ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৪ ১৪৩১

ত্রিপোলিতে বিমান বন্দরে হামলা

নিহত ২০, বিমান চলাচল বন্ধ

প্রকাশিত : ০২:৩১ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দেশটির জাতীয় বিমানবন্দরে ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিমান হামলার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এদিকে সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, আটক জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ছাড়িয়ে নিতে এ হামলা চালিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা। ত্রিপোলি বিমানবন্দরের নিকটবর্তী একটি কারাগার থেকে ওই জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিতেই এ হামলা চালায় তারা। তবে তাদের হামলা ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।

এদিকে এ হামলার ঘটনায় ত্রিপোলিতে আবার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত সরকার- গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে এমন দাবি করে আসলেও এ হামলার পর তাদের দাবি আর মানা যাচ্ছে না। এ হামলার ঘটনাকে বর্তমান সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে গতকাল সোমবার ভোর থেকেই স্থানীয়রা গুলাবারুদের বিকট শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন বলেও জানা গেছে। তাদের দাবি, মিটিগা বিমানবন্দরের যাত্রীরা বিকট শব্দের কারণ এদিক-ওদিক ছুটোছুটি শুরু করেছিলেন। এসময় তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সব ধরণের বিমান যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। হামলার পরপরই বিমানবন্দর এলাকা জনশূণ্য হয়ে পড়ে।

এদিকে বিভিন্ন বিমান থেকেও নিরাপত্তা বাহিনী লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে বলেও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া হামলার পরই অনেক পাইলট বিমান ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এদিকে এ হামলায় কমপক্ষে ৪টি বিমানে আগুন ধরে গেছে বলেও দাবি করে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।


এদিকে সরকারের সহযোগি প্রতিষ্ঠান ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করা গোয়েন্দা সংস্থা রাডা দাবি করেছে, তারা সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসীর আটকে তারা কাজ করেন। এছাড়া সন্ত্রাসীদের কারাগারে রাখার দায়িত্বও তাদের। শুধু তাই নয়, ত্রিপোলি বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রাডা দেখভাল করে বলে জানা গেছে। তাই রাডার উপর প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা হতে পারে বলে মনে করছে রাডা কর্তৃপক্ষ।

রাডার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মিলিশিয়া বাহিনীর নেতা বসিরের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। আটক সন্ত্রাসীদের ছাড়াতে তারা এ হামলার পরিকল্পনা করে, কিন্তু সরকারি বাহিনী তাদের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলায় কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন। আহতদের বিভিন্ন হাপসাতালে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ।

এদিকে রাডার পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, তারা ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিসহ অন্তত ২ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসীকে বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতার করেছে। তাদের ওই বিমানবন্দরের নিকটবর্তী কারাগারে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে দেশটিতে স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেখানে সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের পর থেকে ত্রিপোলি ও পূর্ব লিবিয়ায় ওই সরকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এসময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো তাদের দূতাবাস লিবিয়া থেকে সরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ তিউনিসিয়ায় স্থানান্তর করে।

তবে ২০১৭ সালের পর থেকে দেশটিতে আবার বড় ধরণের সংঘাত শুরু হয়। আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত সরকার জিএনএকে রাডা সমর্থন দিলে এ সংঘাতের শুরু হয়। এসময় রাডা বিদ্রোহী সরকারের কাছ থেকে ত্রিপোলিসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল কেড়ে নেয়। বিশেষ করে ত্রিপোলির বড় একটি অংশ দখলে নেওয়ার পর থেকে ওই সরকারকে আইএসের নেটওয়ার্ক বলে প্রচার করতে থাকে। এরপরই দেশটিতে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।


এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী দেশটিতে নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নির্বাচন দেওয়ার জন্য দুই পক্ষকেই আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি।

সুত্র: রয়টার্স
এমজে/