ঢাকা অ্যাটাক এর পর দীপনের ‘ডু অর ডাই’
প্রকাশিত : ১১:২৮ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার
নির্মাতা দীপংকর দীপনের ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। দর্শক নন্দিত এই ছবির রেশ কাটেনি এখনও। হলে গিয়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছেন ছবিটি। ঢাকা অ্যাটাকের রেশ কাটতে না কাটতে আজ বুধবার দীপন নতুন ছবি নির্মাণের খবর জানালেন।
রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন ছবির খবরটি জানান তিনি। দীপন পরিচালিত নতুন ছবিটির নাম ‘ডু অর ডাই’।
‘ডু অর ডাই’ ছবি নিয়ে দীপন বলেন, ‘আমার এবারের ছবিটি এয়ারক্রাফট অপারেশন মুভি। এই সিনেমার জন্য আমার কাছে সেই অর্থে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। আমার পুরো দলটিকে এ জন্য প্রচুর রিচার্স করতে হচ্ছে। এই কাজটি করতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। আগামী নভেম্বরে আশা রাখছি ছবির শুটিং শুরু করতে পারব। যেভাবে আমরা ভেবেছি তাতে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, “ঢাকা অ্যাটাক” ছবির মতোই বাণিজ্যিকভাবে বিপণনের জন্যই নির্মাণ হতে চলেছে।’
দীপন আরও বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহে দর্শককে আড়াই ঘণ্টা ধরে রাখতে হলে ছবিতে কী থাকা উচিত, তা সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়ে গেছে। সব উপাদানই থাকবে “ডু অর ডাই” ছবিতে। ছবির তিনটি পর্যায়ে শামসুল আলমের জীবন তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। প্রথম পর্যায়ে দেখব, বেশ রোমান্টিক, গায়ক ও সুদর্শন বিমানবাহিনী কর্মকর্তা, যাকে দেখে প্রেমে পড়বে সবাই। পরের ধাপে অমানবিক অত্যাচার সহ্য করা একজন দেশপ্রেমিক বাঙালি। একেবারে শেষ পর্যায়ে সে মিশন সুইসাইডে যাওয়া একজন সাহসী দক্ষ পাইলট। তার নিজ হাতে লেখা অপ্রকাশিত জীবনী আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এটি নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে।’
‘ডু অর ডাই’ ছবির অভিনয়শিল্পী এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান দীপন। এই ছবিতে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতে মুম্বাইয়ের কয়েকজন অভিনয়শিল্পীও কাজ করবেন। চিত্রনাট্য তৈরির ফাঁকে অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করে নেবেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিমানবাহিনীর প্রথম ইউনিটের নাম ‘কিলো ফ্লাইট’। ‘কিলো ফ্লাইট’ অভিযান সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ব্রিগেডভিত্তিক ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভারতের মণিপুরের কৈলাশহর থেকে একটা অটার বিমান উড়ে যায়। বিমানের গন্তব্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গা। উদ্দেশ্য, পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল ডিপো ধ্বংস করে দেওয়া। কিছুক্ষণ পর আগরতলার তেলিয়ামুড়া থেকে উড়ে গেল একটি এলুয়েট হেলিকপ্টার। গন্তব্য নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপো।
তেলের ডিপো দুটি থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর স্থল, এখান থেকে নৌ আর আকাশযানগুলোর জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। ডিপো দুটিতে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি মজুত থাকে। ডিপো দুটি ধ্বংস হলে তাদের জ্বালানিসংকট দেখা দেবে। তেলের ডিপো দুটি স্থলভাগের সেক্টর গেরিলারা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করলেও কড়া নিরাপত্তার জন্য তা সম্ভব হয়নি।তেল ডিপোগুলো ধ্বংসের দায়িত্ব দেওয়া হয় কিলো ফ্লাইটকে। অটারের আরোহী ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম। অটার কৈলাশহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে উড়ে বঙ্গোপসাগরে ধরে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। পৌঁছেই ইস্টার্ন রিফাইনারিতে শুরু করে রকেট আক্রমণ। ট্যাংকারগুলো জ্বলে ওঠে আর বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।
ওই দিন প্রায় একই সময়ে এলুয়েট পৌঁছে যায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে। এলুয়েটটি পরিচালনা করেন কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন সাহাব উদ্দিন ও ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম। তাঁরা তেলিয়ামুরা থেকে উড়ে ইলিয়টগঞ্জ হয়ে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক ধরে ডেমরা পৌঁছায়। তারপর গোদনাইল। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছেই তেলের ট্যাংকারের ওপর বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যেই ট্যাংকারগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। পাকিস্তান বাহিনী কিছু বুঝে ওঠার আগেই অটার আর এলুয়েট মিশন শেষ করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছায়।
এ কাহিনি অবলম্বনে এবার সিনেমা তৈরি হচ্ছে এই সিনেমাটি।
কেআই/ টিকে