ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

গল্প নয় বাস্তব

গোয়েন্দাদের স্বর্ণ উদ্ধার কাহিনি

ড. মইনুল খান

প্রকাশিত : ০৯:৩৯ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার

ড. মইনুল খান। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সোনা চোরাচালানকারীদের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। জল, স্থল ও আকাশ পথে সোনা চোরাচালান রোধে অভিযান চালিয়ে বেশ আলোচিত তিনি। সোনা চোরাচালানের অভিযানের পেছনের তেমন একটি কাহিনী তুলে ধরেছেন এই লেখায়।

*ছেড়ে দিলাম ।

*স্যার, সত্যিই বলছেন?

*তোমার সাথে মশকরা করছি?

*স্যার আপনারা অনেক ভালো। আপনাদের মতো কেউ এমন ভালো বিহেভ করে নাই।

*মানে কী?

*স্যার আরেকবার ধরা খাইছিলাম। কিছু পায় নাই। মাইরও দিছে। অনেকদিন ভুগছি। আপনারা মাইর দেন নাই। মনে করছিলাম এবারো মাইর খাইতে হইবো।

সাদেকের সাথে কথা। শরীফকে সন্দেহে ধরেছে। নিশ্চিত নয়। সোর্স বলছে কিছু আছে। পাওয়া যাচ্ছে না। দেহ তল্লাশি। ৩৬০ ডিগ্রি। তল্লাশির কোড। এটি সর্বোচ্চ। বাহির-ভেতর, উপর-নিচ। লজ্জা স্থান। কোন কিছু বাকি নেই। প্রথমে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। পরে খালি হাতে। হাত অনেক সময় বেশি কার্যকর। মেটাল ডিটেক্টর ফেইল করে। হাত ফেইল করে না। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে এখনো বড় কিছু ডিটেক্ট হয়নি। যা হয়েছে হাতে। চোরাচালানকারী জানে মেশিনের ক্যাপাসিট্ সেভাবেই প্রস্তুতি আর্ট। দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করে। চর্চা । এরপর মাঠে। দীর্ঘদিন চলে। ধরা পড়লে অন্য পথে। নতুন পদ্ধতি। কৌশল। প্রশিক্ষণ। লেনদেন। নতুন লোক। শরীফ আহমেদ বলছে।

*এতো কিছু তুমি কীভাবে জানো?

*স্যার আমার বন্ধু এই কাজ করতো। আমি ওর কাছে জানছি।

*ওর নাম কী? কোথায় থাকে?

*স্যার এখন মালেশিয়ায়। আগে ঢাকায় ছিলো। তিন মাস হয় মালয়েশিয়ায় গেছে।

*নাম কী?

*কমল  

নামটি লুকাতে চাচ্ছে শরীফ। সাবলীল। জড়তা নেই। তবুও সন্দেহ। কোথাও একটা গরমিল। সাদেক হোসেন নাছোড়। আড়াই ঘন্টা হলো। রাত তিনটা। সাড়ে বারোটায় ধরা হয়েছে। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ। কিছু বের হচ্ছে না। ব্যাগে কিছু নেই। শরীরেও না।

কারোর কাছে হস্তান্তর হয়েছে?

তা হবে কেন?

বোর্ডিং বেল্ট থেকে নজরদারি যাত্রীর লাগেজ বেল্টে। গোয়েন্দারা বেল্টে অপেক্ষা করছে । ওয়াকিটকিতে কল,

*স্যার, টার্গেটকে খুজেঁ পাচ্ছি না। কোথায় গেলো?

* টার্গেট সাড়ে ১২ টায় ইমিগ্রেশনের লাইন ছিলো। কোথায় যাবো? টয়লেট দেখো।

*স্যার দেখছি। টয়লেট নেই। টয়লেট খালি। সবগুলো দরজা ফাঁকা। কেউ নেই।

* দ্রুত বাইরে চলে যাও।

শরীফ দ্রুত ইমিগ্রেশনের থেকে কাস্টমস হল পার হতে যাচ্ছে। স্ক্যানিং মেশিন হ্যান্ড লাগেজ চেকিং। কিছু নেই। যেতে দেওয়া হলো গ্রিন চ্যানেল। বেল্টে না পেয়ে দ্রুত বিধান রায় চলে গেছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। মনিটরে দেখে নিলো। সময় দিয়ে রিউইন্ড করে নিলো। হলুদ গেঞ্জি। চিনতে সহজ হলো। মনিটরে দেখা যাচ্ছে। এখন গ্রিন চ্যানেল। বিধান যাওয়ার আগেই থামলো ইমামের ইশারায়। গোয়ান্দা ইমাম দাঁড়িয়ে ওয়াচ করছে। ব্রিফিং পেয়েছিলো প্রি-শিফটিং আলোচনায়। বিধান চলে গেলো প্লেনের দরজায়। বোর্ডিং ব্রিজ স্পেস নেই। দূরের বে-তে পার্ক করেছে মালিন্দো এয়ারলাইন্স। ফ্লাইট অডি ১৬২। মালেয়েশিয়া থেকে এসছে। রাত ১২টা ১০ মিনিটে। বাস দিয়ে টার্মিনাল ভবনে এসছে। বাসে চড়েছে বিধান। অনুসরণ করে নিয়ে এসেছে ইমিগ্রেশন হলে। ভিড় কম। আরো তিনটা ফ্লাইটও অবতরণ করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ভিড় বেড়ে গেলো। একসাথে তিনটি ফ্লাইট। সামাল দেওয়া হিমশিম কাস্টমস কর্মকর্তাদের। এরমধ্যে গোয়ান্দাগিরি। এতো যাত্রী। ২০০ করে ৬০০ যাত্রী। তিনটি ফ্লাইট সমান স্পর্শকাতর। পাঁচজন কর্মকর্তা, দুজন সহযোগীসহ সতজনের টিম। একজন ছুটিতে। অল্প জনবলে বিশাল এয়ারপোর্টের নজরদারির দায়িত্ব। ‘এ’ শিফট চলছে। রাত ৯ টা থেকে সকাল ৯টা। টানা ১২ ঘণ্টার শিফট। ফ্লাইট সর্বদা থাকে না। রাতে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায়।

সাদেক সহকারী পরিচালক। বিধান ও রবিউল গোয়েন্দা কর্মকর্তা। টর্গেটকে নজরদারি দায়িত্ব। সাথে সিপাই ইমাম ও নাসির। বিধানের অনুমান হলুদ গেঞ্জির যুবকই শরীফ। নজরে নিয়ে এসেছে কাস্টমস হলে। টের পায়নি শরীফ। বয়স ৩০ থেকে ৩২ এর মধ্যে। পাশে বসেছিলো বাসে। টেলিফোনে কল শরীফের।

