রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চারটি বিষয়ে গভীর সংশয়
প্রকাশিত : ১১:৫৩ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবাসনের জন্য যে চুক্তি করেছেন তা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বিবিসিকে জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার প্রতিদিন তিনশ’ করে প্রতি সপ্তাহে ১৫শ’ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে। আর দুই বছরের মধ্যে এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ করা হবে।
তবে কবে থেকে এই প্রত্যাবাসন শুরু হবে, সেটি এখনও নিশ্চিত নয়।
গত বছর ২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর ছয় লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাদের কাছে শোনা গেছে হত্যা, ধর্ষণ, ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ সব বর্ণনা। জাতিসংঘ একে জাতিগত নির্মূল অভিযানের একটি দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছে।
এর পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এই রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনা শুরু হয় নভেম্বর মাসে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে চারটি প্রধান সংশয় রয়েছে।
প্রথমত, চুক্তিতে কি আছে : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, চুক্তিতে কি আছে তা নিয়ে তারা তেমন কিছুই জানেন না। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব উ মিন্ট থু বলেছেন, প্রত্যাবাসন শুরু হবে ২৩ জানুয়ারি।
দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি নিরাপদ কি না : মানবাধিকার সংস্থা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক লরা হাই বলছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার মতো নিরাপদ নয়। বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেড বলেন, রোহিঙ্গারা বলছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে, বাড়িঘর পুন:নির্মাণ হলে এবং নিপীড়ন বন্ধ হলেই তারা মিয়ানমারে ফিরবে। তবে তেমন অবস্থা এখনো তৈরি হয় নি। ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী রোজেনা এলিন খান বলছেন, উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো মানে তাদের মৃত্যুর মুখে আবার ঠেলে দেয়া।
তৃতীয়ত, রোহিঙ্গারা কী কখনো নাগরিকত্ব পাবে : রোহিঙ্গা নেতা সিরাজুল মোস্তফা বলছেন, আমাদের প্রথম চাওয়া হলো নাগরিকত্ব। বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয় না, এবং তাদের ২০১৪ সালের জনগণনাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদেরকে আসলে মিয়ানমারের বাসিন্দা বলেই স্বীকার করা হয় না।
চতুর্থত, রোহিঙ্গারা কি তাদের জমি ফেরত পাবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে কমপক্ষে ৩৫৪টি রোহিঙ্গা গ্রাম পুরো বা আংশিক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গারা কি এ জমি ফেরত পাবে, বা তারা কি প্রমাণ করতে পারবে যে এ জমি তাদের ছিল?
সূত্র: বিবিসি
একে// এআর