রোহিঙ্গা নির্যাতনে দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে: মার্কিন মন্ত্রী
প্রকাশিত : ১০:৪৫ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নির্যাতনে দায়ীদেরকে চিহ্নিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম। ‘দি ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড দি ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়ন’ শীর্ষক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যারা দায়ী ব্যক্তি, তাদেরকেই চিহ্নিত করতে হবে। কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হলে, শুধু দোষীদের খুজে বের করে তাদের বিরুদ্ধেই করতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ। এতে বিআইআইএসএসের মহাসচিব মেজর জেলারেল এ কে এম আবদুর রহমান, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বলতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে বুঝি। গত কয়েক দশকে এ অঞ্চলে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাখো মানুষকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং সমৃদ্ধ মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্নয়নে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ এ অঞ্চলের একটি দুর্দান্ত সফলতার গল্প। গত দশ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
এ অঞ্চল জঙ্গীবাদ মোকাবেলা এবং ভারত সাগর থেকে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে নৌচালনার স্বাধীনতা ও বৈশ্বিক নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ্। আমরা বাংলাদেশের সাথে আমাদের নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের কদর করি এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনীতে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে অবদান রেখে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ পর্যাযে মূল্যায়ন করি।
তিনি আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা বিরোধ সমাধানে বাংলাদেশকে একটি মডেল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইবুনাল ফর দ্য ল’ অফ দ্য সী এর ২০১২ সালের মার্চ মাসে দেয়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমা বিরোধের সিদ্ধান্ত এবং ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতা প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক আইন মেনে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা যায়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও অন্যান্য ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো অবকাঠামো সংস্কারের ব্যয়বহুলতা এবং তাৎক্ষণিক কম টেকসই ফলাফলের জন্য নিম্ন মূল্যে বাণিজ্যের প্রলোভন।এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম বলেন, আমরা বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সম-মানসিকতার দেশগুলোর সাথে কাজ করতে আগ্রহী। যারা সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ এবং একটি আন্ত-যোগাযোগের ক্ষেত্রে সন্নিহিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল তৈরিতে আমাদের লক্ষ্যের ব্যাপারে একমত।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে জিএসপি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি পায় অপেক্ষাকৃত স্বল্পোন্নত দেশ। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে জিএসপি পাওয়ার ক্যাটাগরি অতিক্রম করছে।
বিআইআইএসএসের মহাসচিব মেজর জেলারেল এ কে এম আবদুর রহমান তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ উন্নয়নের একটি রোল মডেল। বাংলাদেশের এ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
আরকে/টিকে