হ্যালো, মামা আমি নামলাম।

ফোনটি ওপার থেকে এসেছে। ছোট করে কথা। আমি গেঞ্জি পরা, হলুদ গেঞ্জি। জিন্স পরা, সাথে কেডস। ইন করা আছি। সাথে কালো কম্পিউটার ব্যাগ। বিধান শুনছে। টের পাচ্ছে না শরীফ। যাত্রী ভেবে আনন্দে কথা বলছে। নিরাপদে বের হবার কথা বলছে। দূরে আরেকজন। হলুদ গেঞ্জি। তবে বয়স ৫০ –এর মতো। বয়স সম্পর্কে গোয়েন্দার আগাম তথ্য ফোনে। এসএমএস মিলালো। হলুদ গেঞ্জি। বয়স৩০ থেকে৩২। বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং। তথ্য এইটুকু। ৬০০ যাত্রী। এর ভেতর বের করতে হবে। অন্য গোয়েন্দারা বাকি দুই ফ্লাইটের দায়িত্বে। বিধান দুজনকে সন্দেহের মধ্যে রেখেছে। একজন হবে ঐ লোক।

*আমার নাম ইমাম। শুল্ক গোয়েন্দা। এই আমার কার্ড। আমি এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আপনি কোথা থেকে এসেছেন প্লিজ?

* মলয়েশিয়া থেকে।

* আপনার চেকড ইন ব্যাগ কোথায়?

* নেই। হ্যান্ড ব্যাগ সাথে আছ।

* কয়দিন পর আসছেন?

* তিনমাস।

* কী করেন?

* ব্যবসা।

* ছোট ব্যাগ কেন? আর লাগেজ নেই?

* না স্যার।

* হাতে খাবার কেন?

* বিমানের ভেতর দিছে। খাই নাই। বাইরে গিয়ে খামু।

* আপনার পাসপোর্টটি দেখতে পারি?

* কেন দেখবেন। ইমিগ্রেশন পুলিশতো দেখছে। আপনি দেখবেন কেন? আপনি জানেন কার সাথে কথা বলেছেন। আপনাকে দেখে নিবো। আপনার নাম কী? পদ কী? কোথায় পোস্টিং? আপনার বসের নাম কী? এরকম অনেক হুমকিমূলক প্রশ্ন।

* আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি কেবল। পাসপোর্ট দিতে বলছি, দিয়ে দেন। চেক করবো।

* দেখবেন কাকে কল করবো? আপনি দৌঁড়ে পালাবেন।

* আপনার নাম কী? বাড়ি কোথায়?

* ওমর। বাড়ি ‍বুড়িচং।

*পাসপোর্ট দেখি।

ইমাম পাসপোর্ট দেখলেন। পাতা উল্টালেন। যাত্রী বলেছেন তিনমাস পর এসেছেন। পাসপোর্টের সিল বলছে, দুদিন আগে গেছেন। এখানে কথার অমিল। নাম বললেন, ওমর। পাসপোর্টে আছে শরীফ আহমেদ। বয়স ৩১। বড়ি বুড়িচং, কুমিল্লা। বাড়ির তথ্য সত্যি বলেছে। বাড়ির জবাব পাওয়ায় ইমামের সন্দেহ হয়। টার্গেটের বাড়িও ঐ এলাকায়। বয়স, গেঞ্জির রঙ মিলে যাচ্ছে। বিধান সিসিটিভি মনিটরে দেখছে, হলুদ গেঞ্জি গ্রিন চ্যানেলে দাড়িঁয়ে। কথা বলছে ইমামের সাথে। আশ্বস্ত হলো। বাইরে বের হতে পারেনি। হলেও গোয়েন্দা রবিউলের ব্যারিকেড। বাইরে অপেক্ষা করছে হলুদ গেঞ্জির। বের হবার পথ একটা। সবাইকে চেক করার দরকার নেই। সন্দেহভাজনকে আটকানো প্রথম কাজ। ৬০০ থেকে ৬ জনের বেশি হবে না। সদর দপ্তর থেকে কড়া নির্দেশ। বিকেলে সবাইকে ডেকে আনা হয়েছিলো। এটা আটকাতে হবে। তথ্য দিলাম। কিছু ইঞ্জিত। তবে আর বেশি তথ্য পাওয়া গেলো না। এখান থেকে বের করা ‘এ’ শিফটের জন্য চ্যালেঞ্জ। এখানে গোয়েন্দাদের সফলতা। কম হস্তক্ষেপে বেশি প্রাপ্তি। কাজ কম, ফল বেশি। একজনকে ধরতে গিয়ে সবাইকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। গোয়েন্দা তথ্য যাচাই করে নিতে হবে। বড় ক্ষেত্র থেকে জাল ছোট করে আনতে হবে। সন্দেহ সীমিত করে আনতে হবে। মানদণ্ড প্রয়োগ করতে হবে। সদরের স্থায়ী আদেশ। মনে করিয়ে দেওয়া হলো। বিধান যোগ দিলো ইমামের সাথে। একই প্রশ্ন। এবার ভিন্ন উত্তর। পাসপোর্টের সাথে মিল নেই। এলোমেলো। হুমকি একই। দেখে নেবো। এখনই লোক আসবে। চাকরি থাকবে না। বদলিতো হবেই। বসের নাম কী? পদ কী? কোথায় থাকে?

বিধান চুপ। ইমামও। প্রতিক্রিয়া দেখালো না। হাঁকডাকে অভ্যস্ত। ভয় পেলো না। আরো সন্দেহ হলো। এতো রাগ দেখাবে কেন? দুর্বলতা না থাকলে স্বাভাবিক থাকবে। রাগ হওয়ার কারণ নেই। দায়িত্ব পালন করছে গোয়েন্দারা। পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞাসা করছে। স্বাভাবিকভাবে নেওয়াটা স্বাভাবিক। ভয় দেখাতে হবে কেন? শেষের প্রশ্নটি কিসের ইঙ্গিত? বিধান বলছে, আমি জানি আপনি বড় মাপের লোক। আপনার আত্মীয় হবে কেন? শেষের প্রশ্নটি কিসের ইঙ্গিত? বিধান বলছে, আমি জানি আপনি বড় মাপের লোক। আপনার আত্মীয় বড় কর্তা। আমরা আপনাকে সম্মান দেখাতে চাই। ভেতরে চলেন। আমাদের স্যারের সাথে সৌজন্য কথা বলেন। এক কাপ চা খাবেন। আপনার পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আপনি আমাদের কাছে সম্মানীয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মাঝে শরীফ। পেছনে ইমাম। বিধান নিয়ে যাচ্ছে। শিফট ইনচার্জ সহকারী পরিচালক সাদেক অপেক্ষা করছে রুমে। ওয়াকিটকিতে জানিয়েছে শরীফের কথা। সবকিছু জানছে। ক্যামেরায় দেখছে শরীফের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। বুঝছে, শরীফ বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আরো নিশ্চিত হচ্ছে। এটি দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলো।

