‘ছাত্রলীগের নেতিবাচক দিকগুলোই শুধু গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়’
প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ছাত্রলীগ নামধারীদের অপকর্মের কারণে সংগঠনটির সুনাম ক্ষুন্ন হওয়া, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, খুনখারাবি, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফ মঈনুদ্দীন এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের গৌরবের ইতিহাস তোলে ধরে ছাত্রনেতা আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, “পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কব্জায় নিয়ে প্রগতির চাকাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনা ও মূল্যবোধকে বিকৃত করে ও প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তোলে দিয়ে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার যে সংস্কৃতি চালু করা হয় তা থেকে ছাত্ররাজনীতি এখনো মুক্ত হতে পারেনি।
দীর্ঘ একুশ বছরে বিএনপি-জামায়াত মিলে আমাদের রাজনীতিতে যে জঞ্জাল তৈরি করেছে- তা পরিস্কার করে জাতিকে প্রগতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল ধারাতে ফিরিয়ে এনে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা নির্মাণের জন্যে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করছেন।” ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাজপথের সাহসী ছাত্রনেতা আরিফ বলেন, “জাতির দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ভূমিকা পালন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোসহ ছাত্রলীগ ইতিবাচক বহু কাজ করলেও এ নিয়ে গণমাধ্যম খুব একটা প্রচার করে না। শুধু ছাত্রলীগের নেতিবাচক দিকগুলো প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়।”
ছাত্রলীগের গোড়াপত্তনের ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিভাবান ও ত্যাগী ছাত্রনেতা আরিফ বলেন, “শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, স্বাধীন-বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া জীবন ও যৌবনের উত্তাপে শুদ্ধ সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মাণের কর্মীগড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম ও মানবীয় গুণাবলীর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৭০ বছর। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের প্রয়োজনে তৎকালীন উদীয়মান জননেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্টপোষকতায় একঝাঁক মেধাবী ও প্রগতিশীল ভাবাদর্শের ছাত্র নেতাদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় ছাত্রলীগের গোড়াপত্তন ঘটে। প্রতিষ্ঠাকালীন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।
জন্মলগ্ন থেকে এ সংগঠনকে আন্দোলন-সংগ্রামের এক কঠিনতম বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১১ দফা আন্দোলন, সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচন ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মুজিব বাহিনীর ব্যানারে ছাত্রলীগ একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ছাত্রলীগের ইতিহাস, সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের ইতিহাস। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ ৭ দশকের পথচলায় একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ হারিয়েছে সহশ্রাধিক নেতাকর্মীকে।”
এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রনেতা আরিফ বলেন, “ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি সর্বদা নানান ষড়যন্ত্র ও ছোবল মারার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে এ অশুভশক্তি সর্বদা তৎপর। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে নানা অপকর্মের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনকে বিতর্কিত করার সুগভীর কূটচাল চালাচ্ছে একটি চক্র। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অপতৎপরতা বন্ধ থাকলেও এখনো তারা প্রগতিশীল শক্তিকে ধ্বংস করার নীল নক্সা নিয়ে ওঁত পেতে আছে।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলা করে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, আমাদের প্রাণপিয় নেত্রী, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপকল্প পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তাই, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ স্বদেশ গঠনের ক্ষেত্রে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকেরাও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালীকরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
দেশের ছাত্র সমাজের উদ্দেশে কিছু বলার আহ্বান জানালে অত্যন্ত সজ্জন ও স্বনামধন্য ছাত্রনেতা আরিফ মঈনুদ্দীন বলেন, “ছাত্রজীবন মানবজীবনের সর্বোৎকৃষ্ঠ সময়। ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ। কাজেই একটি জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি-অবনতি তাদের ওপরই নির্ভরশীল। তাই সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অধ্যবসায়, চরিত্রগঠন, দেশপ্রেম ও দেশসেবার মতো গুণাবলী অর্জন করে ছাত্রসমাজকে আগামী দিনগুলোর জন্যে তৈরি হতে হবে।”
আরিফ মাঈনুদ্দীন মীরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামের মনিরুজ্জামান ভুঁইয়াবাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মরহুম বাবা মোহাম্মদ আলী নিজের হাতেগড়া বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে আমৃত্যু শিক্ষকতা করেছেন। চট্টগ্রাম জেলায় তিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। মীরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। তার মার নাম তমনারা বেগম। আরিফের ভাইয়েরাও সবাই উচ্চশিক্ষিত। বড় ভাই হাসান মাহমুদ মহিউদ্দীন ইয়াংওয়ান গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার। মেজ ভাই হাসান মাহমুদ সাইফুদ্দিন একজন বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার। তিনি একটেল (বর্তমানে রবি আজিয়াটা লিমিটেড)’র জিএম ছিলেন। বর্তমানে সস্ত্রীক কানাডায় বসবাস করেন এবং সেখানকার রজার্স টেলিকমের নেটওয়ার্ক স্পেশালিস্ট। ছোট ভাই ফিরোজ উদ্দিন তারেক চট্টগ্রাম জজকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত। আরিফ সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জাফরনগর অপর্ণাচরণ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নিজামপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক, চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি ও চট্টগ্রাম বিএড কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন।
আরিফ ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও জনহিতকর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি নিজ গ্রামের জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি ও জিএস, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ এর সদস্য, মীরসরাই অ্যাসোসিয়েশন-চট্টগ্রাম এর নির্বাচিত সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও পৃষ্ঠপোষক সদস্য, চট্টগ্রাম জেলা রেডক্রিসেন্ট এর আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম ডায়বেটিকস সমিতির সদস্যসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ ইউসুফ।
এসএইচ/