৭০ বছর ধরে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল
প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার
কথায় আছে, ‘হাকিম লড়ে, তবু হুকুম লড়ে না।’ মধ্যপ্রাচ্যের উৎকট ঝামেলার দেশ ইসরায়েলের বেলায় যেন এ প্রবাদটি খাপে-খাপ মিলে গেছে। গত ৭০ বছর ধরে দেশটি একই নীতি অনুসরণ করে আসছে। নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষার অজুহাতে দেশটি গত ৭০ বছর ধরে বিশ্বব্যপী তার নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে। আর তার সবকটি হত্যাকাণ্ড-ই ঘটেছে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে।
সারা বিশ্বে গত ৭০ বছর ধরে গুপ্তহত্যা মিশন চালানো ইসরায়েল বিভিন্ন দেশে নানা কৌশল ব্যবহার করে কমপক্ষে ২৩০০টি হত্যা মিশন চালিয়েছে। কখনো টুথপেস্টে বিষ মিশিয়ে, ফোনে বিস্ফোরণ যোগ করে, সশস্ত্র ড্রোন ও গাড়ির অতিরিক্ত চাকায় পেতে রাখা দূর নিয়ন্ত্রিত বোমা ফাটিয়ে এসব হত্যা মিশন পরিচালিত করে দেশটি। আর এসব হত্যাকাণ্ড ঢাকতে দেশটি বেছে নিয়েছে গুপ্তহত্যাকে।
দেশটির শত্রুরাষ্ট্র বিশেষ করে ফিলিস্তিনির বুদ্ধিজীবী ও বৈজ্ঞানিকদের হত্যার জন্যই এ মিশন শুরু করে তেল-আবিব। দেশটি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বদানকারী বেন ঘরি এ হত্যামিশন শুরু করেন। বলা হয়ে থাকে, রোমান শাসক সিসেরোর একটি ‘বিখ্যাত’ উক্তি ছিল এরকম-যুদ্ধের সময় আইন মরে যায়। তাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যখন বিদেশি শত্রুরা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে বরং সহিংসতার নীতি নেওয়ায় শ্রেয়। আর সেই দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ইসরায়েল বিশ্বজুড়ে শত্রু হত্যার নামে গুপ্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটি দুই হাজার ৩০০টি হত্যামিশন সম্পন্ন করেছে।
এর পর থেকেই শত্রুরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ও জনপ্রিয় মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের হত্যার জন্য এগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করে আসছে ইসরায়েল। দেশটির জাতীয় দৈনিক ইয়েদিয়ত আহারোনটের গোয়েন্দাবিষয়ক প্রতিনিধি রনিন বার্গম্যান তার লেখা নতুন বইয়ে এমন দাবি করেছেন। বইটিতে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত ও সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার রয়েছে। বইটির নাম ‘রাইস দ্য সিকরেট হিস্টোরি এন্ড অফ ইসরায়েল কিল টার্গেটেড অ্যাসোসিনেশনস ফার্স্ট।’
বইটিতে বলা হয়, ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটি নিরাপত্তা হুমকির নামে গুপ্তহত্যা চালিয়ে আসছে।। ইরানে সামরিক অভিযান না চালিয়ে দেশটির প্রায় আধা ডজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে তেল আবিব। এছাড়া ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করা হয়েছিল রেডিয়েশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করে। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ইয়াসির আরাফাতের হত্যাকাণ্ডের পর নতুন একটি প্যাটার্নও আনে দেশটি। তবে আরাফাতের সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে তথ্য থাকলেও তা প্রকাশ করা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে রনিনকে। এর কারণ হিসেবে তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সেন্সরশিপকে দায়ী করেছেন।
বইটিতে আরও দাবি করা হয়, ২০০১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশও এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ওই বইয়ে আরও দাবি করা হয় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টও এ ধরণের ৩৫৩টি হত্যামিশন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন- ‘নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, যুদ্ধ কক্ষ, চালকবিহীন যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও কৌশল- সবই এখন আমেরিকা ও মিত্ররা ব্যবহার করছে। এর বড় একটি অংশের উন্নয়ন ইসরাইলেই করা হয়েছে।’
ইয়াসির আরাফাতের হত্যার বিষয়ে রনিন লিখেছেন- ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আরাফাতকে হত্যার নির্দেশ দেন। ভূমধ্যসাগরে বিমান বিধ্বস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। অন্তত পাঁচবার তার নির্দেশে আরাফাতকে হত্যায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হস্তক্ষেপ করলে শ্যারনের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে এ বইয়ে কেবল ইসরায়েল আর মার্কিনিদের গুপ্তহত্যার জন্য দায়ী করা হয়নি। এ বইয়ে উঠে এসেছে বিশ্বে কিভাবে গুপ্তহত্যার ঘটনাগুলো বেড়ে চলেছে। উল্লেখ্য, পশ্চিমাবিশ্বসহ ক্ষমতাধর রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রের স্বার্থে গুপ্তহত্যা চালালেও, এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনরা এ ধরণের হত্যাকাণ্ড সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় ওই বইয়ে।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
এমজে/