জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জননেত্রী শেখ হাসিনা
প্রফেসর ড. রেবা মণ্ডল
প্রকাশিত : ০৮:৫২ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১০:২৮ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার
জনগণের উন্নয়নের অধিকার এবং জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য বিষয়। ‘উন্নয়ন’ একটি মানবাধিকার অর্থাৎ মানুষের যতগুলো ‘সহজাত’ ও ‘অহস্তান্তরযোগ্য’ অধিকার রয়েছে উন্নয়নের অধিকার তার মধ্যে একটি।
১৯৮৬ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে Declaration on the Right to Development (DRD) গৃহীত হয়, যার অনুচ্ছেদ ১ (১)-এ বলা হয়েছে- everyone is entitled to participate in, contribute to and enjoy economic, social, cultural and political development in which all human rights and fundamental freedoms can be fully reali“ed.
বিশ্বনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার ওই ঘোষণা (DRD-১৯৮৬), United Nations Development Programme, 1965 (UNDP), United Nations Industrial Development Organi“ations, 1966 (UNIDO) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক ঘোষণা ও সংস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের আলোকে কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই ব্যক্তি এবং সমগ্র জনগণের দোরগোড়ায় অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের অধিকার ভোগের বিষয়টি পৌঁছে দিচ্ছেন বিরামহীনভাবে।
আওয়ামী সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেশ-জাতির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। আর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত সকলের ভাগ্যদেবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনী ইশতেহার পূরণসহ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা’ বাস্তবায়নসহ ডজন ডজন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে ইতোমধ্যে বাস্তবায়নও করছে এবং ক্রমাগতভাবে কর্মপ্রক্রিয়া ও কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত Millennium Development Goal (MDG) (২০০০-২০১৫)-এ যেখানে ৮টি লক্ষ্য ধার্য ছিল সেগুলো পূরণ করেছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য SDG ev Sustainable Development Goal (২০১৫-২০৩০ সাল) যাতে ১৭টি লক্ষ্য ধার্য ছিল যার অনেকগুলোতেই ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। উল্লেখ্য, SDG-এর লক্ষ্যগুলো (১) দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল (২) সার্বজনীন শিক্ষা (৩) নারী-পুরুষ সমতা (৪) শিশুস্বাস্থ্য (৫) মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন (৬) এইচআইভি নির্মূল (৭) পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং (৮) বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব, যেগুলোতে বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় ও বিচক্ষণ রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে যশোরে টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধন করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। পরমাণু থেকে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে বিদ্যুত উৎপাদন হবে, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে বিষয়টি দেশের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। এছাড়া ২০১৭-এর ৪ জুন বাংলাদেশের তৈরি প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়।
বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে পাঠানো হয়েছে এ বছরেই। অন্তত বৈজ্ঞানিক এসব কার্যক্রম গ্রহণ করে দেশের জেলা-উপজেলা ও গ্রাম-গঞ্জের মানুষের যেমন বিজ্ঞানভিত্তিক চেতনা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান বাড়ছে, বেকার সমস্যা হ্রাস পাচ্ছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটছে, সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন ঘটছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যে উন্নয়নের ধারা প্রবহমান রেখেছেন তাতে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ‘রেনেসাঁ’ ঘটিয়েছেন বলা চলে।
বিএনপি ও তার দোসরদের আমলে, এমনকি এরশাদের আমলে রাস্তাঘাটে ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক দেখা যেত। দুটো ভাতের জন্য রাস্তায়, ফুটপাথে, ওভারব্রিজে, গ্রামে-গঞ্জে হাহাকার করত বহু মানুষ, শীতে-গরমে অনেক মানুষ মারা যেত। দেশ স্বাধীনের পরে যাদের জন্ম হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে তারা এর সাক্ষ্য সহজেই দিতে পারবে।
ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সুসম্পন্ন করেছেন বর্তমান সরকার। যার ফলে বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘদিনের ছিমটহল সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং দেশের সীমান্তে শান্তি এসেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে পাহাড়ে শান্তি ও নিরাপদ জীবন ফিরে পেয়েছে মানুষ। শান্তিই উন্নয়নের পূর্বশর্ত- যেটি প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী ও চৌকস নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে বারবার প্রমাণ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারের মধ্যকার বহুদিনের সমুদ্র সীমানা নিয়ে দ্বন্দ¦ নিরসনকল্পে সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদালত (ITLOS)-এ মামলা করে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে- ‘সমুদ্র বিজয়’ হয়েছে এবং আমাদের ব্লু-ইকোনমি এখন সমৃদ্ধির পথে রয়েছে, তা কারও অজানা বিষয় নয়।
