ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

শীতে ঘাড় ব্যথা প্রতিকারে করণীয়

প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৯:৫৬ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

ডা. কামরুল আহসান

ডা. কামরুল আহসান

বেশে  কিছু দিন ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে মাঝারি ও ভারি শৈত্য প্রবাহের পর শীতের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। আবহাওয়াবিদরা  বলছে, জানুয়ারির শেষের দিকে আরও একটি শৈত্য প্রবাহের দেখা দিতে পারে। এমময় ঠাণ্ডা  জনিত কারণে ঘাড়ে ব্যাথা হতে পারে। একটু সচেতন হলেই এসব ব্যাথা জড়িত রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

শীতেও ঘাড় ব্যাথার প্রতিকারসহ খুটিনাটি বিষয়ে নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগীর অধ্যাপক ডা. কামরুল আহসান। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশেটিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন: শীতে ঘাড় ব্যথার বৃদ্ধির কারণ কি?

ডা. কামরুল আহসান: আমাদের দেশের মানুষ অধিংকাশ মানুষ কোন না কোন সময় কোমর ও ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগেন। শীতে ঠাণ্ডা জড়িত করণে এ  সমস্যা বেশি দেখা  যায়। ঠাণ্ডার কারণে অনেক সময়  স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল করতে  পারেনা। ফলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অনেকগুলো রয়েছে। যেমন বিভিন্ন ইনফেকশনের জন্য ঘাড় ব্যাথা দেখা দিতে পারে। সারভাইক্যাল, স্পনডাইলাইটিস, সারভাইক্যাল স্পনডাইলিস থেসিস। সারভাইক্যাল রিবস, সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া। সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলেপস বা হারনিয়েশন, যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। মাংসপেশী, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরির কারণে দেখা দিতে পারে। অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা বা অনিদ্রা কারণে ব্যাথা দেখা দিতে পারে, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ, হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ ও ক্ষয় অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ, হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া, রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ। আর্থ্রাইটিস, সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস, ফাইব্রোমায়ালজিয়া কারণেও ঘাড়ে ও কোমর ব্যাথা দেখা দিতে পারে।

একুশে টিভি অনলাইন: শীতে ঘাড় ব্যাথার উপসর্গগুলো কি ?

ডা. কামরুলআহসান: শুরুতে প্রাথমিকভাবে ঘাড় ব্যাথা দিয়ে  শুরু হয়। আস্তে আস্তে কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত বিস্তত হতে থাকে। ধীরে ধীরে কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব। এরপর বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে। সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। ঘাড়ের মুভমেন্ট ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়। এ ব্যাথা বেশি দিন থাকলে এক সময় দেখা হাত পা অবশ হয়ে যেতে পারে।

একুশে টিভি অনলাইন: ঘাড় ব্যাথা থেকে প্রতিকার পাবে কিভাবে?

ডা. কামরুল আহসান: পরীক্ষা নিরিক্ষা করে এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ঘাড় স্বাভাবিকভাবে মুভেমেন্ট করানো। কোন কারণ ব্যাথা হচ্ছে আগে সেটা খোঁজে বের করা। এরপর অ্যান্টিইনফ্যামেটরি ওষুধ সেবন করা। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এটিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ম্যানুয়াল বাম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং এই চিকিৎসাই ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ; যেমন-

ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রো-ওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি। কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

একুশে টিভি অনলাইন: ঘাড়ব্যাথা এড়াতে করণীয় কি?

ডা. কামরুলআহসান: সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা।মাথার ওপর কোনো ওজন না নেওয়া ভাল। স্বাভাবিকভাবে কাজ শেষ প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে। শক্ত বিছানায় ঘুমানো ও অভাস করতে হবে। ঘুমানোও সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দিতে হবে।

বাথ্যার তীব্রতা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) পজিশন না করা। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা। সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেননা। কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ না পড়া। এমনকি দীর্ঘক্ষণ একটানা টেলিভিশন দেখবেন না।

একুশে টিভি অনলাইন: ঘাড় ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে অনেক সময় অস্ত্র পাচার করা লাগে। এতে সফলতার কেমন আসে বলে আপনি মনে করেন?

ডা. কামরুল আহসান: ধারাবাহিতকভাবে চিকিৎসা দেওয়ার পর যদি ব্যাথা বিবারণ না হয় তাহলে আমরা অস্ত্র পাচারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। ব্যাথা তীব্রতা বাড়লে অনেক সময় দেখা যায় হাত পা অবশ হয়ে যায়। এমনকি স্বাভাবিকভাবে প্রসাব পায়খান করতে পারেনা। এ সময় অন্ত্রপাচার করেও বেশি লাভ হয় না। অনেক সময়  পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর দেখি আন্ত্রপাচার না করলে রোগীর বাচাঁনো যাবে না তখন আমরা তখন অন্ত্রপাচারের পরামর্শ দিয়ে থাকি। অন্ত্রপাচার করে অনেকেই ভালহয়েছে। তবে ঘাড়ব্যাথার শেষ চিকিৎসার হচ্ছে অন্ত্রপাচার।

একুশে টিভি অনলাইন: মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. কামরুল আহসান: একুশে টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ।