ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ইটিভিকে আফজাল হোসেন

আমার ও সুবর্ণার মধ্যে বোঝাপড়াটা ভালো

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৪:০৮ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার

আফজাল হোসেন। এটি শুধু একটি নাম নয়, একটি প্রতিষ্ঠন। কারণ তিনি একাধারে একজন অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন এই খ্যাতিমান তারকা।

পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত হন এবং বিটিভি এর প্রযোজনায় নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি বক্স-অফিস হিট করা ‘দুই জীবন’, ‘নতুন বউ’, ‘পালাবি কোথায়’ নামক সিনেমার শক্তিমান অভিনেতা। ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের মডেলিং জগৎ কে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে তার অবদান অনস্বীকার্য। ২০১১ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শুধু একটাই পা’। এছাড়া তিনি ছবিও আঁকেন। নাট্য পরিচালক হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। সম্প্রতি একুশে টিভির একটি অনুষ্ঠানে তাকে ঘিরে জমে ওঠে আড্ডা। সেই আড্ডার চুম্বক অংশ দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- সোহাগ আশরাফ

সত্যি কথা বলতে সেই থেকে সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। প্রকৃতিতে বহুবার বসন্ত এসেছে। ফুলে, প্লবে ভরে গেছে বাগান। আবার সেই বৃক্ষের পাতা ও ফুল শুকিয়েও গেছে। কিন্তু লিজেন্ট তারকা আফজাল হোসেন ঠিক আগের মতই রয়ে গেছেন। বিন্দুমাত্র সেই চেহারার পরিবর্তন হয়নি। বরং সেই রূপ, যৌবন পূর্বের চেয়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভক্তরা তাকে দেখে আগেও যেমন মুগ্ধ হয়েছে, এখনও ঠিক একই ভাবে মুগ্ধ হচ্ছেন। কিন্তু এই তারুণ্যের রহস্য আসলে কি! কোটি ভক্তদের সেই প্রশ্নের উত্তর নিজের মুখেই দিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আসলে মুগ্ধতা কিন্তু রূপ-যৌবনের জন্য না। আমার ধারণা মুগ্ধতা অন্য কিছু। আর সেই কারণেই মানুষ এখন পর্যন্ত মনটাকে সুন্দর রাখতে পারে, তাই সব কিছু তার সুন্দর লাগে।

তারুণ্যের রহস্য নিয়ে তিনি বলেন- বেঁচে থাকাটা আনন্দের। আর সেই আনন্দটা ভেতরে থাকলে, ফিট থাকে কিনা জানি না, ভালো থাকা যায়। আমি ফিট কিনা তা জানি না, তবে আমার জীবনাচরণে আমি আনন্দে আছি। ভালো আছি। ভালো থাকার চেষ্টা করি। কোন জটিলতার মধ্যে থাকার চেষ্টা করি না।

আড্ডার এক পর্যায়ে আফজাল হোসেনকে প্রশ্ন করা হয়- যদি এখন নায়ক হিসেবে তাকে অভিনয় করতে বলা হয় তবে নায়িকা হিসেবে কাকে পছন্দ করবেন!

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন কাউকে নিব যে এখনও অভিনয় শুরুই করেননি।’

এসময় তাকে প্রশ্ন করা হয়- এখনও আপনি অভিনয় করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার চেয়ে অনেক কম বয়সি মেয়েদের সঙ্গে আপনাকে জুটি বাধতে দেখা যায়। সেটি কি দর্শক গ্রহণ করে বলে আপনার মনে হয়?

এর সহজ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে এই চিন্তাটা আমি করি না। এটা পরিচালকের কাজ।’

তাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো এখন পর্যন্ত আপনার অনেক ভালো এবং সফল কাজ দর্শক দেখেছে এর মধ্যে যদি একটির নাম জানতে চাই তবে কোনটির কথা বলবেন?

জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই কথাটা বলে থাকি যে-প্রত্যেকটি মানুষের জীবন কিন্তু একবারের জন্য। সুতারাং সেই জীবনটা মহা মূল্যবান। প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মূহুর্ত উপভোগ করাই হচ্ছে সফল কাজ।

আড্ডার এক পর্যায়ে একটি র‌্যাপিড প্রশ্ন করা হয় তাকে। বলা হয়- নাটকে প্রথম নায়িকাকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য আপনিই শুরু করেছিলেন। আর সেটি নাটকের একটি দৃশ্যে সুবর্ণা মোস্তফার সঙ্গে। সেই সময়ে বিষয়টি নিয়ে গোলাম মোস্তফার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো– আফজাল-সুবর্ণা একটু বেশি বেশি করছে। এটা আমাদের সমাজের সঙ্গে যায় না। তখন গোলাম মোস্তফা বলেছিলেন – ওরা নতুন প্রজন্ম। ওরাই পারবে আমাদের নাটকের ইন্ডাস্ট্রিকে পরিবর্তন করতে। ওদেরকে করতে দাও। এরকম একটি বিষয় সেই সময় শোনা গিয়েছিলো এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

উত্তরে আফজাল হোসেন বলেন, ‘এরকম কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে- আমরা তখন তরুণ। একটি নাটকে আমাদের সুন্দর একটি সম্পর্ক দেখানো হয়। আমরা এক সঙ্গে পড়ালেখা করি। আমরা পরষ্পরকে তুই করে বলি। সেই বিষয়টি একটি বড় অংশ আপত্তি জানিয়েছিলো। বলা হয়েছিলো এটা এক ধরণের বেয়াদবি। তবে গোলাম মোস্তফার যে বিষয়টি বলা হয়েছে- সেটা জুটি নিয়ে বলা হয়েছিলো। এমন যে- এরা জুটি হয়ে নাটক করছে। আপনি কি মনে করেন? উনি তখন বলেছিলেন- দুজন এক সঙ্গে অভিনয় করলেই জুটি হয় না। জুটিটা দর্শক তৈরি করে।’

তবে নিজের প্রিয় সহ শিল্পী ও জুটি সম্পর্কে এই তারকা বলেন, ‘এটা একটা স্বাভাবিক কথা যে, যখন আপনি যে কাজটি করবেন তার সঙ্গে যদি আপনি প্রথমও কাজ করেন, সেই অনুভুতিটা যদি আপনার প্রথম হয়ে থাকে বা কোন সংকোচ থাকে তবে কাজটা কিন্তু খুব সুন্দর হবে না। সুতারাং আপনি যার সঙ্গে বেশি করেন আর যার সঙ্গে প্রথম করছেন এই তফাতটা থাকলে কাজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু তারপরও আমি বলবো- অভিনয়টা একটা খেলাও। তারমানে আপনি যা করছেন তার বিপরিত দিক থেকে ফেরতও না অনেক কিছু। তো যার সঙ্গে আপনার বোঝাপড়াটা আছে। এ ক্ষেত্রে আমি সুবর্ণার সঙ্গে বহু নাটক করেছি। এক সঙ্গে আমরা মঞ্চে নাটক করেছি এবং আমাদের যে ধরণে সম্পর্ক। তাতে করে বোঝাপড়াটা অনেক বেশি।

অনুষ্ঠানে মজা করে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- যদি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা ও আপনি তিনজনের মধ্যে বলা হয় তবে কে অনেক ভালো বিজ্ঞাপন নির্মাতা।

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা প্রত্যেকেই আলাদা ধরণের। কেউ কারও মত নয়। কারও সঙ্গে আসলে তুলোনা চলে না। তাই যদি হতো তাহলে পৃথিবীতে চলচ্চিত্র নির্মাতা একজনই হতেন। বিশ্বে অসংখ্য নির্মাতা আছেন। অনেকের কাজই দর্শক গ্রহণ করছেন। সুতারাং এক একজন মানুষের এক একটি বৈশিষ্ট থাকে।

আমি নিজের সম্পর্কে বলতে পারবো না। তবে বাকি যে দুজনের কথা বলেছেন তারা অনেক পরিবর্তন এনেছেন এবং সেটা অবশ্যই খুব গুরুত্বের দাবি রাখে।

[একুশে টেলিভিশনের ‘উইথ নাজিম জয়’ অনুষ্ঠান থেকে নেওয়া]

অনুষ্ঠানটি দেখতে ভিডিওটি ক্লিক করুন :

এসএ/