ব্যাংকিং খাতের শীর্ষে পৌঁছাবে রূপালী ব্যাংক
প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৯:১৭ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার
রাষ্ট্রীয় মালিকনাধীন রূপালী ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে ব্যাংকিং খাতের র্শীষে যাওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। আধুনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি, অনলাইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার, শ্রেণিকৃত ঋণ হ্রাস করা, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মুনাফা অর্জনের মধ্যে দিয়ে শীর্ষে নেওয়া হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, রূপালী ব্যাংক সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ২০১৭ সালেই রেকর্ড মুনাফা হয়। ২০১৩ সালে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ২০৫ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে ছিল ২৩২ কোটি। ২০১৫ সালে ২৫০ কোটি, ২০১৬ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়। তবে ২০১৭ সালে লোকসান সমন্বয় করে ৫৩৭ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে ব্যাংকটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ২৬ নম্বর আদেশ ‘দ্য বাংলাদেশ ব্যাংকাস ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২’ বলে তৎকালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড এবং অস্ট্রলেশিয়া ব্যাংক লিমিটেড-এই তিনটি ব্যাংকের সমন্বয়ে রূপালী ব্যাংক গঠিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি তথা ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্ক করার লক্ষ্যে ‘রূপালী ব্যাংক’ নাম দিয়ে এটিকে প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংকটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৫ এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সর্বশেষ ২০০১ সালেও বিএনপি-জামায়াত ব্যাংকটি বিক্রির জোর চেষ্টা করে। ব্যাংকের লোগো পরিবর্তন করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা হয়। সৌদি যুবরাজের নামে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝে খেজুর বিতরণ করা হয়। ধনিক ও বণিক শ্রেণিরা ব্যাংক ঋণের নামে ব্যাংকটির অর্থ লুটপাট করে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এসব সমস্যা সমাধান করে যোগ্য হাতে ব্যাংকের নেতৃত্ব যাওয়াতে ব্যাংকটি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট যোগদানের পর থেকে ব্যাংকের সামগ্রিক সমস্যা চিহ্নিত করে এর উন্নয়নে ব্যাপক কাজ শুরু করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, মুনাফা অর্জন, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়, আমানত বৃদ্ধি, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (সিওরক্যাশ) চালুসহ নানামুখী উন্নয়ন ও পরিবর্তন এনেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত লোগো বটগাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
গত পাঁচ বছরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বিভিন্ন খাতে ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর ২০১৭ সালে এর পরিমান বেড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ঋণের পাশাপাশি ব্যাংকের আমানতও বেড়েছে। ২০১৩ সালে এ ব্যাংকের আমানত ছিল প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ৩০ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। ব্যাংকের আমাদানি-রপ্তানির পরিমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে নগত আদায়ের পরিমান। ব্যাংকের লোকসানী শাখার সংখ্যা ৬৩ থেকে কমিয়ে ৩৩টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ আগে যে ৩০ শাখা লোকসান হতো সেসব শাখায় এখন লাভ হচ্ছে। সকল শাখায় অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। এতে করে গ্রাহকরা দেশের যে কোনো স্থান থেকে খুব সহজে রূপালী ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় রূপালী ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মায়েরা ঘরে বসে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছেন। যেটি রূপালী ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক করতে পারেনি। এ সেবার আওতায় দেশের ১ কোটি গ্রাহক রয়েছেন। যারা নিয়মিত উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করছেন। জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল সাধারণ মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা। বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের সেই স্বপ্ন রূপালী ব্যাংকই বাস্তবায়ন করছে। আর এর নেতৃত্বে রয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান।
রূপালী ব্যাংক সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান একজন যোগ্য ও দক্ষ লোক। তাঁর কর্মদক্ষতার মাধ্যমে তিনি ব্যাংকটিকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এটাকে স্বাগত জানানো দরকার।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে উদ্দেশ্যে রূপালী ব্যাংক সৃষ্টি করেছিলেন, তারই বাস্তব রূপ দিতে আমি কাজ করছি। আর এ কাজে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা আমাকে সার্বিক সহায়তা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে অনেক সমস্যা আছে। পর্যায়ক্রমে সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। ২০১৭ সালটি ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। আর ২০১৮ সাল হবে শীর্র্ষে যাওয়ার বছর। আমরা যেহেতু ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি তাহলে এবার শীর্ষেও যাওয়া যাবে। রূপালী ব্যাংক এখন একটি আধুনিক ব্যাংক। ভেতরে-বাইরে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রূপালী ব্যাংক এখন শীর্ষে।
টিকে