উন্নয়নের সকল সেক্টরে আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল কার্যক্রম চলমান। দেশের নৌবাহিনীকে ‘বায়ার নেভি’ (ক্রেতা নৌবাহিনী) থেকে ‘বিল্ডার নেভি’তে (নির্মাতা নৌবাহিনী) পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার জোর গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বক্তব্যে ঘোষণা দিয়েছেন- ‘আমরা নিজেরাই পারব যুদ্ধজাহাজ তৈরি করতে। আবার নিজেরাই রফতানি করতে পারব।’ উল্লেখ না করলেই নয়, প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে প্রমাণ করেছেন তার সরকার সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত। বিশ্বব্যাংক লজ্জা পেয়েছে আমাদের জননেত্রীর নির্ভীকতা ও সততার কাছে।
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশেরই জাতীয় অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বড় ‘পদ্মা সেতু’র নির্মাণ কাজ সুসম্পন্ন করতে যাচ্ছে। ‘বাপকা বেটি’ বাবার মতো যা বলেন তাই করে ছাড়েন আমাদের জননেত্রী। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, দেশকে শত্রুমুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। তাই তো আজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা।
মিয়ানমারের জাতিগত নিধন ও তার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া, তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়া এবং সে অনুযায়ী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়া এক বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল বর্তমান আওয়ামী সরকারের জন্য। অসাধারণ মেধা, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা দিয়ে বিশ্ব স্বীকৃত মাদার অব হিউম্যানিটি- জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ও তার জনগণের কল্যাণে এবং উন্নয়নে অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশ্বের অত্যন্ত উঁচুমানের একটি গবেষণা সংস্থা ‘পিপলস এ্যান্ড পলিটিক্স’-এর প্রতিবেদনে সম্প্রতি নবেম্বর মাসের শেষের সপ্তাহে বিশ্বে সততার শীর্ষে (৩) বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, যা বাংলাদেশের মতো বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে পরপর ৩ বার বিশ্বে দুর্নীতির চরম শীর্ষে অবস্থান করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের ও সম্মানের।
আমাদের জননেত্রী তো এমন হবেনই। প্রবাদ আছে ‘রক্ত কথা বলে’। আমাদের নেত্রীর পিতার পিতা শেখ লুৎফর রহমান বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন যে, বাবা পড়ালেখা করিও। পড়ালেখা করলে মানুষ হতে পারবা। আর একটা কথা মনে রাখিও- Sincerity of purpose এবং Honesty of purpose থাকলে জীবনে কখনও পরাজিত হবা না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও পরাজিত হননি। বড় প্রমাণ আমাদের ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।
বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদ্যমান ছিল বর্তমান সরকারের আমলে সে অবস্থা নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনীতির কূটকৌশল দিয়ে ঘায়েল করেছে আমাদের জননেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার, অস্ত্র বা গুলি দিয়ে নয়। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশে সব রাজনৈতিক দলের ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সভা-সমাবেশ চলছে।
২০১৩ সালে পেট্রোলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রাকে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে বিএনপি এবং তার মদদপুষ্ট দলগুলো। এছাড়া দিনের পর দিন বিএনপি ও তার দোসররা হরতাল ডেকে দেশের মানুষের জীবনের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার, সর্বোপরি মানুষের মৌলিক এবং মানবাধিকারকে যেভাবে নস্যাৎ করেছিল তাও জননেত্রী ও তার সরকার অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে দেশের মানুষের জীবনে নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করেছে। এসব দক্ষ রাজনীতিকের অসাধারণ সৎ নেতৃত্বের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। সুস্থ রাজনীতি চর্চার পরিবেশ গড়ে উঠেছে।
বিএনপি-জামায়াত আমলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে মানুষ ভয় পেত। অথচ যার জন্ম না হলে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। এমনকি ৭ মার্চের ভাষণ প্রায় নিষিদ্ধ করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পেছনে যে মহান মুক্তিযুদ্ধ সে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চর্চাও বন্ধ করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। আমাদের প্রিয় নেত্রী ও তার সরকার ইতিহাস বিকৃতিবিরোধী শাস্তিযোগ্য আইন প্রণয়ন করেছেন, যা উন্নয়নে সহায়ক। মিথ্যা সংবাদ প্রচার যাতে না হয় সেরকম আইনও প্রণয়ন এবং কার্যকর করেছে সরকার।
সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন ও বিচার বিভাগকে গণতান্ত্রিক করার লক্ষ্যে সংবিধানের যে ১৬তম সংশোধনী এনেছে তাও দেশের উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকার দেশের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে ও যাবতীয় উন্নয়নে ‘কার্যকরণ’ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় এবং সময় উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। আইন ও বিচার বিভাগকে মূল সংবিধানের আলোকে ঢেলে সাজাচ্ছে আমাদের প্রলিফিক সরকার, যা উন্নয়নের মূল ধারাকে গতিশীল এবং বেগবান করছে। দেশের শিক্ষাঙ্গনে তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। পূর্বের বিএনপি-জামায়াত ও এরশাদ সরকারের আমলের মতো উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে মারামারি, কাটাকাটি, হত্যা-নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও নেই। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে (২০০৬ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৯.৯০%, অথচ ২০১৩ সালে ৬৫.০৪%)। এমনকি কারিগরি শিক্ষার হারও বেড়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন- দেশের মোট শিক্ষার ১৪%-এর অধিক কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন যে, ২০২০ সালের মধ্যে এ হার ২০% এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার ৩০% হবে। বর্তমান সরকার উন্নয়নের সব পথ খুলে দিয়েছে। আমাদের সরকার বেকার সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে থানা ও উপজেলা পর্যায়ে বেকার যুবকদের ৬ হাজার টাকা মাসিক ভাতা প্রদান করছে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ হেন ভাতা নেই যা আমাদের দার্শনিক প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার দিয়ে যাচ্ছেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা প্রকাশস্বরূপ সরকারী চাকরিতে ৩০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করেছে। বাঙালী জাতিকে কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে গড়ে তুলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কৃতজ্ঞ হওয়ার দীক্ষায় দীক্ষিত করছে যা ইতিবাচক ভবিষ্যত সৃষ্টিতে সহায়ক।
উল্লেখ্য, জাপানে শিশুদের ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের নীতিবান সরকারও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আর একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে, আমাদের প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার দেশের প্রতিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে ডজনখানেক আইনকে কার্যকর ও বাস্তবমুখী করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবজাতি ও অন্যান্য প্রাণিকুলের জীবন ও অভিযোজনকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন থেকে বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে। আমাদের জাতির সাংস্কৃতিক বন্ধ্যত্ব দূর করতে নিজস্ব জাতীয় তথা বাঙালী সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাংলা ভাষাকে বিশ্ব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে বর্তমান সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসবই আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের বহির্প্রকাশ। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে জঙ্গীবাদও নির্মূল প্রায়, যা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিস্তার লাভ করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে এবং হচ্ছে। শত বাধার মুখেও বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের, এখনও বিচার চলছে।
এভাবে দেশের সব ক্ষেত্রে এতসব উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে আমাদের উন্নয়নের মানস প্রতিমা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুশাসনের (Good Governance) ফলে। উল্লেখ্য, উন্নয়নমূলক কাজগুলো সরকারকে সম্পাদন করতে বাধ্য করা যায় না। অর্থাৎ সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ে (দ্বিতীয় ভাগ) যে অধিকারগুলো উল্লিখিত হয়েছে সেগুলো ‘Programme Right’ কিংবা সেগুলোকে ‘Bean Ideals of the Constitution’ বলা হয়। যেগুলোর ভায়োলেশন সরকার ঘটালেও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮ (২) অনুযায়ী সরকারের বিরুদ্ধে কোন আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না কিংবা কোন প্রতিকারও পাওয়া যায় না।
অথচ আমাদের বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার এ বিষয়টি জেনেও নিজ দায়িত্বে দেশ এবং জাতির প্রয়োজনে উন্নয়নমূলক অসংখ্য কাজ একের পর এক সুসম্পন্ন করে যাচ্ছেন। যার জন্য আমাদের প্রিয় জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। আমরা গর্বিত জাতি এই কারণে যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনাকে অর্থাৎ এরকম একজন Leader of Speaking Order-কে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়েছি। ভবিষ্যতেও তাকে পাশে পাব বলে প্রত্যাশা রাখি।
লেখক: ডীন, আইন অনুষদ, আইন উপদেষ্টা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। (সূত্র: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ওয়েবসাইট)
আর/টিকে