সাদেক চৌকশ। ৩০তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। মৃদুভাষী। তীক্ষ্ন আইকিউ। কমান্ডের প্রতি অকাট্য অনুগত্য। গোয়েন্দা কৌশলে আছে বিশেষ আগ্রহ। বগি ল্যাঙ্গুয়েজ আকর্ষনীয়। কণ্ঠ ভারী। চার বছর হলো চাকরী। বিদেশ প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। আরো আত্মবিশ্বাসী। বিকাল সাড়ে ৫টায় কাকরাইলের সদর দপ্তরে ডেকে আনা হলো। সাথে শিফটের সকলকে। মিনি করফারেন্স হলে ব্রিফিং। এনিমিশন করে দেখানো হলো। কোথা থেকে আসবে? কী আসবে? শনাক্তের পদ্ধতি? পরিচয়? এরপর কীভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে? সকলে বুঝে নিলো। তবে সুনির্দিষ্টভাবে আর তথ্য নেই। বিধান আরো কিছু জানতে চাইলো। বললাম, এখনি পেয়েছি। টার্গেট প্লেনে উঠেনি। আরো পাওয়ার চেষ্ঠা চলছে। নেটওয়ার্ককে অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। সময় আছে। প্লিজ কিপ ইট কনফিডেনশিয়াল। ডিভাইস অন রাখতে বললাম। কাকরাইল থেকে সরাসরি শিফটের সদস্যরা এয়ারপোর্ট হাজির। একঘণ্টা আগে থেকে পৌঁছে গেছে আজ। রাত ৮ থেকে ডিউটি করছে ‘এ’ শিফট।

* হাই মি. শরীফ আহমেদ, হাউ আর ইউ? প্লিজ সিট ডাউন।

* আপনি কেন আমাকে ডাকলেন?

* আমি দুটো কথা বলবো। একসাথে চা খাবো।

* আমি চা খাবো না। আপনি জানেন আমার আত্মীয়……

* আপনি কি করেন?

* ব্যবসা। প্রতিবছর ট্যাক্স দেই। আমি একজন সম্মানিত করদাতা।

* গত একবছরে আপনি দশবার বিদেশ গেছেন। এবার ‍আপনি দুদিন আগে গেছেন। কতটাকা খরচ হয়েছে?

* এবার ৮০ হাজার টাকা।

* আপনি কীসের ব্যবসা করেন বললেন নাতো?

* ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। আয় হয় মাসে ৩০ হাজার টাকা।

* বিদেশ যাবার এতো টাকা কোথায় পেলেন? ট্যাক্স কত টাকা দিয়েছেন?

* আপনার জানতে হবে কেন?

* আপনি চা খাচ্ছেন না কেন? পানি খান। সাথে বিস্কুট। পানিটা বোতলের। খেতে পারেন।

*এখন খাবো না।

* আপনার হাতে প্লেনের খাবার কেন? প্লেনে খাননি? নিশ্চিয় ক্ষেদে পেয়েছে? প্লিজ খান।

*পেটে খিদে নেই।

*আপনার চোখে দাগ কেন? দুই চোখে কালো দাগ পড়েছে কেন?

*দু’দিন ঘুমাইনি। এজন্য হয়তো।

ইমাম হাতের মোবাইলটি গ্রিন চ্যানেলে কেড়ে নিয়েছিলো। টিপস অনুযায়ী টার্গেট সন্দেহ হলে হাতের মোবাইল সারিয়ে ফেলতে হবে। কথা বলার সুযোগ দেয়া যাবে না। একা করে রাখতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে। অসঙ্গতি আছে কিনা দেখতে হবে। জড়তা পেয়ে বসেছে কি না। ইমামের প্রশ্নে জবাব কড়া হলেও শরীফ চক্ষু সংযোগ করেনি। অন্যদিকে তাকিয়ে কড়া কথা শুনাচ্ছে। ইমামের বুঝার বাকি রইলো না শরীফ কিছু একটা আড়াল করছে। সন্দেহ অমূলক নয়। বিধান এসে আরো নিশ্চিত হলো। খাওয়ার প্রতি অনীহা কেন?  একগ্লাস পানিও না। মুখ শুকনা। বুঝা যায় সারাদিন খায়নি। প্লেনের খাবারটিও না। হাতে করে নিয়ে এসছে। প্লেনের খাবার হাতে আনার রহস্য কী? মিলিয়ে দেখার চেষ্টা । শরীরে ক্লান্তির ছাপ। চোখের বাইরে কালো দাগ। চোখের পাপড়ি ঘন ঘন পড়ছে। চোখের পানি শূন্য। আই কন্টাক্ট নেই। এদিক সেদিক চোখ । চোখ দেখাতে চাইছে না। কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা। সম্মানিত ব্যবসায়ী কেন এমন করবেন?  যার আত্মীয় এতো বড় কর্তা তিনি কেন এই আচরণ করবেন ? সাদেক টেলিফোনে সদর দপ্তর জানালো। কথামতো আবার প্রশ্ন। আরো জানার চেষ্টা করছে অসংলগ্ন উত্তরগুলোর।

অনুমান ভুল হওয়ার কথা নয়। সাদেক আগেরবারও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। ওর উপর অগাধ বিশ্বাস। দুটো তথ্য। নেটওয়ার্ক থেকে এসেছে। করাচি থেকে শান্তি আলম নামের যাত্রী আসবে। দুবাই আসবে। প্লেন অবতরণ করেছে। সময় কম। যাচাই করা হয়নি। পণ্য জাল রুপি। বাংলাদেশে ঢুকবে। এরপর পাশের দেশে যাবে। এর আগেও আরো আটক হয়েছে। সবচেয়ে বড়টি হয়েছে ৬ কোটি রুপি। ৪ টি কার্টন ভর্তি ১২০ কেজি ওজন। খোলার পর থরে থরে রুপি। ১০০০ ও ৫০০ রুরির নোট। নতুন। দেখতে হুবহু এক। নকল টাকা আসলের মতো। সাদেকের কাছে তথ্য গেছে। নিশ্চিত সর্বোচ্চ  চেষ্টা হবে। টার্গেটের নামটিও অস্পষ্ট। সাদেক প্যাসেঞ্জার লিস্ট নিলো। শন্তি আলম বলে কেউ নেই। বিশ মিনিটের মধ্যে প্লেন ল্যান্ড করবে। মি. আলম দিয়ে দেখলো। তিনজন আছে। এস আলম নেই। তবুও বের করতে হবে। ইমিগ্রেশনে গিয়ে তিনজন আলমকে বের করলেন। একজন মহিলা । নিলা আলম। আরেকজন আমেরিকা থাকেন। বয়স ৬৭। পেশা ডাক্তার । ড. কুদরাত আলম। অন্যজন বাচ্চা। বয়স ১১। বাবা-মা সাথে। কানাডা থেকে এসেছে। সাদেক হতাশ হলো না। লাগেজ বেল্টে ২৩০ জন যাত্রী অপেক্ষা করছে। এদরে ভেতর থেকে বের করতে হবে। কীভাবে? চ্যালেঞ্জ। আবারো টেলিফোনে মেসেজ দেয়া হলো এই ফ্লাইটে এসেছে। বের করতে হবে। স্ক্যানিও  মেশিনে ধরা পড়বে না। কেমিকেল মিশিয়ে আনে। কালো ও মোটা টেপ দিয়ে মুড়িয়ে আনে। এক্সরে ইমেজে স্পষ্ট নয়। ম্যানুয়াল পরীক্ষা আরো নির্ভরযোগ্য । স্ক্যানিং মেশিনের পরে দুটো গোয়েন্দা স্তর সাজানো হলো । গ্রিন চ্যানেলে অপেক্ষা করছে গোয়েন্দারা । সাদেক দ্রুত এয়ারলাইন্স থেকে আরো বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে নামলো। তিনজন যাত্রী করাচি থেকে দুবাই ট্রানজিট নিয়ে ঢাকায় এসেছে। এই তিনজনকে শনাক্ত করলো। দুজন প্রফেসর। লেকচার দিতে করাচি গিয়েছেন। অন্যজন সন্দেহজনক হলো। তাকে আলাদা করে ব্যাগ তল্লাশি করে ১.৯০ কোটি রুপি ধরা পড়লো। ক্লুলেস তথ্যে সাদেক বড় ধরনের সাফল্য দেখিয়েছে। আজকের অভিযানটি আরো বিশ্বাসযোগ্য । শনাক্তও হয়েছে। সন্দেহের কারণও স্পষ্ট।

