ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৪ ১৪৩১

রাজনৈতিক আক্রমণের কারণ জানতে হবে: প্রণব

প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেন,“এ উপমহাদেশে যাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল সে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর কেন বারবার হিংসাত্মক আক্রমণ হয়েছে তা জানতে হবে।”

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবদুর রব হল মাঠে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রণব মুখার্জি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, ১৯৫৯ সালে শ্রীলঙ্কার সলোমন বন্দরনায়েক, ১৯৪৮ সালের ৩ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান,৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা,পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক, জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন।

প্রণব বলেন, “ভারতে যেমন স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীকে হারিয়েছিলাম (১৯৪৮ সালের ৩ জানুয়ারি ঘাতকের বুলেট তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল)। ঠিক তেমনি স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় একদল ঘাতকের নৃশংস আক্রমণে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আত্মত্যাগ করলেন। প্রায় জন্মলগ্নের মুহূর্তে জাতিকে জাতীয় নেতৃত্ব শূন্য করে দেওয়া হল। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই।এ বিপুল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কারণ কী, এর পেছনে কোন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে তা আমাদের জানতে হবে।”

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানসূচক ডি. লিট (ডক্টর অব লেটারস) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রণব মুখার্জির হাতে ডি-লিট ডিগ্রির স্মারক তুলে দেন।

ভারতের প্রথম এই বাঙালি রাষ্ট্রপতি এসময় আরও বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।গবেষণার মধ্য দিয়ে এ সত্য জানার আশা প্রকাশ করে প্রণব বলেন,“রাস্তা যদি চিনি তাহলে চলা শক্ত হবেনা।”

প্রণব বলেন, “গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা ভারতবর্ষে ও বাংলাদেশে দেখেছি। শ্রীলংকায় ইদানিং দেখছি। বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষ সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থিক, সামাজিক প্রগতি বাস্তবায়ন করেছে। অথচ এ দেশগুলোতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর বেশি হিংসাত্মক আক্রমণ হয়েছ, কারণ কি।”

বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি কেন? কোন সামাজিক প্রেক্ষাপটে সৈন্যরা বারবার ব্যারাক থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে প্রণব বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ, অভিভূত। আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে ডি-লিট উপাধি দিয়ে আপনারা আমাকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করেছেন।”

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি কামনা করে বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয় একসময় তক্ষশীলা, নালন্দার মতো জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হবে।এখানে বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা একত্রিত হবেন জ্ঞান অর্জনের জন্য। আমি বিশ্বাস করি আপনারা তা পারবেন। কারণ আপনাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল বিশ্বমানবতার মুক্তি। এ মুক্তির কথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেছিলেন। সে মুক্তির জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক প্রাণ দিয়েছিলেন। আশা করি এ প্রাঙ্গণ সংকীর্ণ হবে না। এখানে কোনো আগল থাকবে না।”

এর আগে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছান প্রণব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মস্থান রাউজানে যান তিনি।

রাউজানের নোয়াপাড়ায় সূর্যসেনের পৈত্রিক ভিটায় যাওয়ার পর রাউজান কলেজের কাছে মুন্সির ঘাটা এলাকায় সূর্যসেনের ভাস্কর্যে সম্মান জানান তিনি।

এরপর রাউজান থেকে নগরীতে ফিরে রাতে র‌্যাডিসন হোটেলে ভারতীয় দূতাবাসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রণব।

কেআই/টিকে