মেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে বিনোদন
রিজাউল করিম
প্রকাশিত : ১০:৪৪ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:২৩ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার
পথশিশু ও প্রতিবন্ধীরা কোনো বোঝা নয়; সমাজেরই অংশ। একজন হয়তো আশ্রয়হীন; অন্যজন শারীরিক বা বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী। তাদেরকে বুকে টেনে নেওয়ার নেই কোনো আপনজন। তাদের আবার কারো হয়তো ইচ্ছা থাকলেও বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এতো কিছু না থাকার সত্বেও তাদের যে সুন্দর একটি মন আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের মনে যে সুপ্ত কিছু আশা বা ইচ্ছাও আছে সে ব্যাপারেও দ্বিমত করার সুযোগ নেই। মানতেই হবে তাদেরও মন আছে। বন্দি জীবন থেকে বাহিরে বের হয়ে সুন্দর ও নির্মল পরিবেশ দেখার ও বিনোদন নেওয়ার সাধও রয়েছে তাদের রয়েছে। তাদের সেই ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিনামূল্যে বিনোদনের সুযোগ করে দিয়েছে দুটি শিশু পার্ক।
আজ শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁও অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলার ২৬তম দিনে সরেজমিন দেখা যায়, পার্ক দুটিতে শিশুরা বিভিন্ন রাইডে চড়ে সবার সাথে হই হুল্লা আর আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরাও এ আনন্দে অংশ নিচ্ছে। সাধারণ শিশুদের জন্য প্রতিটা রাইডে যেখানে নেওয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেখানে প্রতিবন্ধী ও পথশিশুদের সম্পূর্ণ বিনামূ্ল্যে এ আনন্দ উপভোগের সুযোগ দিচ্ছে।
বাণিজ্য মেলার পূর্ব পাশে (ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকে ইপিবি অফিসের নিকটবর্তী) প্রতিবন্ধী শিশুদের এ শখ মেটাচ্ছে সারিকা ফ্যান্টাসি এমাজিং ওয়াল্ড শিশু পার্কটি। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, অটিস্টিক আর প্রতিবন্ধী শিশুদের বিনামূল্যে বিনোদনের সুযোগ রয়েছে এখানে। ট্রেন, টু-ইস্ট, নাগরদোলা, হেলিকপ্টার, ঘূর্ণিসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি রাইড।
পার্কে দেখা হলো আবির আর আবিদ দুই ভাইকে। সঙ্গে রয়েছেন তাদের বাবা আব্দুল আজিজ। আবির ও আবিদের সঙ্গে আজিজও বোট রাইডিংয়ে উঠেছে। বোট থেকে নামার পর কথা হলো দুই জনের সঙ্গে। “রাইডে উঠে খুব আনন্দ পেয়েছো, তাই না?”-এমন প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই তারা এক সঙ্গে বলে উঠলো, “মজা মজা, হ্যাব্বি মজা।” রাইডে ভয় লাগছিলো কিনা-জানতে চাইলে তারা বলেন, “আব্বু আছে না? ভয় লাগবে কেন?”
শম্পা ও সৌরভ নামের অন্য দুই শিশুও মেলায় এসেছেন তাদের মায়ের সঙ্গে। মা শবনম মুস্তারিনে ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “বাচ্চা দুটোকে নিয়ে আজ এলাম বাণিজ্য মেলায়। মেলায় অনেক কেনাকাটা করেছি বাচ্চাদের জন্য। কিন্তু তাতে তাদের যতটা খুশি করতে পেরেছি, তার চেয়ে বেশি আনন্দিত করতে পেরেছি এখানে নাগর দোলাই উঠিয়ে।”
পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পলাশ ইটিভি অনলাইনকে বলেন, আমরা গত ৫ বছর ধরে মেলায় এ ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করি। এখানে সাধারণ শিশুদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ও পথশিশুদের বিনোদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনামুল্যে তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছি শুধু মানবিক মল্যবোধ থেকেই। কারণ তারাও সমাজের মানুষ।”
একইভাবে মেলার পশ্চিম-দক্ষিণ কর্নারে মেসার্স অন্তরা এন্টারপ্রাইজ করেছে আর একটি শিশু পার্ক। যেখানে ট্রেন, নাগরদোলা, ম্যাজিক বোট, সুইং চেয়ার, কর্পোরেট গাড়ি, হেলি কপ্টার, মেরি ঘোড়াসহ ১৫ ধরনের রাইড আছে। পার্কটিতে বিনোদন প্রেমী শিশু ও অভিভাবকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
পার্কের ম্যানেজার রিয়াজ আহম্মেদ ইটিভি অনলাইনকে বলেন, এবার মেলায় আমরা আশা করেছিলাম প্রতিদিন মেলায় গড় পড়তা ৫০ হাজার টাকা আয় আসবে। কিন্তু গড় পড়তা আয় আসছে ৪০ হাজার মতো। তবে আজ একটু বেশি হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। তিনি জানান, পার্কটিতে পথশিশু ও প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে রাইডিংয়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ শিশুদের জন্য বোট রাইডিং ৪০ টাকা ছাড়া সব রাইডিংয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা করে।
আরকে/টিকে