সাদেক এবার ভিন্ন কৌশল নিলো। শরীর তল্লাশি করেও কিছু পাওয়া গেলো না। আজকের তথ্য সোনা চোরাচালানের। হাতের ব্যাগটিও তন্ন তন্ন করে দেখেছে গোয়েন্দারা। স্ক্যানিং মেশিনেও দেয়া হলো । কোন ফল নেই। সাদেক হতাশ হলো না। বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকলেও তা কাজে লাগাতে হবে। শরীফকে যেতে দেয়া হলো । বুদ্ধি আসলো। পেটে স্বর্ণ থাকলে হাঁটায় অস্বাভাবিকতা থাকবে। সহজভাবে বলে দিলো, তুমি এখন যাও । তুমি মুক্ত। শরীফ খুশি হয়ে ধন্যবাদ দিলো। মাফ চেয়ে নিলো রাগারাগির জন্য । অন্যায় হয়েছে। বুঝতে পারিনি। টার্গেটে হাঁটছে । কাস্টমস হলে হাঁটছে। পেছনে সাদেকের গোয়েন্দারা তীহ্ম দৃষ্টি। চলাফেরায় অস্বস্তি আছে কি না। স্বাভাবিক । চেহারায় অসংলগ্নতা থাকলেও কথায়, হাটাচলায় জড়তা নেই। রাগারাগির জ্ঞানটা টনটনে। হাঁটছে ধীরে গতিতে। মিলছে না। আগের চালানটি ধরা পড়েছে হাঁটার ভঙ্গি দেখে। গ্রিন চ্যানেলে চ্যালেঞ্জ করতেই মঞ্জু  হক ধরা পড়েন গোয়েন্দার জালে। সেক্টাম থেকে ৮ পিস স্বর্ণবার উদ্ধার হয়। এই স্বর্ণ সাদেকের টিম উদ্ধার করে । হাঁটতে পারছিলো না যাত্রী। আগে থেকে তথ্য ছিলো। চোখে দাগ ছিলো। তবে যাত্রী ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল। সহসাই স্বীকার করলো, ভাই আমাকে শ্রীঘ্রই  বাথরুমে নিয়ে চলেন। আমার ভেতর ৮ টি বার আছে। নিজেই বের করে আনলেন। জিজ্ঞাসাবাদে মঞ্জু জানায়, অনেকক্ষণ হরো রেক্টমে স্বর্ণ ঢোকানো হয়েছে।

পেইনকিলার দেয়া হয়েছিলো। কুয়ালালামপুরে এই ঔষধ দিয়ে প্লেনে উঠেছি। ৫ ঘন্টা থাকে এর মেয়াদ। প্লেন চাড়তে দুই ঘন্টা দেরি হওয়াতে পেইন উঠে গেছে। ব্যাথা সইতে পারছে না। নিজে বের করে আরামবোধ করছে মঞ্জু । সাদেক এই যাত্রীর বেলায় মিলিয়ে দেখছে। সন্দেহমুক্ত থাকতে চায়। গ্রিন চ্যানেল পর্যন্ত দেখলো। বাইরের দৃশ্য মনিটরে ভেসে উঠছে। কোন অস্বাভাবিকতা নেই। নিরাশ হলো না সাদেক ।

* স্যার, ৩৬০ ডিগ্রি তল্লাশি হয়েছে। হাঁটা স্বাভাবিক।

* তুমি কি সন্দেহ করছো?

* জ্বি স্যার। তার চোখ ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে সামথিং ইজ রং । স্যার টার্গেট পানি পর্যন্ত খায়নি। চোখের নিচে কালো দাগ। এটি আরো সন্দেহজনক । প্লেনের খাবার খায়নি। হাতে করে এনেছে। দুদিন গেছে, ছোট হ্যান্ড লাগেজ এনেছে। চেকড েইন লাগেজ নেই। দ্রুত কেটে পড়ার ইচ্ছা ।

* তোমার সন্দেহের যুক্তি আছে। কথামতো বাকি কাজগুলো করো।

আবার শরীফকে ডেকে আনা হলো । ইমাম পেছনে পাহারায়। বিধান মেসেজ পেয়ে ফেরত নিয়ে আনলো। স্যার, জানতাম ওকে ফিরিয়ে আনবেন। বিধান আরো বললো, স্যার মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে কাজ হচ্ছে না । আর্চওয়েতে নিতে হবে। কাস্টমাসের আর্চওয়েতে ঘুরিযে আনার অনুমতি চােইরো। আর্চওয়ের লাইট জ্বলছে। ভেতর দিয়ে হাঁটারো তিনবার । কোন শ্বদ নেই। হাতে মেটালের ঘড়ি। তবুও শব্দ নেই। বিধান ভরসা পেলো না । ভিআইপি গেটের আর্চওয়ে নতুন। তিন বছর হরো বসানো হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হলো। এখন পর্যন্ত তেমন কোন উদ্ধার হয়নি। তবে আর্চওয়ের উপস্থিতি একধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিধান ভিআইপি আর্চওয়েতে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলো। সাদেক অনুমতি দিলো । কাস্টসম হলের বাইরে। ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশের পথে এই আর্চওয়ে । এটি অপেক্ষাকৃত নতুন। এখানে চারবার আসা –যাওয়া। শরীফ ক্লান্ত। যেভাবে বলছে সেভাবেই পোশাক খুলছে। একবার অল্প শব্দ হলেও বাকি তিনবার হয়নি। আবার আনা হলো শিফট ইন চার্জের রুমে। শরীফ কিছুতেই স্বীকার করছে না। পেটে স্বর্ণ থাকার প্রশ্নই আসে না। আবার আনা হলো শিফট ইন চার্জের রুমে। শরীফ কিছুতেই স্বীকার করছে না । পেটে স্বর্ণ থাকার প্রশ্নই আসে না। হয়রনির অফিযোগ। শরীফের কন্ঠ উচ্চ। সাদেক নিরাশ হলো না। সাদেক মানসিক চাপ প্রয়োগের আশ্রয় নিলো। নানাভাবে প্রলোভন । বলা হলো, নিজে থেকে বের করে দিলে ছেড়ে দেয়া হবে। সাজা যাতে কম হয় সেই ব্যবস্থা করবে। শরীফকে রাজী করানো গেলো না ।

