আনন্দবাজারকে জয়া
প্রেম পুরোটাই গুজব, নেশা শুধু পানমশলা
প্রকাশিত : ০২:১২ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৩:৫৫ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
জয়া আহসান। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে ইদানিং কলকাতাতেই তার বেশি উপস্থিতি দেখছে দর্শক। সফলতাও কম নয়। একের পর এক অর্জন এসে ধরা দিচ্ছে দুই বাংলার এই গুনি তারকার হাতে। বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জির সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো বাংলাদেশের এই অভিনেত্রীর। এবার সেই গুঞ্জনের জবাব দিলেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যমে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি বর্তমান ব্যস্ততা ও দুই বাংলার তফাত নিয়ে কথা বলেন।
জয়ার সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
প্রশ্ন : ভীষণ ব্যস্ত আপনি ...
উত্তর : ওই শ্যুটিং নিয়েই (হাসি)। যদি আমি শুধু এখানে বা ওখানে কাজ করতাম, তবে এতটা ব্যস্ত থাকতাম না। এমন দিনও যায়, ঢাকায় শ্যুটিং সেরে রাতের ফ্লাইটে এলাম। সকালে এখানে লুক টেস্ট। দু’দিক সামলাতে গিয়েই নিজেকে আর সময় দেওয়া হচ্ছে না।
প্রশ্ন : কখনও ভেবেছিলেন, এখানেও এতটা সাফল্য পাবেন?
উত্তর : রোডম্যাপ করে কখনও এগোইনি। ‘আবর্ত’র পরেও কিছুটা সময় নিয়েছিলাম। এখন অবশ্য বেশ কিছু ডায়নামিক চরিত্রের অফার পেয়েছি। আমি তো নিজেকে শিল্পী হিসেবে দেখতে চাই। নায়িকা তকমাটা চাইনি।
প্রশ্ন : তার মানে কি নাচ-গানের সিনেমা করবেন না?
উত্তর : কেন করব না? ওগুলোও তো চরিত্র। যা করব, তাতে যেন শিল্পমানটা থাকে। আর চরিত্রগুলো ভার্সেটাইল হয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের এক সাংবাদিক লিখেছেন, ‘জয়া আমাদের গর্ব, আবার আক্ষেপও।’ ওই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে আসায় আপনার কোনও আক্ষেপ আছে?
উত্তর : আসলে বাংলাদেশে এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমার বাজারটা এখনও সে ভাবে তৈরি হয়নি। আমার খুব ভাল একটা সিনেমা ‘খাঁচা’ হঠাৎ করে রিলিজ করল। সিনেমাটির মার্কেটিং ঠিক ভাবে করা হয়নি। আর একটি সিনেমা ‘বিউটি সার্কাস’, যেখানে আমি সার্কাসের ট্র্যাপিজের খেলা দেখাই, সেটা টেকনিক্যাল কারণে বহু দিন ধরে আটকে। শিল্পী হিসেবে সিনেমার রিলিজ নিয়ে একটু আক্ষেপ আছে।
প্রশ্ন : স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দর্শকের প্রতিক্রিয়া কি মাথায় রাখেন?
উত্তর : কোনও চরিত্র বা দৃশ্য করতে ব্যক্তিগত ভাবে আমার বাধা আছে কি না, সেটা আগে বিবেচ্য। একটি মেয়ে চরিত্রের খাতিরে স্মোক, ড্রিংক করতেই পারে। তবে তার যুক্তি থাকতে হবে। আমি ওই মাটি থেকেই জয়া আহসান হয়েছি, তাই ওঁদের কথাও ভাবি। এখানকার মানুষের ভাল লাগাকেও সম্মান দেওয়া আমারই দায়িত্ব।
প্রশ্ন : প্রযোজনাও তো করছেন ...
উত্তর : আমি বরাবরই ভাবতাম, সিনেমা করার জন্য হুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ খুব ভালো গল্প। সিনেমাটির জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছি। শ্যুটিং বাংলাদেশে হয়েছে। এখানে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ শুরু করেছি।
প্রশ্ন : ভারতেশ্বরী হোমসের কথা মনে পড়ে?
উত্তর : খু-উ-উ-ব (স্মিত হাসি)। ভারতেশ্বরী হোমস এমন একটা বোর্ডিং ছিল, যা আমার আত্মবিশ্বাসটা গড়ে দিয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার চেয়ে আমার এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের উপর বেশি নজর ছিল। লুকিয়ে বেঞ্চের নীচে বই পড়া, ছবি আঁকা, কলেজ ফাঁকি দেওয়া, কানে তিনটে পিয়ার্সিং করানো ... আর ছোটবেলায় এমন গুছিয়ে ভূতের গল্প বলতাম, আমার বোন সে দিনও বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, ওটা মিথ্যে ছিল (হাসি)।
প্রশ্ন : অভিনেত্রী জয়ার অনিশ্চয়তার জায়গা কোনটা?
উত্তর : বারবার নিজেকে অতিক্রম করতে চাই। তবে মেধা মাঝে মাঝে নিম্নমুখী হয়। সেই ভয় আছে। মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাই। আর এমন কাজ করব না, যাতে আমার শিল্পীসত্তা নষ্ট হয়। অভিনয় আমার ইবাদত (প্রার্থনা)।
প্রশ্ন : কোনও নেশা আছে?
উত্তর : সেটের লাইটিংয়ের দাদাদের কাছ থেকে শিখেছি পানমশলা খেতে (জোরে হাসি)। জরদা দেওয়া পান খেতে খুব পছন্দ করি। তবে ক্লিওপেট্রা (পোষ্য) আমার নেশা। মায়ের কাছ থেকে বাগান করার শখ পেয়েছি। আর আমি কিন্তু গাছ-চোর। আমার লাগেজ খুললেই গাছ পাবেন (দুষ্টু হাসি)।
প্রশ্ন : কলকাতা কতটা কাছের হল?
উত্তর : বাংলাদেশ যতটা কাছের, এই বাড়িঘরও ততটাই। তবে এখানকার বাংলা সিনেমাতে যে ‘বাঙাল’ ভাষা বলা হয়, সেটা খুব খারাপ। বাঙাল ভাষা বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। ওখানকার ভাষায় বৈচিত্র রয়েছে। তাই এই ‘বাঙাল’ ভাষা শুনে বাংলাদেশের মানুষ খুব রেগে যায়। আর কলকাতার খাবারে মিষ্টি একটু বেশি দেওয়া হয়। তবে এখান থেকে পাতিলেবু, মুড়ি বাড়িতে নিয়ে যাই (হাসি)।
প্রশ্ন : সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার লিঙ্কআপের গুঞ্জন তো থামেই না। ওঁর সিনেমাতে আবারও কাজ করছেন?
উত্তর : শিল্পী হিসেবে তো ওর সঙ্গে কাজ করতেই চাই। আমরা একসঙ্গে পথ চললে সেটা একটা বলার বিষয় ছিল। কিন্তু এটা পুরোটাই গুজব।
প্রশ্ন : ঢাকায় আপনার বিশেষ বন্ধু আছে তো। নামটা বলবেন?
উত্তর : (জোরে হাসি) নাম তো বলা যাবে না।
প্রশ্ন : বিয়ের পরিকল্পনা?
উত্তর : এই মুহূর্তে অন্তত নয়।
সূত্র : আনন্দবাজার
(ইটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো)
এসএ/