নতুন উদ্ভাবনেই এগিয়ে ঢাকা পূর্ব কমিশনারেট
প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৬:৫৮ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট সারাদেশের ভ্যাট অফিসের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। শুধু ভ্যাট অফিস নয় চারটি ভ্যাট কমিশনারেট থেকেও এগিয়ে তারা। তাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, অফিস ব্যবস্থাপনা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল ও উদ্ভাবনের দিক থেকে এগিয়ে ভ্যাট ঢাকা পূর্ব কমিশনারেট।
এসব বিষয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা পূর্ব এর অতিরিক্ত কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন। ইটিভি অনলাইনের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইয়াসির আরাফাত রিপন।
একুশে টেলিভিশন: শুধু ভ্যাট অফিস নয় চারটি ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এগিয়ে পূর্ব। কোন ধরনের পদক্ষেপগুলো এই সফলতার পিছনে কাজ করছে?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: আমরা জনসাধারণের মাথায় বাড়ি দিয়ে নয় তাদের মাথায় হাত দিয়ে কর আদায় করতে চাই। ‘বদলে যাও, বদলে দাও’- এ সংস্কৃতি চালুর পাশাপাশি মানুষের মাঝে যে কর ভীতি রয়েছে তা দূর করতে চাই।
কমিশনারেটে কাজের গতি আনা, ভ্যাট আহরণ বৃদ্ধি এবং সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানাকার যেকোন ফাইল বা কাগজের ওপর লেখা রয়েছে-‘আমাকে ফেলে রাখবেন না’। আমাদের অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই মূলমন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত হযে কাজ করে। আমরা সেবার ক্ষেত্রে গতি নিয়ে আসতে এসব পদক্ষেপ নিয়েছি। তাই সব সময় এ কমিশনারেট রাজস্ব আর সেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে।
একুশে টেলিভিশন: ঢাকা পূর্ব কমিশনারেট কিভাবে সারা দেশের ভ্যাট অফিসের মধ্যে শীর্ষস্থানে গেল?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: এ কমিশনারেটের যখন গঠন করা হয় তখন এর রাজস্ব প্রবৃদ্ধি মাত্র ১০ শতাংশ। এর পরের অর্থ-বছরগুলোতে এ কমিশনারেটের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১০ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নিত হয়। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি আজ ৩৫ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে ঢাকা পূর্ব কমিশনারেট বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটের সাথে মিল রেখে রাজস্ব আহরণ, সুশাশন প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই এ কশিনারেট করেছে।
একুশে টেলিভিশন: ভ্যাটের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। ভ্যাট অনলাইন চালু হলে এসব অভিযোগের সমাধান হবে কী?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: ভ্যাট বিষয়ে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা ভ্যাট অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে তা আর থাকবে না। বিশেষ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল চালু হলে হয়রানির কোনো অভিযোগই আশা করি আসবে না। হয়রানি রোধ এবং সেবা প্রদানে আমরা আউট অব দ্য বক্সে কাজ করার চেষ্টা করছি।
একুশে টেলিভিশন: চলতি অর্থবছরে এ কমিশনারেটের লক্ষ্যমাত্রা কত?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: চলতি অর্থবছর এ কমিশনারেটের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১০৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৫১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার বিপরীতে ৫২৯ কোটি ৩৭ লাখ ও ১৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার উৎসে কর আহরণ করা হয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত এ কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ৩২ শতাংশ। আর বিদায়ী অর্থবছর এ কমিশনারেট ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা আহরণ করেছে।
একুশে টেলিভিশন: অন্য কমিশনারেটের চেয়ে এখানে বাড়তি কি রয়েছে?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: এ কমিশনারেটের অধীনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছে তারা সবাই সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর আওতাধীন। প্রতিদিন বিভাগীয় ভ্যাট কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। তাদের ঝুকিঁপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ভিউতে কী কী আছে তাদের কাছ থেকে সে তালিকা সংগ্রহ করি। তাদের দেওয়া তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ তালিকা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া আবার নতুনভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কী না সে প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছি এখান থেকে।
তালিকার মধ্যে থাকা কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শন করা হতো। অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে তারা যথাযথভাবে ট্যাক্স দিচ্ছে না। ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রে যে গ্যাপ রয়েছে, তা কমানোর জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক দলিল জব্দ করা হত।
একুশে টেলিভিশন: এখানে সেবার মান বাড়ানোর ফলে কী পরিমাণ প্রতিষ্ঠান করের আওতায় এসেছে?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: এ কমিশনারেটের অধীনে বর্তমানে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান করের আওতায় এসেছে। যাদের মধ্যে ট্যাক্স ভীতি কাজ করতো। যাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ ট্যাক্স দিত, ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ট্যাক্স দিত না। তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করতো। তাদের শঙ্কা ছিল যে ট্যাক্স-এর আওতায় আসলে ভ্যাট অফিস দ্বারা তারা হয়রানির শিকার হবে। এ ভীতি দূর করতে আমরা বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তাদের নিয়ে আমরা সভা করি। তারা যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
একুশে টেলিভিশন: ঢাকা পূর্ব কমিশনারেট ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এগিয়ে কেন?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: আমাদের এখানে ম্যানেজমেন্ট স্টান্ডার্ড ফর গুড গর্ভানেন্সকে জনপ্রিয় করতে একটি টিভিসি তৈরি করে সকলের কাছে বিষয়টি সহজবোধ্য করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে এনবিআরের মাননীয় চেয়ারম্যান, সদস্যসহ সবাই প্রশংসা করেছেন। এটা আমাদের একটা বড় আবিষ্কার। জাতীয় ভ্যাট দিবসের যে লোগো সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেটিও পূর্ব কমিশনারেটের উদ্ভাবন। ‘যোগ্য নেত্রীর যোগ্য দেশ, ভ্যাট দিবসের খুশির রেশ’ ‘ভ্যাট দেব শপথ পাকা, ঘুরবে জোরে দেশের চাকা’ ‘ভ্যাট দিবসে যোগ দিন, দেশ গড়ায় অংশ নিন’ ‘আমরা সচেতন নাগরিক, ভ্যাট প্রদানে দেই লাইক’ ভ্যাট দিবসের এ ধরনের সুন্দর বিভিন্ন স্লোগান এ কমিশনারেটের উদ্ভাবন।
একুশে টেলিভিশন: চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণে এ কমিশেনারেটের পরিকল্পনা কী?
মুহম্মদ জাকির হোসেন: ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ কমিশনারেটের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ করেছি। এবং বিদায়ী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের সাফল্যের কারণে এ অর্থবছর আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা উচ্চাবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা। এ উচ্চাবিলাসী লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সক্ষম। জুলাই মাসে ২১৩ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ ও প্রবৃদ্ধি ৩১ শতাংশ। জুন পর্যন্ত টার্গেট অর্জন কোনো বিষয় নয়। আমরা যে অ্যানুয়েল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট-এপিএ করেছি তা ফলো করছি।
একুশে টেলিভিশন: একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মুহম্মদ জাকির হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আর/টিকে