 ৩-৩০ টা । গভীর রাত। কাস্টমস হল খালি। কাস্টমস হলে কোন যাত্রী নেই। লাগেজ সংগ্রহ করে আরো ঘন্টখানেক আগে বের হয়ে গেছে। বাইরেও ভিড় নেই। মনিটরে দেখছে সাদেক । রেন্ট-এ-কারের ড্রাইভারদের দেখা যায় না। এতোক্ষণ ছিলো। কাস্টমার না থাকায় এরাও চলে গেছে। ভোরে আবার আসবে। সকালে অনেকগুলো ফ্লাইটের শিডিউল আছে । মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট। দুবাই ফ্লাইট বেশি। ভালোভাবে দেখতে হবে। প্রস্তুতি নেয়া দরকার। মনিটরেও ইটিএ দেখাচ্ছে সকাল ৭ টা। ইকে ৫৮৪ । বহির্গমন লাউঞ্জে কিছু ভিড় আছে। ভোরে বেশ কিছু ফ্লাইট ছাড়বে। এখনি যাত্রী আসা শুরু হয়েছে। দোতরায় গাড়ি যাচ্ছে। বহির্গমন যাত্রীরা সকালের ফ্লাইটের জন্য এখনি আসা শরু করেছে। সাদেক ভাবছে, অনেকক্ষণ হলো। সাথে চেষ্টাও । অবয়বে চোরাচালানরি চাপ স্পষ্ট । তবুও বের হচ্ছে না। সাদেক ব্যর্থ হওয়ার না।

*আপনাকে খুব ক্লান্ত লাগছে। একটু খাবার আনবো?

*না স্যার । পেটে ক্ষুধা নেই।

* জুস খান ।

* স্যার জুস আমি খাই না।

* আপনার হাতের খাবারটি খান।

* স্যার খেতে ইচ্ছা  হচ্ছে না।

সাদেক তৃতীয় চোখ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। ভেতরে কিছু একটা লুকাচ্ছে শরীফ। ভেতরে অন্য । মুখ শুকনা। কথা বলার শক্তি নেই। খাবার খেতে অদম্য ইচ্ছা। নিজেকে সংযত রাখছে। খাবার দৃষ্টি। ভিন্ন দৃষ্টি। ইন্দ্রিয় উত্তেজিত। চাহনি প্রখর। শরীফ সত্যি বলছে না। আবার স্বর্ণ বেরও হচ্ছে না। বিধান এসে বললো, স্যার ছেড়ে দেই। অনেক হলো। চেষ্টার ত্রুটি করিনি। মেশিনে ধারা পড়েনি। শরীরে নেই। ব্যাগেও নেই। জিজ্ঞাসাবাদেও কাজ হচ্ছে না।

অনেকক্ষণ আটকে রেখেছি। কমপ্লেন করলে আমরা বিপদে পড়বো। বড় কর্তার দোহাই দিচ্ছে। সাদেক বললো, আমরা সৎ উদ্দেশ্যে করছি। সন্দেহ আছে বলেই চেক করছি। কিছু আলামতও পেয়েছি। এগুলোর গ্রহণযোগ্য জবাব পেতে হবে। অন্য কৌশল নিতে হবে। সন্দেহ দূর করতে হবে। চোরাচালানের বেলায় কোন ঝুঁকি ঠিক হবে না। বিধান বুঝলো, আরো কিছু বাকি আছে।

সিএজি প্রস্তুত। অফিসের গাড়ি আছে। ড্রাইভার নেই। রাত ১১টায় অসুস্থ হয়ে বাসায় চলে গেছে ড্রাইভার। সবাইকে নামিয়ে অনুমতি নিয়ে গেছে। কখনো এমন হয় না। সকাল ৯ টায় আসবে। এখন জরুরি প্রয়োজন। প্রয়োজনের সময় ছুটি নিতে হবে কেন? সদর দফতর থেকে গাড়ি আসতে দেড় ঘন্টার প্রয়োজন হবে। এতোক্ষণ অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। সাদেক সিএনজি প্রস্তুত করতে বললো। উত্তরা উইমেনন্স মেডিকেল কলেজ কাছে। রোড ৯, সেক্টর ১। কিছুটা ঝুঁকি আছে। তবে এটি করতে হবে।

টিমের সদস্যরা প্রস্তুত। মাঝখানে শরীফ। সাথে তিনজন গোয়েন্দা। উত্তরা উইমেন্স মেডিকেলের ইমার্জেন্সি। ডাক্তার পরীক্ষা করছে। পেটে হাত। জোরে চাপ দিলেন। শরীফ অস্বস্তি প্রকাশ করলো। ডাক্তারের পরামর্শে শরীফকে ভর্তি করানো হলো। ডাক্তার সাদিক খান হিস্টরি নিলেন। এডভাইস লিখলেন ‘রিক্টম এক্সরে’। ইমাম হাত ধরে অপেক্ষা করছে। শরীফেকে কানে কানে বলছে, এখনো রাজি হওয়ার সময় আছে। শরীফ বলছে, তোমরা আমাকে হয়রানি করছো। আমি তোমাদের দেখে নিবো।

*স্যার আমাকে ছাইড়া দেন। আমি বের করে দিচ্ছি।

*কত পিস আছে

*কোথায়?

*সেক্টরে। কথা দেন আমাকে ছেড়ে দিবেন।

*সত্যি বলেছেন?

