ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর
ইতিহাসকে ধরে রাখার এক নিরন্তর প্রচেষ্টা
আলী অাদনান
প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:২৩ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের অাত্মদানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রভাষা অান্দোলন জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অামাদের মহান স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল ভাষা অান্দোলনের মধ্য দিয়ে। এ মহান ভাষা অান্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমানে অান্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যুগ যুগ ধরে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাঙালির মহান অাত্মত্যাগ ও বীরগাঁথা পৃথিবীর ইতিহাসে অম্লান ও চিরস্মরণীয়। ভাষা অান্দোলনের ইতিহাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর।
ধানমন্ডির ১০ নম্বার সড়ক দিয়ে ঢুকতেই ৫ নাম্বার বাড়িটার নিচ তলায় ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর। শুধু একটি কক্ষ নয়। বরং একটি ইতিহাস। আশেপাশে থরে থরে সাজানো বই অার বই। পুরনো পান্ডুলিপি, সংবাদপত্র, সংকলন, রেডিও। নানা ধরনের দলিল, নথিপত্র, স্মারক। দেওয়ালে সাজানো ভাষা সৈনিকদের বড় বড় ছবি। ছবির সঙ্গে পরিচিতি।
দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এবং অান্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার পরিচয়, ভাষা অান্দোলনের প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস, এ অান্দোলনের যাবতীয় তথ্যাবলি এবং ভাষা শহীদ ও ভাষা সংগ্রামীদের যাবতীয় স্মৃতি সংরক্ষণ করে জাতির কাছে তুলে ধরার নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই নিজ বাসভবনের একটি কক্ষে ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু করেন।
কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার সামান্য কিছুদিন পরেই প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মাহবুব প্রয়াত হন। তখন তার পরিবারের সদস্যরা স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে অাসেন। তাদের উদ্যোগেই ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি `ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ট্রাস্ট` গঠিত হয়। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ট্রাস্টি করা হয় কাজী গোলাম মাহবুবের স্ত্রী পেয়ারী মাহবুবকে। ট্রাস্টি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. কাজী মাহমুদুল হাসান, মহুয়া মাহবুব খান, কেয়া মাহবুব, কাজী মামুনুল হাসান। মূলত এ ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগে ও অর্থায়নে পরিচালিত হয় ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর। দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ভাষাসংগ্রামীদের পরামর্শে ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন এম অার মাহবুব।
মাতৃভাষা দিবসের চেতনা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বত্র তুলে ধরা, ভাষা অান্দোলনের ইতিহাসসহ যাবতীয় তথ্যাবলি সংরক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহশালা গড়ে তোলা এবং তা দর্শক ও গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা, ভাষাশহীদ ও ভাষাসংগ্রামীদের স্মৃতিচিহ্ন, স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা, ক্ষীয়মান বা মৃতপ্রায় ভাষাসমূহের ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক পরিচয় সংগ্রহের প্রচেষ্টা ভাষা অান্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘরের লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্য বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এম অার মাহবুব।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর প্রতিবছর ভাষাসংগ্রামীদের স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান, সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান এবং প্রতিবছর ভাষা সংগ্রামীদের মিলনমেলার অায়োজন করে। সারাদেশের ভাষা সংগ্রামীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তা গ্রন্থকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে অালাদা অালাদাভাবে ১৫ জন ভাষা সংগ্রামী ও একজন ভাষা শহীদের জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করেছে।
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম থেকে ভাষাশহীদ পরিবার, ভাষাসংগ্রামীর পরিবার এবং অান্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শতাধিক স্মৃতিচিহ্ন বা স্মারক সংগ্রহ করা হয়েছে।
ভাষা অান্দোলনের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার মূল কপি, সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল এবং সমকালীন অন্যান্য পত্র-পত্রিকা সংরক্ষিত অাছে ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘরে।
এছাড়াও গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কালচারাল ফোরাম এর সহযোগিতায় ভাষা অান্দোলনের ইতিহাস ও ভাষা সংগ্রামীদের জীবননির্ভর তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ চলছে।
ভাষা অান্দোলন গবেষণাকেন্দ্র ও জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
এসএইচ/