাম দুটি প্রায় জনশূন্য হতে বসেছে। ছয় হাজার থেকে কমতে কমতে সেখানে লোকসংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ জনেরও কমে। কাজাখস্তান সরকার বলছে, তারা অচিরেই পরিত্যক্ত ইউরেনিয়াম খনি দুটি বন্ধের উদ্যোগ নেবে।
সূত্র :দ্য গার্ডিয়ান।
/ এআর