ডাক্তার রিপোর্টে দেখছেন। এক্সরে হয়ে গেছে। কাপড় খোলার আগে শরীফ চার পিস বারের কথা প্রথম স্বীকার করলো। তবুও এক্সরে শেষ হলো। দশ মিনিটে ফিল্ম  চলে এলো। ডাক্তার হতবাক। নিতম্বের নিচে তিনটে মেটালের পোটলা। বিধান আনন্দে চিৎকার দিলো। ইমাম খুশি। সাথে সাথে জানানো হলো সাদেককে। সদরকেও অবহিত করলো। সন্দেহ চিৎকার দিলো। ইমাম খুশি। সাথে সাথে জানানো হলো সাদেককে। সদরকেও অবহিত করলো। সন্দেহ সত্যি হতে যাচ্ছে। এক্সরেতে কয়টি বার স্পষ্ট হলো না। তিনটাতে মেটালের অস্তিত্ব হলে পোটলা তিনটে হবে কেন? তিনটে বার হতে পারে। ভেতরের পোটলাগুলো সমান না। বার চারটা হলে পোটলা তিনটে হবে কেন? তিনটে বার হতে পারে। ভেতরের পোটলাগুলো সমান দেখাচ্ছে। এখানেও ঝামেলা আছে। শরীফকে শক্ত করে ধরা হলো। ছুটে যাওয়ার ভয় আছে। এয়ারপোর্টের বাইরে। সাঙ্গপাঙ্গ বাইরে হয়তো ঘোরাঘুরি করছে। ছিনিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা। ভয় হলো বিধানের। ইমাম বারবার মোবাইলে জানাচ্ছে সাদেককে। স্যার গাড়ি পাঠান। সিএনজিতে ফেরা ঠিক হবে না। এক্সরে করার পর ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বলতে বলতে গাড়ি হাজির। সদর দফতর থেকে গাড়ি মুভ করতে আগেই বলা হয়েছিলো। গাড়ি পৌঁছে গেছে। সাথে ফোর্স। শরীফ এখনও অনমনীয়। পেট থেকে নিজে বের করতে রাজি নন।

ডাক্তার বললেন, তলপেট কেটে বরে করতে করতে হবে। এতে ঝুঁকি আছে। রেক্টম মানুষের স্পর্শকাতর জায়গা। নিতান্ত আবশ্যক না হলে পেট কাটা ঠিক হবে না। শরীফকে বলছেন ডাক্তার। নিজে বের না করলে পেট কাটতে হবে।

রাজি না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। সাদা জামা-কাপড় দেয়া হলো। একজন শৈল্য বিশেষজ্ঞ আনা হলো। পালস দেখছেন। চোখ, জিহবা, গলা। পেট চাপ দিলেন। শরীফ শোয়া থেকে উঠে বসলো।

*স্যার, আমার পেট কাটার দরকার নেই। আমি নিজেই বের করে দিবো।

*কীভাবে?

*ঢোকাতে পারছি, আর বাইর করতে পারবো না?

*এর আগে করেছো?

*জ্বি,স্যার।

ডাক্তার আশ্বস্ত হলেন। বিধানকে বললেন, পেসেন্ট নিজেই বের করতে রাজি। পেট কেটে ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। নিয়ে যান। বের না করলে সকালে আবার নিয়ে আসবেন। অপারেশন করে বের করে দিবো। বিধান আবার কথা বললেন। শরীফ এখন নমনীয়। কিছুটা ভয় পেয়েছে। এতোক্ষণ অস্বীকার করে আসছে। এখন এক্সরে-তে বের  হলো। এখন কী বলবে? বের করে না দিলে পেট কাটতে হবে। উভয় সঙ্কট । জড়তা আরো পেয়ে বসলো। কিছু বলার নেই। হুমকি দেওয়ার ভাব নেই। নরম। শিশুর মতো। ইমামের সাথে কথা বলছে।

নিচু স্বর। অনুরোধ করছে, স্যার পেট কাটার দরকার নেই। আমি বের করে দিচ্ছি। গাড়িতে উঠানো হলো। সিএনজি বিদায়। ফোর্স সাথে। স্বর্ণ থাকা এখন নিশ্চিত। এক্সরে ফিল্ম ইমামের হাতে। আরেক হাতে শরীফা। পাশে বিধান। ৪ মিনিটে এয়ারপোর্ট। রাস্তা ফাঁকা। ভোর ৪টা ৫০মিনিট। এখনো ভোরের আলো দেখা যায়নি। এতো কিছু হচ্ছে পাড়াপড়শি জানছেন না। নিরব ঢাকা। শুধু কয়েকজনের নির্ঘুম  রাত। ব্যতিব্যস্ত। সরকারি দায়িত্ব পালন।

টানটান চাপ। নাটকীয়তা। ভোরের কাক ডাকার শব্দ মাঝে মধ্যে শোনা যায়। ভোর হবে। টেলিফোনে আপডেট জানছি। চোখে ঘুম। উপায় নেই। সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। নির্দেশনা দিতে হবে। এই অবস্থায় ঘুমুতে যাওয়া ঠিক না। টেলিফোনে আরো নির্দেশনা দিলাম সাদকে। সাদ প্রস্তুত। আয়োজন চলছে। গাড়ি পৌঁছে গেছে। শরীফ আরো ক্লান্ত।

*তুমি নিজে বের করবে তো?

*জ্বি স্যার। তাড়াতাড়ি করেন স্যার।

*এই তিনটা পানির বোতল নেন। এখনই খান।

*স্যার সলিড ফুড দিতে পারেন?

*এই নিন দুটো চমচম খান।

*স্যার লুঙ্গি হবে?

* এই নিন।

*ঝুড়ি?

*ঐখানে আছে।

শরীফ একেক করে তিন বোতল পানি খেলো। চমচম, বিস্কুট, আরাম করে খেলো। খাওয়ার ধরণ দেখে বুঝতে বাকি নেই সাদেকের। এই ক্ষিদের টিপসই তার গোয়েন্দার চোখ তীর্যক করেছে। সন্দেহ ঘনীভূত করেছে। সাদেক আরো খাবার অর্ডার করেছে। উপরের ক্যান্টিন থেকে আরো আসছে। সব খেলো। আরো পানি দেওয়া হলো। দুই লিটার পানি শেষ। কেন এতো পানি খাচ্ছো? স্যার, পানি খেলে প্রেসার আসে। উপর থেকে প্রেসার দিলে বেগ হবে। অপেক্ষা করছি স্যার। আমকে একটু হাঁটান । আমি মুভ করতে চাই। ইমাম হাত ধরে কাস্টমস হলে হাঁটালো। সাথে বিধানও। ইমাম জিজ্ঞেস করছে, কয় ভাইবোন? একাজ কেন করছো? কবে থেকে এই কাজে? শরীফ জবাব দিচ্ছে। এবার সত্যি জবাব পাচ্ছে। পানি খেয়েছে ৪০ মিনিট হলো।

বেগ এখনো আসেনি। হলে বলতো। কিছু দূর হাঁটছে। আবার বিশ্রাম নিচ্ছে। আবার হাঁটছে। লুঙ্গি পরিহিত। পায়ে জুতা। স্লিপার পরতে রাজি হয়নি শরীফ। জিন্স প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পরেছে। একজোড়া লুঙ্গি কিনে রাখা আছে গোয়েন্দা রুমে। যাত্রীদের দেহ তল্লাশির কাজে লাগে। গুরুত্বপূর্ণ পরিধেয়। এটিও গোয়েন্দা ডিভাইস। অনেক কাজে ব্যবহার হয়েছে। স্বর্ণ উদ্ধারের পেছনে এই লুঙ্গির ব্যবহার হয়েছে। আজও হবে। লুঙ্গির দাম ৩২০ টাকা। এর দ্বারা কোটি টাকার স্বর্ণ বের হবে।

দুই সপ্তাহ আগে দুটো কিনে ৬৪০ টাকার ভাউচার দাখিল করেছে সাদেক। হাসলাম। এটি কেন কেনা হয়েছে? এর সরকারী ব্যবহার কী? অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পর ফাইনাল অনুমোদনের জন্য ডিজি-র টেবিল এসেছে। এতোদিন সময় লাগলো যুক্তি দিয়ে বোঝতে। লুঙ্গি সরাকারি কাজে ব্যবহার হবে। ক্যাশিয়ারকে বলে দিলাম চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বিল পরিশোধ করতে। তাই হলো । আজ সেই লুঙ্গির ব্যবহার শুনে ভালো লাগলো। টেবিলে ফাইল হাতে এনে সাদেক রসিকতা করে বললো, স্যার অনুমোদন দেন। আমি কথা দিলাম। এই লুঙ্গি দিয়ে আমরা এয়ারপোর্ট ‘ড্যান্স’ করবো না। এটি আরো ভালো কাজে আসবে। হেসেছিলাম। সাদেকের রসবোধ প্রকট। শরীফ বসে পড়লো। হাঁটতে পারছে না।

বাথরুম। চেঞ্জ রুম। এখানে কমোড নেই। প্যান নেই। এটি নিরাপদ। পূর্ব প্রস্তুতিস্বরূপ চেঞ্চরুমে আনা হলো। দেওয়া হলো ঝুড়ি। ময়লা রাখার ঝুড়ি । তবে নতুন। এই কাজে ব্যবহারের জন্যই। ভেতরে সাদেক, বিধান ও ইমাম। ছবি তুলছে। বসে পড়ার সময় বলছিলো চাপ আসছে। এখন চেষ্টা করলে বের হবে। স্যার দোয়া করেন, শরীফ বলছে। কিসের দোয়া, ইমাম জানতে চাইলো। শরীফ নিশ্চুপ । মুখ বাঁকা। জোরে শব্দ করছে। ভেতরে থাকাটা মানসিক যন্ত্রণার স্বাক্ষী হওয়া। নিজেও অসুস্থ্যবোধ করলো। আর থাকা যায় না। সাদেক নাকে রুমাল নিলো। রুমাল ভেদ করে দুর্গন্ধ প্রবেশ করছে নিশ্বাসে। টের পাচ্ছে দুর্গন্ধ অক্সিজেনের সাথে গিয়ে রক্তে যাচ্ছে। উপায় নেই। বের হলে বিধান ও ইমামও রুম থেকে চলে আসবে। কষ্ট বিফলে যাবে। যতই কষ্ট হোক শেষ দেখতে হবে। শব্দ হলো। ঝুড়িতে ভারি একটা পড়েছে। একেক করে তিনটে। শরীফ জোরে নিশ্বাস ফেলছে। কান্নার শব্দও। মুখ বুঁজে সহ্য করছে। দশ মিনিট হলো শরীফ উঠেছে না। ঝুকিড়তে বসে আছে। বিশ্রাম নিচ্ছে। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা।

*স্যার, তিনটে পোটলা পড়ছে।

*এক্সরে-তে কয়টা দেখাচ্ছিলো?

*সবগুলো পড়েছে।

*ক্লিন করে নিয়ে আসো

সাদেক রুমে এসে ইমামকে ওয়াকিটকিতে নির্দেশ দিলো। ঝুড়িতে পোটলা পড়ার পরপর সাদেক রুমে ফিরে আসলো। আসার আগে হাত, মুখ ধুয়ে নিলো। ফ্রেস হওয়ার চেষ্টা। বমি ভাবটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। এখন ঠিক। ইমাম জানালো, স্যার ঝুড়িতে অনেক ব্লাড পড়ে আছে। একটু দেরি হবে। শরীফ নিজেই ক্লিন করছে।

স্যার, এই নিন আপনাদের সোনা। হাতে তিনটি পোটলা। শরীফ দুহাতে নিয়ে এসেছে। ক্লিন ঠিকমতো হয়নি। দুর্ঘন্ধ এখনো আছে। রুমে চা খাচ্ছিলো সাদেক। সাথে বিস্কিট। অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয়নি। নাস্তাটা টেবিলের উপর। অর্ধেক শেষ। বাকিটা খাবে। শরীফ প্রবেশ করেছে। হাতে ঝুড়িতে পড়া মেটাল। সাথে ইমাম। খাবারটা আর শেষ করা হলো না। এবার বমি করতে হবে।

ধমক দিলো ইমামকে। আর সময় পেলো না। এখনই কেন আনতে হবে? ইমাম সরি বললো। স্যার বুঝতে পারিনি। ভালোভাবে ক্লিন করার জন্য আবারো সাদেক বাথরুমে যেতে বললো। কমোটে যেন না যায়, সতর্ক করলো। কমোডে গিয়ে ফ্লাশ করে দিতে পারে শরীফ। সতর্ক হওয়া ভালো। কমোডে ফ্লাশ হলে মামলার আলামত নষ্ট হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হবে। এতোক্ষণের চেষ্টা বৃথা হবে। অন্য ঝামেলা তৈরি হবে। সতর্কতার বিকল্প নেই। সকল আয়োজন রাখতে হবে। সাদেক গোয়েন্দার দৃষ্টিতে দেখছে।

তিনটি পোটলা টেবিলে। এখন গন্ধ নেই। প্যাকেট কাটা হচ্ছে। প্রথম কন্ডমের আবরণ। তিনটি কন্ডম। ভেতরে সাদা স্কচটেপ। প্রতিটি প্যাকেটে চারটি করে করে বার। মোট বারোটি। ওজন নেওয়া হলো। ১২০০ গ্রাম। ১ কেজি ২০০০ গ্রাম। দাম? বিধান বললো, ৬০ লাখ টাকার স্বর্ণ। পেটের ভেতরে ৬০ লাখ টাকা? ইমাম বারগুরো ওজন করলো। স্বর্ণকার দ্বারা পরীক্ষা হলো। ২৪ ক্যারেটের গোল্ড। খাঁটি গোল্ড। ৯৯৯ ব্রান্ডের। দুবাই-এর তৈরি। মলয়েশিয়া হয়ে এসেছে। সরাসরি আনলে কড়াকড়ি বেশি। ঘুরে এসেছে। আনাটাও অভিনব পদ্ধতিতে। ধরাটাও অভিনব। শরীফ শত চেষ্টা করেছে ফাঁকি দিতে। সাদেকের টিমও নাছোড়বান্দা। দায়িত্ব পালনে অনড়। শেষে সার্থক।

রুমে নিয়ে একান্তে কথা চেয়ারে সাদেক। সামনে শরীফ। সবাইকে বের করে দেওয়া হলো। বাইরে মামলার কাগজগুপত্র প্রাস্তুত করছে। এফআইর। চোরাচালানের মামলা। শক্ত মামলা। কাস্টমস আইনের পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারা সংযু্ক্ত হবে। চোরাচালানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, দশ লাখ টাকার বেশি স্বর্ণ আনা হলে এবং সেটি যদি লুকায়িত অবস্থায় আনা হয় তাহলে ‘চোরাচালন’ হবে। শরীফের ক্ষেত্রে উভয় উপাদান বিদ্যমান। গোল্ডবারের ঘোষণাও দেওয়া হয়নি। সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছর। জরিমানাতো আছে। সাথে গোল্ড রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত হবে। চোরাচালানের বিনিয়োগ ধরা খেলো। জমা-চালান গেলো। লাভতো দূরের কথা, আসল নিয়ে টানাটানি। শরীফ বলছে। আরো দুবার এভাবে গোল্ড এনেছে। চার লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এবার চার লাখ গেলো। সাথের পুঁজিও। আগে বাহক ছিলো। এবার নিজেই পুঁজি খাটিয়েছে। জমি বেঁচে এই পুঁজি সংগ্রহ করেছে। সাদেক জানতে চাইলো কীভাবে বহন করেছে এই স্বর্ণ । আরো কয়েকবার করাতে এইবারে স্বভাবিক ছিলো। প্রথমবার বেশি কষ্ট হয়েছিলো। ঐবার ৪ টি বহন করেছে। পরেরবার ৮ টি। এবার ১২ টি।

সাদেক শুনছে। কীভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে শরীফ। কোথায়? কারা দিয়েছে? তাদের পরিচয় কী? কতটাকার বিনিময়ে একাজটি হয়। সাদেক জানতে চাইলো, বাহক বিট্রে করে না? বাহক মালিককে চিনে না। মালিক বাহককে চিনে নেয়। শার্টের রঙ, জুতার প্রকৃতি দেখে চিনে নেয়। কেউ মোবাইলে কল দিয়ে শনাক্ত করে বাহককে। শরীফ আজ হলুদ গেঞ্জি পরে আসছে। তবে নিজের জন্য।

স্বর্ণ প্যাকেট করার কৌশলটি বলেছে শরীফ। অনেক সময় সোনা পুশ করে প্লেনে উঠে। কেউ প্লেনের ভেতর করে। শরীফ একঘন্টা আগে টয়লেটে গিয়ে পুশ করেছে। একএকা করেছে। ৩৫ মিনিট লেগেছে। ব্যাথ্যা অনুভব করেছে। চিৎকার করেছে। মুখে রুমাল দিয়ে রেখেছিলো। কেউ যেন টের না পায়। নিচে ইনজেকশনও পুশ করেছিলো। ইনজেকশন দেওয়ার পর ব্যাথ্যা চলে গেছে। এটি কি পেইনকিলার? সাদেক বললো। জ্বি স্যার, জবাব দিলো শরীফ। এটি নিতে হয়। মেয়াদের মধ্যে বের না হলে ব্যাথ্যা শুরু হয়। রেক্টামে মেটাল বহন করলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়বেই। বাহকরা কখনো বিট্রে করে না। এরা সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য।

চোরাচালানীদের এরা চিনে না। দালালদের দ্বারা এরা চুক্তিবদ্ধ হয়। দীর্ঘদিন ধরে এদের নজরদারি করে দালাল। এদের স্থায়ী ঠিকানা, আত্মীয়স্বজন সবাইকে চিনে। কোন অঘটন ঘটলে জীবনের উপর ঝুঁকি আসে। বাহক বুঝে, কোন চালাকি করলে খবর আছে। দুনিয়া থেকে চলে যেতে হবে। কোন বিপদে পড়লে আবার দালাল ওদের ছাড়িয়ে নেন। বলছে শরীফ।

*ভেতরে ইনজুরি হয় না

*জ্বি স্যার।

* সাথে জেল ব্যবহার করি। কন্ডমের নিজস্ব জেল আছে। তারপরও অতিরিক্ত জেল দিতে হয়।

*ইনজুরি সারাও কীভাবে?

*তিনদিন পর ভালো হয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে থাকি। লিকুইড খাই।

টেবিলে সাদেক ছবিগুলো দেখছে। মোবাইলের ছবি। ইমামের মোবাইলে তোলা ছবি ভাইবারে পেয়েছে। বাথরুমে নেওয়া হচ্ছে শরীফকে । ঝুড়িতে বসা। ঝুড়িতে পড়া পোটলা। পোটলা। সাথে ব্লাড। শরীফ ক্লিন করছে। কাস্টমস হলে আনা হচ্ছ। শরীফের হাতে পোটলা। কাস্টমস হলের টেবিলে সবার সামনে কন্ডম সরাচ্চে। ভেতরের প্যাকেট কাটা হচ্ছে। একেক করে ১২ টি বার বের হলো। এসব ছবি দেখে তৃপ্তি পেলো।

স্বর্ণমানবের আবিস্কার। পেট কেন তৈরি হয়েছে? এটি জৈবিক অংশ। পেটের অন্য ব্যবহারও আছে। বাণিজ্যিক ব্যবহার স্বর্ণ পাচার করেও আয় করা সম্ভব। এর আগে শুল্ক গোয়েন্দা পাকস্থলীতে ৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। এটিও অভিনব পদ্ধতিতে। ৪০ টি পোটলা তৈরি করে মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে ঢোকানো হয় ঐ যাত্রীর। পরে ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে মেডিসিন খাইয়ে বরে করা হয় সব ইয়াবা। মায়ানমারে থেকে কক্সবাজার হয়ে ঢাকায় আসার পরই সে শুল্ক গোয়েন্দার হাতে আটক হয়। এবার রেক্টামে স্বর্ণ আটক নতুন ভাবনার সৃষ্টি করেছে। সোর্সগুলোকে ঠিকমতো মুভ করতে হবে। নতুন করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

*স্যার, পুলিশ এসেছে। আমরা প্রস্তুত।

*শরীফকে নিয়ে যাও।

শরীফ হাউমাউ করে কাঁদছে। স্যার, আপনি বলেছিলেন, আমাকে ছেড়ে দিবেন। আমাকে থানায় দিবেন না। ইমাম হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো। কনস্টেবল কোমড়ে দড়ি বাঁধলো। হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে গেলো।

পরের দিন পত্রিকার হেডলাইন। স্বর্ণমানব আটক। বিমানবন্দর স্বর্ণমানব আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা । অনলাইন নিউজে নানা মন্তব্য। মুখরোচক মন্তব্য পড়লাম। কেউ রসিকতা করেছেন। এমন স্বর্ণমানব দেশের সম্পদ। এদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। এরা দেশের জন্য স্বর্ণ নিয়ে আসবে। দেশ আরো ধনী হবে। সোনার মানুষ হিসেবে খ্যাতি ছাড়াবে। সোনার ডিম দিয়ে ধন্য করবে।

লেখক: মহাপরিচালক, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

এমএইচ/টিকে